Advertisement
০২ মে ২০২৪

কখন হামলা একক জঙ্গির, জানে না কেউ, আতঙ্কে গোয়েন্দারা

পৌঁছে যাও কোথাও। আঘাত হানো সর্বশক্তি দিয়ে। প্রয়োজনে একলাই। সন্ত্রাসের এই নতুন চেহারা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে গোটা পৃথিবীর গোয়েন্দারা। ইস্তানবুল, অরল্যান্ডো, ঢাকা। একের পর এক হামলায় ধরা পড়ছে ‘লোন উল্‌ফ’ তথা ‘একক জঙ্গির’ কার্যকলাপের চিত্র।

গুলিতে ঝাঁঝরা উইন্ডস্ক্রিন। প্রম্‌নদ দেজ অঙ্গলে-তে বৃহস্পতিবার রাতে ধেয়ে আসে এই ট্রাকটি। ছবি: রয়টার্স।

গুলিতে ঝাঁঝরা উইন্ডস্ক্রিন। প্রম্‌নদ দেজ অঙ্গলে-তে বৃহস্পতিবার রাতে ধেয়ে আসে এই ট্রাকটি। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:১২
Share: Save:

পৌঁছে যাও কোথাও। আঘাত হানো সর্বশক্তি দিয়ে। প্রয়োজনে একলাই।

সন্ত্রাসের এই নতুন চেহারা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে গোটা পৃথিবীর গোয়েন্দারা। ইস্তানবুল, অরল্যান্ডো, ঢাকা। একের পর এক হামলায় ধরা পড়ছে ‘লোন উল্‌ফ’ তথা ‘একক জঙ্গির’ কার্যকলাপের চিত্র। আজ ফ্রান্সের নিসেও এমনই এক জঙ্গি ট্রাক নিয়ে হানা দিয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ভারতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে ধরে নিয়েই তৈরি হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

কী এই ‘লোন উল্‌ফ’ মডেল?

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আগে একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা তাদের আদর্শের নামে হামলা চালাত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও ভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকত সেই সংগঠনের নেতৃত্বের। এমনকী আল কায়দাও এই ধরনের কাঠামো মেনে চলেছে। কিন্তু সেই চেনা ছক ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। এখন এক বা একাধিক জঙ্গি নিজেদের উদ্যোগেই হামলা চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে সংগঠনের কোনও সরাসরি যোগ নাও থাকতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের প্রচারে প্রভাবিত হচ্ছে অনেকে। হামলার পরে কৃতিত্ব নিচ্ছে আইএস। এই ধরনের ঘটনা রোখা অনেক কঠিন বলে মেনে নিচ্ছেন গোয়েন্দারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘কিছু হামলার ক্ষেত্রে আইএসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মদত থাকছে। আবার কোথাও কোথাও আততায়ীর সঙ্গে সংগঠনের যোগ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।’’ নজির হিসেবে ঢাকার গুলশন ও ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোয় হামলার কথা বলছেন কর্তাটি। তাঁর কথায়, ‘‘ঢাকায় অভিজাত পরিবারের উচ্চশিক্ষিত যুবকরা কোনও ভাবে মৌলবাদী ইসলামে অনুপ্রাণিত হয়ে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আবার অরল্যান্ডোতেও ওমর মতিন আইএসের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলা করেছে।’’

ভারতে এই ধাঁচের হামলা এখনও হয়নি। কিন্তু দেশে আইএসের প্রভাব বাড়ছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। গত সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধরা পড়েছে আইএস জঙ্গি মুসা। যার উপর দায়িত্ব ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানোর। হায়দরাবাদে ধরা পড়েছে আইএস মডিউল। চলতি সপ্তাহেই কেরল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক জন যুবক। নিখোঁজ কয়েক জনের সঙ্গে গিয়েছে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরাও। নিখোঁজরা পর্যটন ভিসায় ইরান গিয়েছিল। তার পর থেকেই তাদের খবর পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই যুবকরা সিরিয়ায় আইএস-এর ঘাঁটিতে পৌঁছে গিয়েছে। সেখান থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এখন এই ধরনের হামলার উপরে বেশি জোর দিচ্ছে আইএস নেতারাও। কারণ, সিরিয়া ও ইরাকে ক্রমশ জমি হারাচ্ছে তারা। ওই দুই দেশের খনিজ তেল ও প্রত্নসামগ্রী বেচে ভাঁড়ার ভরানোর সুযোগও কমে আসছে। ফলে বেতন অর্ধেক হয়ে গিয়েছে জেহাদিদের।

মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, সংখ্যা কমার দু’টি কারণ। প্রথমত, আমেরিকা, রাশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশের হামলায় বেশ কিছু জঙ্গি নিহত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ওই দুই দেশে পরিস্থিতি অনুকূল নেই দেখে নিজেদের দেশে ফিরছে জঙ্গিদের একটি অংশ। গত ২১ মে আইএস-এর মুখপাত্র আবু মহম্মদ আল আদনানি একটি বার্তায় জানায়, ‘‘আমাদের এখন গেরিলা আক্রমণের উপর জোর দিতে হবে।” আইএস মনোভাবাপন্ন যুবকদের প্রতি তার আহ্বান “যখন যেখানে শত্রু নিকেশের সুযোগ পাবে তখন সেখানেই হামলা চালাও।”

‘কখন’ এবং‌ ‘কোথায়’— এই প্রশ্নকে ঘিরেই এখন আতঙ্ক বাড়ছে নয়াদিল্লির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE