পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফ।
পরের দোষ খোঁজার আগে নিজের ঘরে গণ্ডগোলটা কোথায়, সেটাই আগে জেনে-বুঝে নেওয়া দরকার। না হলে তা হবে ‘কাচের ঘরে থেকে অন্যকে ঢিল ছোড়ার সামিল’!
বহু দিনের এই আপ্তবাক্যটাকেই আবার মনে পড়িয়ে দিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনরেল পারভেজ মুশারফ। বললেন, ‘‘আজ যে পাকিস্তান গোটা বিশ্বেই একঘরে হয়ে পড়েছে, তার জন্য দোষটা অন্য কারও নয়। তার নিজের। নওয়াজ শরিফ সরকারের ভুল নীতির।’’
দেশে ফেরার ইচ্ছেটা নিয়ে বিদেশে ‘নির্বাসন’ থেকে একের পর এক ‘বোমা’ ফাটিয়ে যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। এর আগে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুশারফ জানিয়েছিলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকেই গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি পাকিস্তানে। তারই জন্য সেনাবাহিনী আগাগোড়া পাক প্রশাসনের মাথায় চড়ে বসেছে। আর পাকিস্তানের নাগরিকরাও তাতে আস্থাশীল হয়ে উঠেছেন।’’
বিশ্বে কেন উত্তরোত্তর একঘরে হয়ে পড়ছে পাকিস্তান, এ ব্যাপারে মুশারফ যে যুক্তি দেখিয়েছেন, প্রায় সেই সুরই শোনা গিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের গলায়। তাঁরাও বলছেন, ‘‘নওয়াজ শরিফ সরকারের একের পর এক ভুল নীতির জন্যই আজ বিশ্বে উত্তরোত্তর একঘরে হয়ে পড়ছে পাকিস্তান। প্রথমত, আগ বাড়িয়ে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় উরির ভারতীয় সেনা-ছাউনিতে হানা দেওয়া উচিত হয়নি পাক সেনাবাহিনীর। এটাই বিশ্বে পাকিস্তানের ‘বন্ধু’র সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। কমাচ্ছে, উত্তরোত্তর। গত সপ্তাহে সার্ক সম্মেলন ভেস্তে যাওয়ার ঘটনাও তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। উপমহাদেশের অস্থির পরিস্থিতি, উত্তেজনার জন্য নভেম্বরে ইসলামাবাদে যে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে রাজি হয়নি ভারত। পরে ভারতের সুরে সুর মিলিয়েই বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ভূটান ও মলদ্বীপের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিও ওই সম্মেলনে যেতে রাজি হয়নি। দ্বিতীয়ত, উরি হামলার প্রেক্ষিতে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি-ঘাঁটি নির্মূল করতে ভারত যে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছে, তাতে নওয়াজ শরিফ সরকারের ওপর থেকে পাক নাগরিকদের ভরসাও অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে।’’
পাকিস্তানের প্রথম সারির দৈনিক ‘ডন’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুশারফ বলেছেন, ‘‘নওয়াজ শরিফ সরকার কোনও কাজই করছে না দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে। দিনের পর দিন বাড়ছে দুর্নীতির পরিমাণ, অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। শরিফ সরকার বিদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তার অনেকটা খরচও করে ফেলেছে। কিন্তু তার একাংশও পাক নাগরিকদের সার্বিক উন্নয়নে খরচ করা হয়নি। মানুষের স্বার্থে নেওয়া হয়নি একটিও মেগা-প্রকল্প।’’
প্রায় মুশারফেরই সুরে গতকাল পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে বিঁধেছেন সে দেশের বিরোধী রাজনীতিক ইমরান খান। তিনিও বলেছেন, ‘‘আজ পাকিস্তানের এই হাল হয়েছে শরিফ সরকারের লাগামছাড়া দুর্নীতির জন্য।’’
মুশারফ অবশ্য এই সময় ভারতকে সমালোচনা করার সুযোগটাও হাতছাড়া করতে চাননি। কিছুটা হুমকির সুরেই বলেছেন, ‘‘ভারত যেন আবার পাকিস্তানকে ভূটান না ভেবে বসে! নিজেদের মাটিতে কোনও ঘটনা ঘটলেই ভারতের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলা। ভারতের হুমকি শুনতে শুনতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যদি এক দিন সত্যি-সত্যিই কিছু করে বসে, তা হলে সেটাও কম ভয়াবহ হবে না!’’
মোদ্দা কথাটা হল, মুশারফের মনে হচ্ছে, ‘ভুল, বিলকুল ভুল পথে’ই চলছে নওয়াজ শরিফ সরকার। সেই ‘ভুল শুধরে’ শুধরে দিতে পাকিস্তানে ফিরতে চাইছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।
‘‘তবে এখনই তার উপযুক্ত সময় নয়’’, এমনটাই বলছেন অবসরপ্রাপ্ত পাক সেনাপ্রধান জেনারেল মুশারফ।
আরও পড়ুন- সময়ের আগেই ভারতের হাতে আসছে রাফাল: প্রতিরক্ষামন্ত্রী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy