ইসলামাবাদে বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমি রহমানকে, পাকিস্তান প্রত্যাহার করতে বলায় দু’দেশের কূটনৈতিক সংকট তীব্র। কেন এই সিদ্ধান্ত? জানায়নি পাকিস্তান। যুক্তি বিনা ফরমানের অপমান বিঁধেছে বাংলাদেশকে। প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বুদ্ধিজীবিরাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। বিষয়টা সরকারকেও ভাবাচ্ছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশকে কিছুতেই মানতে চায় না পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হওয়াটা তাদের কাছে এখনও অসহ্য। ছলে, বলে, কৌশলে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। সব ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে। গণতন্ত্র ঢাকতে সন্ত্রাস রপ্তানি করছে, মৌলবাদকে উস্কানি দিচ্ছে। সামরিক শক্তিকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। এ কাজে বিঘ্ন ঘটলেই দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির রাস্তায় কাঁটা ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের এই আচরণ বরদাস্ত করতে রাজি নন। তিনি সব বাধা তুচ্ছ করে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের স্থায়ী প্রতিষ্ঠা দিতে বদ্ধপরিকর। মৌলবাদী, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তাঁর কঠোর পদক্ষেপে বিচলিত পাকিস্তান, হাসিনার ডানা ছাঁটতে ব্যস্ত।
২০১৩-য় জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতেই পাকিস্তান ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের জাতীয় পরিষদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। এটা কেন? কাদের তো পাকিস্তানী নয়, বাংলাদেশি। তার অপরাধ বিচার করে আইন মোতাবেক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার হক একমাত্র বাংলাদেশের। সেখানে পাকিস্তানের কিছু বলার বা করার থাকতে পারে না। তবু পাকিস্তান সেটা করবে।
এতে পরিষ্কার, বাংলাদেশে জামাতকে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান। জামাতের গায়ে আঁচ লাগলেই তারা রুষ্ট। ঠারেঠোরে বোঝাতে চাইছে, জামাতের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিলে সহ্য করবে না। বাংলাদেশ কিন্তু পাকিস্তানকে ছাড়েনি। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে সতর্ক করে। ২০১৪-য় ঢাকায় মৌলবাদী নেতা মতিউর রহমান নিজামির মৃত্যুদণ্ড মানতে চায়নি পাকিস্তান। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান প্রতিবাদ জানান। বাংলাদেশ চুপ করে থাকেনি। আবার ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে কড়কে দেয়। স্পষ্ট ভাবে জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পাকিস্তান যেন নাক না গলায়।
আরও খবর
বাংলাদেশ রেল মানচিত্রে জুড়ছে বরিশাল, আশ্বাস হাসিনার
২০১৫-য় নাশকতার সঙ্গে যুক্ত দুই মৌলবাদী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামাত নেতা আলি আহসাম মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি হতেই বাংলাদেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কুকর্মের নায়করা যে পার পাবে না, সেটা মানুষ বুঝতে পারে। দাবি ওঠে, এই দু’জনকে সমাধিস্থ করতে বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন ছাড়া না হয়। আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে পাকিস্তান। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধি ঘোষণা করেন, এই বিচার ভুল। আইন না মেনেই রায়। বাংলাদেশ সরব হয়। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৃজা আলমকে ডেকে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পাল্টা ব্যবস্থা নেয় পাকিস্তান। ইসলামাবাদ বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে জানিয়ে দেয়, এই প্রতিবাদ তারা গ্রাহ্য করছে না।
অভিযোগ ওঠে, পাকিস্তান বাংলাদেশে জঙ্গিদের টাকা যোগাচ্ছে। নৈরাজ্যের জন্ম দিতে চাইছে। ঢাকায় পাকিস্তানের দ্বিতীয় সচিব ফারিনা আরশাদকে ইসলামাবাদে ফিরিয়ে নিয়ে এই অভিযোগের জবাব দেয় পাকিস্তান ঢাকার বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাকিস্তান হাইকমিশনের কূটনীতিক মোহম্মদ মাজহার খানকে। মুচলেকা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে, ইসলামাবাদে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান পাশাপাশি দেশ নয়। দু’দেশের দূরত্ব দেড় হাজার কিলোমিটার। সীমান্ত বিরোধের আশঙ্কা নেই। যে যার মতো চলতেই পারে। পাকিস্তান সেটা হতে দেবে না। তারা চায় না, বাংলাদেশ স্বস্তিতে থাক। এতে যে সার্ক ধাক্কা খাচ্ছে সে দিকেও খেয়াল নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy