Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভালদের সঙ্গে ভালই হয়, বলতেন শ্রীনিবাস কুচিভোটলার

কাগজে-টিভিতে হরদম খুনখারাপির খবর দেখে সুনয়না বুঝতে পারতেন না, আমেরিকায় তাঁরা আদৌ নিরাপদ কি না। তবু মনে করেন না, এ রকম একটা মৃত্যু ‘ওর’ প্রাপ্য ছিল। কারণ, ওই মানুষটাই তো তাঁকে বোঝাত, ‘‘ভালদের সঙ্গে ভালই হয়।’’

সাংবাদিকদের মুখোমুখি শ্রীনিবাস কুচিভোটলার স্ত্রী সুনয়না। কানসাসে। ছবি: এপি।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি শ্রীনিবাস কুচিভোটলার স্ত্রী সুনয়না। কানসাসে। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
কানসাস শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৬
Share: Save:

কাগজে-টিভিতে হরদম খুনখারাপির খবর দেখে সুনয়না বুঝতে পারতেন না, আমেরিকায় তাঁরা আদৌ নিরাপদ কি না। তবু মনে করেন না, এ রকম একটা মৃত্যু ‘ওর’ প্রাপ্য ছিল। কারণ, ওই মানুষটাই তো তাঁকে বোঝাত, ‘‘ভালদের সঙ্গে ভালই হয়।’’

সুনয়না ভেবে পাচ্ছেন না, কী বলবেন আজ। সুনয়না দুমলা— গত বুধবার আমেরিকার কানসাসের ওলেথ-এ খুন হওয়া শ্রীনিবাস কুচিভোটলার সদ্যবিধবা স্ত্রী।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আজ জবাব চান সুনয়না। ২০০৫-এ স্নাতকোত্তর পড়তে আসা তাঁর মানুষটা তো আমেরিকাতেই রয়ে গিয়েছিল। ভালবাসত দেশটাকে। একটা বাড়ি করেছিল। নিজের হাতে রং করেছিল। সেই দেশেই কেন বেঘোরে মরতে

হবে তাকে?

বহুজাতিক সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাস গত বুধবার এক বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন একটা বার-এ। মার্কিন নৌসেনার প্রাক্তন কর্মী অ্যাডাম পিউরিটন সেখানেই তাঁকে গুলি করে মারে। জখম হন শ্রীনিবাসের বন্ধু অলোক, তাঁদের বাঁচাতে যাওয়া এক মার্কিন যুবকও। সুনয়না বলছেন, এর পরে নাকি অন্য একটা বারে গিয়ে অ্যাডাম বুক ফুলিয়ে বলেছিল, ‘‘দু’টো মুসলিমকে মেরে এলাম!’’

কানসাসে নিহত শ্রীনিবাস কুচিভোটলার স্মরণে মোমবাতি মিছিল অ্যালেন পার্কে। আমেরিকায় সাংবাদিক বৈঠকে শ্রীনিবাসের স্ত্রী বলেছেন, এমন ঘটনা রুখতে মার্কিন সরকার কী করছে তিনি জানতে চান। শনিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে অভিবাসীরা। সাত মুসলিম দেশের জন্য আমেরিকার দরজা বন্ধ করতে গিয়ে আদালতে ট্রাম্প ধাক্কা খেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের উগ্র ‘আমেরিকা-আমিত্বের’ সঙ্গে তাঁর জমানায় বর্ণবিদ্বেষ-জনিত প্রথম খুনটাকে মিলিয়ে দু’য়ে দু’য়ে চার করছেন অনেকেই। নিন্দায় সরব রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ থেকে মাইক্রোসফটের ভারতীয় বংশোদ্ভূত কর্তা সত্য নাদেল্লা। ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, তিনি স্তম্ভিত। সুনয়নাকে যাবতীয় সাহায্যের পাশাপাশি পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখছেন হিউস্টনের ভারতীয় কনসাল-জেনারেল অনুপম রায়।

কিন্তু সুনয়নার হিসেব মিলছে না। আমেরিকার নানা প্রান্তে বন্দুকবাজের হানার খবরগুলো শুনে স্বামীকে বলতেন, ‘‘এখানে থেকে আমরা ঠিক করছি তো! চলো, অন্য দেশে চলে যাই।’’ শ্রীনিবাস স্ত্রীকে বলতেন, ‘‘না। আরও একটু দেখি।’’

আরও পড়ুন: অস্ত্র, আরও অস্ত্র, আরও আরও অস্ত্র চান ট্রাম্প!

আজ সুনয়না প্রেসিডেন্টের নাম করেননি। কিন্তু বলেছেন, ‘‘আমি সরকারের কাছে জবাব চাই। এমন বিদ্বেষ থেকে যে সব অপরাধ ঘটে, তা রুখতে ওঁরা কী করছেন? শুধু আমার স্বামীর জন্য নয়। এশীয়, আফ্রিকান, আমেরিকান— এ ভাবে স্বজন হারানো সমস্ত জাতির মানুষের হয়ে জবাব চাই আমি।’’ সুনয়না জানিয়ে দেন, স্বামীর স্বপ্ন পূরণ করতে আমেরিকাতেই ফিরবেন তিনি। এবং তিনি যাতে ফিরতে পারেন, ইচ্ছেমতো কাজ বেছে নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।

সাংবাদিক বৈঠক শেষই হয়ে গিয়েছিল। একটা প্রশ্ন শুনে থমকালেন সুনয়না। তার পর বললেন, ‘‘একটা বাচ্চার কথা ভাবছিলাম। সন্তান থাকলে হয়তো ওর মধ্যে শ্রীনিবাসকে দেখতে পেতাম। আজ আর সেই সুযোগ নেই। আমার সম্বল শুধু স্মৃতি। ব্যস্, এইটুকই...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kuchibhotla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE