Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিপর্যয়ের আগেই অজ্ঞান হন যাত্রীরা, দাবি নয়া তত্ত্বে

মৃত্যু এমনও ভয়াবহ হতে পারে! এখনও বিশ্বাস হয় না গ্রাবোভোর আতঙ্কিত বাসিন্দাদের। তবে সান্ত্বনা একটাই। এ দিন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এমএইচ ১৭-র যাত্রীদের হয়তো সে ভয়াবহতা অনুভব করতে হয়নি। তাঁদের মতে, ক্ষেপণাস্ত্রের অভিঘাতে প্রথমেই যাত্রীরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার পরে যা কিছু হয়েছিল, সবটাই তাঁদের অজান্তে। ভয় বা যন্ত্রণা, কিছুই অনুভব করতে হয়নি তাঁদের।

সংবাদ সংস্থা
কিয়েভ শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৪
Share: Save:

মৃত্যু এমনও ভয়াবহ হতে পারে! এখনও বিশ্বাস হয় না গ্রাবোভোর আতঙ্কিত বাসিন্দাদের। তবে সান্ত্বনা একটাই। এ দিন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এমএইচ ১৭-র যাত্রীদের হয়তো সে ভয়াবহতা অনুভব করতে হয়নি। তাঁদের মতে, ক্ষেপণাস্ত্রের অভিঘাতে প্রথমেই যাত্রীরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার পরে যা কিছু হয়েছিল, সবটাই তাঁদের অজান্তে। ভয় বা যন্ত্রণা, কিছুই অনুভব করতে হয়নি তাঁদের।

এ ব্যাখ্যা অনেককেই এমএইচ ৩৭০-র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সে সময়ও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, বিমানের অন্তিম মুহূর্তের সময় হয়তো যাত্রী বা কর্মীদের কারওই জ্ঞান ছিল না। তাঁদের ব্যাখ্যা ছিল, যে উচ্চতা দিয়ে বিমানটি যাচ্ছিল, সেখানে বিমানের ভিতর বাতাসের চাপ সামান্য বদলালেও যাত্রীদের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা। বর্তমান তত্ত্ব অনুযায়ী ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে ভেঙে পড়েছিল এমএইচ ৩৭০। বিশেষজ্ঞদের দাবি মানলে, তার বহু আগেই যাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।

প্রায় একই রকম ব্যাখ্যা উঠে এসেছে এমএইচ ১৭-র ক্ষেত্রেও। তবে এ ক্ষেত্রে নেপথ্যে রয়েছে বুক মিসাইল। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, বিমান থেকে ২০ মিটার দূরে যখন ক্ষেপণাস্ত্রটির বিস্ফোরণ হয় তখন সেখান থেকে বহু ‘শার্পনেল’(ধারাল ধাতব অংশ) বেরিয়ে ফুটো করে দিয়েছিল বিমানের ডানা, ইঞ্জিন। জ্বালানিতে আগুন ধরে গিয়েছিল তখনই। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ সব ‘ড্যামেজ’- এর জেরে বিমানের ভিতরে বায়ুর চাপের তারতম্য হওয়ার কথা। এবং তা যদি সত্যিই হয়ে থাকে তা হলে মুহূর্তের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা যাত্রীদের। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙে পড়েছিল বিমানটি। বৃষ্টির মতো নেমে এসেছিল খণ্ডিত দেহাংশ।

এবং গোটাটাই যে স্রেফ অনুমান নয়, তারও পরোক্ষ প্রমাণ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের কাছে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা তুলে আনছেন টিডবলিউএ ৮০০ বিস্ফোরণের কথা। ১৯৯৬ সালে মার্কিন ট্রান্স ওয়ার্ল্ড এয়ারলাইনের ওই বিমানটির মাঝ আকাশে বিস্ফোরণ হয় ও সেটি নিউ ইয়র্কের ‘লং আইল্যান্ডে’ ভেঙে পড়ে। পরে সমুদ্র থেকে যাত্রীদের দেহ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁদের কারও ফুসফুসেই জল পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, যখন বিমানটি ভেঙে পড়েছিল তখন কোনও যাত্রীই শ্বাস নিচ্ছিলেন না। তার কারণ বিস্ফোরণের আগে আকাশে থাকতে থাকতেই বায়ুচাপের তারতম্যে তাঁরা মারা গিয়েছিলেন। এটাই হয়েছে এমএইচ১৭-র ক্ষেত্রেও।

কিন্তু দুনিয়া জানে, এই বিমান-বিস্ফোরণ যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে হয়নি। সুতরাং এটি কোনও দুর্ঘটনা নয়। রীতিমতো ছক কষে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল তাতে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, তাতে রুশপন্থী জঙ্গিদের মদত দিয়েছিল বা বলা ভাল সাহায্য করেছিল রুশ বাহিনী। প্রমাণস্বরূপ গত কালই তিনটি টেলি-কথোপকথন ফাঁস করেছিল ইউক্রেন। পাশাপাশি উঠে এসেছিল কিছু ছবি ও ভিডিও। ছবিতে দেখা গিয়েছিল, ডনেৎস্কের তোরেজ এলাকা থেকে প্রায় ১০ মাইল দূরে গাছপালা দিয়ে ঢাকা রয়েছে একটি ‘মিসাইল লঞ্চার’। দেখতে অনেকটা বুক মিসাইল লঞ্চারের মতোই। এ রকমই কিছু একটি যে তোরেজের বাসিন্দারাও দেখতে পেয়েছিলেন তা-ও জানা গিয়েছে। আবার বিমান ভেঙে পড়ার পর সেটিকে রুশ সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেখা গিয়েছে। যার ভিডিও তুলেছে ইউক্রেন গোয়েন্দা সংস্থা। তাঁদের দাবি, রাতের আঁধারে রুশ সীমান্ত পেরিয়ে সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পর সেটিকে ধ্বংসও করে দেওয়া হতে পারে মনে করছে ইউক্রেন। এমনকী যাঁরা ক্ষেপণাস্ত্রটি ছুঁড়েছিলেন, সাক্ষ্য লোপাট করতে তাঁদেরও হয়তো হত্যা করা হয়েছে, ধারণা ইউক্রেন প্রশাসনের।

তবে তোরেজ থেকেই যে বুক মিসাইল ছোড়া হয়েছিল, তা মোটামুটি পরিষ্কার। এবং সেটি যেহেতু রুশপন্থী জঙ্গিদের এলাকা, সুতরাং বিষয়টিতে যে তাঁদেরই হাত রয়েছে, তা-ও জানা। কিন্তু সব জানলেও এই নৃশংস আক্রমণ কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না বছর পঁয়ষট্টির ইরিনা তিপুনোভা। সেই বৃহস্পতিবার থেকে মাঝেমধ্যেই বলে চলেছেন, “হঠাৎ বিকট শব্দ আর তার পরেই কাঁপতে শুরু করল বাড়িটা। ...হঠাৎই দেখি আমার রান্নাঘরের চাল ভেঙে পড়ল এক মহিলার নগ্ন দেহ।”

রুশপন্থী বিদ্রোহীদের ‘ভুলের’ মাসুল দিয়েছেন ওই মহিলা। সজ্ঞানে নয়। সম্পূর্ণ অজান্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kiev mh17
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE