Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
International News

মৃত বা জীবন্ত বন্দিদের এই গহ্বরে ফেলে দিত আইএস! কত হিসেব নেই

ধু ধু মরুভূমির প্রকাণ্ড গহ্বরে শোয়ানো হাজার হাজার মৃতদেহ। ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর নারকীয় হত্যালীলার সাক্ষী। মসুলের স্থানীয় বাসিন্দারা তা জানেন। কিন্তু সবাই জানলেও তা নিয়ে মুখ খোলার সাহস হত না কারও।

‘খসফা’র ধারে আধাসেনার এক জওয়ান। ছবি: সংগৃহীত।

‘খসফা’র ধারে আধাসেনার এক জওয়ান। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ১০:৫৮
Share: Save:

ধু ধু মরুভূমির প্রকাণ্ড গহ্বরে শোয়ানো হাজার হাজার মৃতদেহ। ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর নারকীয় হত্যালীলার সাক্ষী। মসুলের স্থানীয় বাসিন্দারা তা জানেন। কিন্তু সবাই জানলেও তা নিয়ে মুখ খোলার সাহস হত না কারও।

আইএস-বর্বরতার চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে ১০০ ফুট চওড়া সুবিশাল এই গহ্বর জুড়ে। কতটা গভীর তা জানা নেই। নীচে জলস্তর থাকলেও তা বুজে গিয়েছে অগণিত মৃতদেহ আর পুরনো ভাঙাচোরা গাড়ির ধ্বংসাবশেষে। উপরে মাটির পুরু আস্তরণ। স্থানীয়দের ভাষায় এই গহ্বরকে বলা হয় ‘খসফা’। আসলে তা মৃত্যুগহ্বর। কোতল-পর্ব শেষ করে মৃতদেহগুলি ওই গহ্বরে ফেলে দিত জঙ্গিরা। গত মাসে আইএসের কবল থেকে ইরাকি সেনা মসুলের দখল নেওয়ার পরে সম্প্রতি সেই গণকবরের খননকাজ শুরু হয়েছে। তার পর থেকেই প্রকাশ্যে আসছে আইএস জঙ্গিদের নৃশংসতার অন্য এক ছবি!

২০১৪-র জুলাইয়ে ইরাকি শহর মসুলের দখল নেয় আইএস। সেই সময় থেকে মসুল বিমানবন্দরের পাঁচ মাইল দক্ষিণ-পূর্বের এই অঞ্চলকে বধ্যভূমি বানিয়ে ফেলেছিল তারা। কাছেই একটি তৈল শোধনাগার। স্থানীয়েরা অনেকেই সেখানে তেল কিনতে আসতেন। হত্যালীলার দর্শক হিসাবে স্থানীয়দের সঙ্গে তাঁদেরও সেখানে দাঁড়াতে বাধ্য করত জঙ্গিরা। ‘দর্শক’-এর সামনে ‘খসফা’র ধারে সার দিয়ে দাঁড় করানো হত হাত-পা বাঁধা বন্দিদের। তাঁদের দেহগুলি বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিত জঙ্গিরা। এর পর ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হত ওই গভীর গর্তে। অনেককে আবার জ্যান্ত অবস্থাতেই ঠেলে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হত। অনেক মৃতদেহের গায়ে বিস্ফোরক বেঁধে ফেলে দেওয়া হত ওই গর্তে। কখনও আবার ট্রাকবোঝাই মৃতদেহের সারি উপু়ড় করে ঢেলে ফেলা হত!

‘খসফা’কে ঘিরে আইএসের নৃশংসতা দেখেছেন মসুলের মানুষ। তেমনই এক জন মুথান্না আহমেদ। ‘খসফা’র কাছেই পাঁচ মাস কাজ করেছেন তিনি। দিনের পর দিন জঙ্গিদের হাতে মানুষ খুন হতে দেখেছেন। তার বর্ণনা দিতে গিয়ে আজও কেঁপে ওঠেন তিনি। মুথান্না বলেন, “হাজার হাজার মানুষকে খেয়ে ফেলেছে ওই গর্ত। যেন গভীর কালো অন্ধকারের আতঙ্ক জড়িয়ে রয়েছে খসফায়।” মুথান্না জানিয়েছেন, ‘খসফা’র ধার দিয়ে এখনও ঝুলে রয়েছে মৃতদের অসংখ্য জুতো। আর রয়েছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। কয়েকটা দেহ তো এখনও ওই গর্তের কিনারায় লেগে ঝুলে রয়েছে। ইউটিউবেও ছড়িয়ে পড়েছে এই বীভৎস দৃশ্যের ভিডিও।

আরও পড়ুন: সৌদিকে দ্বীপ বিক্রি করতে চায় মলদ্বীপ, ভারতের কপালে ভাঁজ

১০০ ফুট চওড়া গর্তে এখনও পড়ে রয়েছে হাজার হাজার মানুষের মৃতদেহ। ছবি: সংগৃহীত।

ইরাকের মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, মসুল দখলের পর এ ভাবে শত শত বন্দিকে খুন করে ওই গর্তে ফেলে দিয়েছিল আইএস জঙ্গিরা। মূলত শিয়া, ইয়াজিদি এবং খ্রিস্টান ধর্মের মানুষদের খুন করা হয়েছিল। কারণ, আইএস-এর নজরে তাঁরা ছিলেন ‘ধর্মচ্যূত’। প্রাদেশিক কাউন্সিলের এক সদস্য হুসাম আল-আবরের দাবি, “খসফার গভীরে অন্তত পাঁচ হাজার দেহ রয়েছে।” তাঁর দাবি, দেশে নিখোঁজের সংখ্যার বেশির ভাগেরই দেহ রয়েছে ওখানে।

মসুলের দখল নেওয়ার পর ইরাক সরকার এ ধরনের গণকবরের খোঁজ শুরু করেছে। এবং খননকাজও শুরু হয়েছে সেখানে। সরকারি মতে, শুধু আইএস জঙ্গিদের সময়কার গণকবরই নয়, সাদ্দাম হুসেনের শাসনকালে মার্কিন আক্রমণের সময় দেশ জুড়ে নিখোঁজ হন প্রায় ১০ লক্ষ ইরাকি নাগরিক। মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের গণকবর খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছে ইরাকি সরকার। মৃতদেহের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও, সন্ধান মিলেছে একের পর এক এ ধরনের গণকবরের। তবে, খসফা-ই বোধহয় সবচেয়ে ব়়ড় গণকবর। সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, ইরাক ও সিরিয়ায় এখনও পর্যন্ত ৭২টি গণকবরের খোঁজ মিলেছে। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার দেহ।

প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র মসুলই নয়, ইয়েজিদি অধ্যুষিত তিকরিত ও সিঞ্জর শহরের আশপাশেও সন্ধান মিলেছে গণকবরের। সেখানেও শুরু হয়েছে খননকাজ। তিকরিত শহরেই ১৭০০টি মৃতদেহের সন্ধান মিলেছে। ইরাকের মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, ২০১৪ থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ‘খসফা’য় নজরদারি চালান তারা। পরের বছর জুলাইয়ে ওই গর্ত পুরোপুরি ভরে ওঠে। কমিশনের এক প্রবীণ সদস্য ইরাকি গবেষক বেলকিস উইলে বলেন, “খসফা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে খননকাজ শেষ করতে বহু সময় লাগবে। আর সে কাজ সারতে শুধুমাত্র সরকারি সাহায্য নয়, প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহায়তার।”

মসুলে এখন আতঙ্কের আর এক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘খসফা’। এলাকার এক বাসিন্দা জসিম ওমর বলেন, “কাউকে ভয় দেখাতে হলে শুধু খসফার নাম করলেই হল!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IS Mosul Sinkhole Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE