ভিন্ দেশে: স্কটল্যান্ডের বাণিজ্য সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার এডিনবরায়। —নিজস্ব চিত্র।
বিজ্ঞাপনের পরিভাষায় বলতে গেলে ‘টিজার’। তিন শব্দের ছোট্ট ডাক, ‘আসুন, বিনিয়োগ করুন, উপভোগ করুন’। আজ স্কটল্যান্ডের বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার এটাই ছিল এক এবং একমাত্র সুর। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে আছেন, সেই শেরাটন হোটেলের কনফারেন্স হলে আজ দুপুরে আয়োজন করা হয় এই বাণিজ্য বৈঠকের। কম-বেশি ৫০ জন প্রতিনিধি ছিলেন সেখানে। মুখ্য আয়োজক স্কটল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল— এ দেশে যারা সরকারের সহযোগী সংস্থা।
বৈঠকের শুরুতে রাজ্য সরকারের পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় দেখানো হয়েছে, বাম জমানায় রাজ্যের অবনমন এবং মমতার রাজত্বে দ্রুত উঠে আসার আখ্যান। উপসংহারে বিদেশি বিনিয়োগকারীর উদ্দেশে বলা হয়েছে, দিন বদলেছে। এক নতুন বাংলার সঙ্গে পরিচিত হোন। এর পর ঘণ্টা দেড়েকের সম্মেলনের আগাগোড়াই সেই সুর একতারার মতো বেজে গেল। স্কটিশ ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনালের ইন্ডিয়া ডেস্কের প্রধান উজির সৈয়দ প্রারম্ভিক বক্তৃতায় বললেন, ‘‘যা দেখলাম তাতে এটাই বলব, আজকের পশ্চিমবঙ্গ এই মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পাওয়ার হাউজ। এখানে কাজের সুযোগ আছে। স্কটল্যান্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ একসঙ্গে অনেক কিছুই করতে পারে।’’
সুর-তাল বাঁধা হয়ে গেলে গান বেসুরো, বেতালা হয় না। হয়ওনি। সঞ্জীব গোয়েন্কা, কে কে বাঙ্গুর, ওয়াই কে মোদী, তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা থেকে শুরু করে নব প্রজন্মের রুদ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মায়াঙ্ক জালান— সকলেই একে একে মঞ্চে এসে বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে বলে গেলেন, পশ্চিমবঙ্গই এখন বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য। কমিউনিস্ট জমানার পরে এখানে ব্যবসাবন্ধু সরকার এসেছে। শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে, কোনও কাজে কোনও বাধা হয় না। বিনিয়োগকারী নিশ্চিন্তে, নিরুদ্বেগে, সময়ের মধ্যে যে কোনও কাজ করে যেতে পারে। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা সব সময়ে তাঁদের পাশে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালেই মশার চাষ
সকলের কথা বলার শেষে মুখ্যমন্ত্রী নিজে যখন মাইক ধরলেন, তখন স্বাভাবিক ভাবেই দীর্ঘ ভূমিকার আর দরকার ছিল না। সরাসরি পাখির চোখ লক্ষ্য করেই তির ছুড়লেন তিনি। বললেন, ‘‘লম্বা-চওড়া বক্তৃতায় আমি বিশ্বাসী নই। তেমন বড় কেউকেটাও আমি নই। রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি। সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার। নিতান্তই সাধারণ মানুষ। নিজের ঢাক নিজে পেটাতে পারি না।’’ এর পরেই বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘শুধু এটুকু বলতে পারি— আপনারা পশ্চিমবঙ্গে আসুন, দেখুন, বুঝুন আমরা কে কী করতে পারি। আপনারা কী পারেন। আমরা কী পারি। নিজেরা জেনেবুঝে নিন।’’
স্কটল্যান্ড ও ভারতের বিশেষত বাংলার শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘ পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে। তাঁর বক্তৃতায় সেই যোগাযোগের ঐতিহ্যের উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, বিদ্যুৎ, জীববিদ্যা, তথ্য প্রযুক্তি এবং ফল ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও স্কটল্যান্ড বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।’’ মমতার মতে, এই ক্ষেত্রগুলিতে পারস্পরিক যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য দু’দেশেরই চেষ্টা করা উচিত। আগামী ১৬-১৭ জানুয়ারি কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আসার জন্য স্কটল্যান্ডের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান তিনি। বলেন, ‘‘আপনাদের জন্য আমরা সাগ্রহে অপেক্ষা করব।’’
কন্যাশ্রী প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের সাফল্যের কথা বার বার উঠে এসেছে এ দিন স্কটল্যান্ডের বাণিজ্য-মঞ্চে। তুমুল হাততালিতে প্রশংসিত হয়েছেন মমতা। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ প্রকল্পের ব্যাপারে কথা হয়েছে। দু’তরফেই কথা অনেকটা এগিয়েছে। প্রেসিডেন্সির উপাচার্যেরও খুব শীঘ্রই স্কটল্যান্ডে আসার কথা। শুধু প্রেসিডেন্সি নয়, কলকাতা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়কে যৌথ ভাবে কাজ করার আবেদন জানালেন মমতা।
সম্মেলন শুরুর আগে এ দিন সকালে স্কটল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী অ্যালাসডির অ্যালান পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে জলবিজ্ঞান, পুনর্নবীকরণয়োগ্য শক্তি, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে পারস্পরিক বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সির যৌথ উদ্যোগে জীববিদ্যা, স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে দু’দেশের মধ্যে উন্নততর গবেষণামূলক কাজ করা নিয়েও কথা হয়েছে।
মমতার লন্ডন ও স্কটল্যান্ডের এডিনবরা শিল্প সফরের আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্তি হল এ দিনের সম্মেলন দিয়েই। আগামী কাল কলকাতা রওনা হবেন মমতা। শনিবার কলকাতায় পৌঁছবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy