মসুল পুনর্দখলে চলেছে ইরাকি সেনা। ছবি: এএফপি
সরকারের শাসন উৎখাত করে বছর খানেক আগেই শহরে উড়েছিল জঙ্গিদের পতাকা। বাগদাদের ৪০০ কিলোমিটার দূরের টাইগ্রিস নদীর তীরঘেঁষা ঐতিহাসিক মসুল শহর ও বাঁধ দখল করে তাকে পশ্চিম এশিয়ার ধর্ম-রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করেছিল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস)! তবে এ বার সেই খাসতালুক থেকেই জঙ্গিদের হটাতে মাঠে নেমেছে ইরাক সরকার। আকাশ ও স্থলপথে সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে ‘মসুল পুনর্দখলের’ লড়াই!
আজ সকালে সেনা অভিযানের আগে সরকারি টেলিভিশনে দেশবাসীর কাছে যুদ্ধের বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী হায়দর আবাদি। জানান, আইএস-বিরোধী মার্কিন জোট ও কুর্দ বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় ইরাকের জাতীয় সেনা স্থল ও আকাশপথে ল়ড়াই করবে। এই অভিযানে ‘জঙ্গিদের হার’ নিশ্চিত বলে আশা প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও।
সেনা সূত্রের খবর, অভিযানে সামিল ইরাকের ৩০ হাজার সেনা। যোগ দিয়েছে কুর্দ ও পেশমেরগা বাহিনীও। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, এই অভিযানে ৪ থেকে ৮ হাজার জঙ্গিকে খতম করে মসুলে ফের সরকারি নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই অভিযানের সাফল্য নিয়ে এক রকম নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রী আবাদিও। এ দিন সকালের বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘‘দায়েশের (আরবি ভাষায় ইসলামিক স্টেট) সন্ত্রাস ও নির্যাতন থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দিতে আজ থেকে সামরিক অভিযান শুরু হচ্ছে।’’ এ দিন তাঁর সেনা আধিকারিকদের পাশে নিয়েই টেলিভিশনের পর্দায় দেখা দেন আবাদি। দেশবাসীকে আগাম অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে মসুলের মাটিতে। উদ্যাপন করা হবে স্বাধীনতা।’’
পশ্চিম এশিয়ার সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, আবাদির বার্তার পর পরই ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু হয়েছে মসুলে। নেমেছে স্থলসেনাও।
মসুল পুনর্দখল না হওয়া পর্যন্ত যে এই অভিযান থামবে না, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে পেন্টাগনও। ইরাকে মার্কিন জোটের কম্যান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্টিফেন টাউনসেন্ড আজ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহর দখলের লড়াই কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। প্রয়োজন পড়লে আরও দীর্ঘ হবে অভিযান।’’ মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশ কার্টারও বলছেন, এই লড়াইয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য দমন করা যাবে আইএস-কে।
জঙ্গিনিধনে মার্কিন জোট লাগাতার বোমাবর্ষণ চালিয়ে গেলেও সরকারি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ইরাকের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। ইদের আগে রমজানের বাজারে জঙ্গি হানার সময় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আমজনতা। স্বাভাবিক ভাবেই, এ বার ইরাকে জঙ্গিদের সব চেয়ে শক্ত ঘাঁটি দখলে সরকারি তৎপরতায় খুশি সাধারণ মানুষ। এই লড়াইয়ে আইএস-কে কোণঠাসা করতে জান লড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিয়েছে কুর্দ বাহিনীও।
তবে একই সঙ্গে এই অভিযানে মানুষের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। জরুরিকালীন পরিত্রাণ ও সমাজসেবা সংক্রান্ত পর্যদের সহ-সচিব স্টিফেন ওব্রায়েনের কথায়, ‘‘মসুলে এখনও পনেরো লক্ষ মানুষের বাস। এই অভিযান চলাকালীন তাঁদের সুরক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন।’’ তাঁর আশঙ্কা, সরকারি হামলা থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে জঙ্গিরা। সেই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সুরক্ষা কী ভাবে নিশ্চিত করবে সরকার?
সদুত্তর মেলেনি। রাজায় রাজায় যুদ্ধে উলুখাগড়ার প্রাণহানির আশঙ্কা নিয়ে নয়, এই মুহূর্তে মসুল দখলকেই পাখির চোখ করছে সরকার। আজ দিনভর চলেছে লড়াই। সেনা সূত্র বলছে, অবিলম্বে জব্দ হবে জঙ্গিরা। সরকারি শাসন কায়েম এখন সময়ের অপেক্ষা। আর প্রাণহানির ঝুঁকি নিয়েও সন্ত্রাস থেকে মুক্তির অপেক্ষায় বুক বাঁধছে ইরাকবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy