Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Las Vegas

‘আতঙ্ক আর ভয়ের প্রহর গুনছি লাস ভেগাসে ঘুরতে এসে’

ঘটনাচক্রে সেই শহরেই আমরা ২৯ জন বাঙালি রয়েছি। ঘুরতে এসে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা। লাস ভেগাস। ছবি— এএফপি।

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা। লাস ভেগাস। ছবি— এএফপি।

চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ট্যুর ম্যানেজার
লাস ভেগাস শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ১৫:১৭
Share: Save:

ভয়ে ভয়েই গোটা রাতটা কেটেছে। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আতঙ্কটা এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ঘুরে এলাম সকলে মিলে। কিন্তু, ভাল লাগার অনুভূতিটা কেমন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বারে বারেই মনে হচ্ছে, এ কোন লাস ভেগাসকে দেখছি!

গোটা শহরটা শুনশান। শান্ত। রাস্তা, ফাঁকা। নিরাপত্তা রক্ষী, তাঁদের গাড়ি আর অ্যাম্বুল্যান্স— এ বাদে রাস্তায় তেমন ভাবে কোনও গাড়িঘোড়াও চলছে না। বোঝা যাচ্ছে, কোথাও কিছু একটা হয়েছে। প্রাণচঞ্চল শহরটার মন একেবারেই ভেঙে পড়েছে। আর ঘটনাচক্রে সেই শহরেই আমরা ২৯ জন বাঙালি রয়েছি। ঘুরতে এসে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।

‘মান্ডালয় বে’ নামে যে পাঁচ তারা হোটেলের পাশে সে দিন কনসার্ট চলছিল, সেখান থেকে আমাদের হোটেল ‘সার্কাস সার্কাস’ হাঁটা পথে মেরেকেটে মিনিট কুড়ি লাগে। কলকাতা থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর বেরিয়ে আমরা সান ফ্রান্সিসকো ঘুরে লাস ভেগাস পৌঁছেছিলাম ১ অক্টোবর সন্ধ্যায়। আমি এই বেড়ানোর দলের ‘ট্যুর ম্যানেজার’। বাকি ২৮ জন বাঙালি পর্যটক। সে দিন রাতে যখন ওই কনসার্ট চলছে, তখন আমরা হোটেলে। রাতের খাবার খেয়ে আমি হোটেলের লনে হাঁটতে গিয়েই বুঝতে পারি, কিছু একটা হয়েছে। তখন রাত সওয়া ১১টা হবে। চার দিকে নিরাপত্তারক্ষীদের তটস্থ চাহনি। লনে আমাকে দেখেই, এক জন ছুটে এলেন। বললেন, ‘‘এখানে ঘোরাঘুরি করবেন না। ঘরে চলে যান।’’ পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘কেন?’’ সটান জবাব এল, ‘‘এক্ষুনি পাশের একটা কনসার্টে বন্দুকবাজরা হামলা চালিয়েছে। দেরি করবেন না, উঠে যান।’’ ঘরে ফেরা ছাড়া আর উপায় ছিল না।

আরও পড়ুন: শব্দ শুনে ভাবলাম বুঝি বাজি ফাটছে!

পরে জানতে পারি, ওই হামলায় ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে ধরাও পড়ে ৬৪ বছরের সেই বন্দুকবাজ। আমাদের এই ঘোরার দলের গড় বয়স ৬০। আতঙ্কের মধ্যেই বন্দুকবাজের বয়স শুনে সকলের চোখ কপালে! এই দলে সবচেয়ে কমবয়সী আমি। লাস ভেগাসে বুলেভার্ডের উপরে আমাদের এই হোটেলে অন্য পর্যটকদের অবস্থাও একই রকম। কেউই ভয়ে বেরতে চাইছেন না। সকলেই ভাবছেন, কবে এই শবর ছেড়ে বেরবেন!

আরও পড়ুন: ৯০ শতাংশ ভোট স্বাধীনতার পক্ষে, ঘোর অস্বস্তিতে স্পেন

আমাদের টিমের বেশ কয়েক জন আমাকে অনুরোধ করেছেন, ‘‘চলুন না বেরিয়ে পড়ি। এখানে থাকাটা সেফ নয়।’’ এতগুলো টাকা খরচ করে এসেছেন, বেরিয়ে যাবেন! তা ছাড়া বিমানের টিকিটও তো ৪ তারিখ সকালের। তার আগে বেরবো কী করে? এই আতঙ্কিত মনেই গোটা টিম আজ গিয়েছিল, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। ২৮ জনের মধ্যে ১৯ জনের ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন হেলিকপ্টার রাইড’-এ টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে সেই ‘রাইড’ বাতিল হয়ে গিয়েছে। সকলেই গাড়ি করে ঘুরে এলাম।

আরও পড়ুন: ঘাতক ৬৪ বছরের বৃদ্ধ, সঙ্গী বৃদ্ধাকে খুঁজছে পুলিশ

সন্ধ্যায় ফেরার মুখে দেখি, গোটা শহর প্রায় অন্ধকার। কোথাও কোনও আলো জ্বলছে না। রাস্তাঘাট শুনশান। শপিং মলগুলো ফাঁকা। এর আগে যত বার এসেছি এই শহরে, এমনটা দেখিনি। প্রায় মরুভূমির চেহারা নিয়েছে লাস ভেগাস। সব হোটেলেই নিরাপত্তা কড়াকড়ি। আমেরিকার ইতিহাসে এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটেনি। কোনও কোনও স্কোয়্যারে মোমবাতি মিছিল বেরিয়েছে। শান্ত শহরে আমরা ঘুরে তেমন কোনও মজাও পাচ্ছি না। কালকের দিনটা এলে বাঁচি। সোজা ওয়াশিংটন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE