Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাপ বাড়ছে মস্কোর উপরে, পচতে থাকা দেহ ট্রেনে তুলে দিল জঙ্গিরা

তদন্তে বাধার অভিযোগ ছিলই। এ বার অভিযোগ, এমএইচ-১৭ কাণ্ডে নিহতদের প্রতি ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখাচ্ছে না রুশপন্থী জঙ্গিরা। ইউক্রেন জানিয়েছে, তিন দিন ধরে রোদে-জলে ফেলে রাখার পর রবিবার ১৯৬টি দেহ তোরেজ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাতানুকূল ট্রেনের কামরায় তুলেছে জঙ্গিরা। তবে তা করতে গিয়ে যে ভাবে দেহগুলি টানাহ্যাঁচড়া করেছে তারা, তাতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ আন্তর্জাতিক মহল।

এই ট্রেনেই তোলা হয় দেহগুলি। তবে গন্তব্য অজানাই। ছবি: এপি

এই ট্রেনেই তোলা হয় দেহগুলি। তবে গন্তব্য অজানাই। ছবি: এপি

সংবাদ সংস্থা
কিয়েভ শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

তদন্তে বাধার অভিযোগ ছিলই। এ বার অভিযোগ, এমএইচ-১৭ কাণ্ডে নিহতদের প্রতি ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখাচ্ছে না রুশপন্থী জঙ্গিরা। ইউক্রেন জানিয়েছে, তিন দিন ধরে রোদে-জলে ফেলে রাখার পর রবিবার ১৯৬টি দেহ তোরেজ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাতানুকূল ট্রেনের কামরায় তুলেছে জঙ্গিরা। তবে তা করতে গিয়ে যে ভাবে দেহগুলি টানাহ্যাঁচড়া করেছে তারা, তাতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ আন্তর্জাতিক মহল। পশ্চিমী দুনিয়ার হুঁশিয়ারি, রাশিয়া যদি জঙ্গিদের অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ না করে, তা হলে মস্কোর উপর আরও কড়া আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এ সব অবশ্য পরের কথা। এ দিন যে প্রশ্ন দাপিয়ে বেড়িয়েছে নিহতদের পরিজনদের মধ্যে তা হল, হঠাৎ কেন বাতানুকূল ট্রেনে দেহগুলি তোলা হল? রুশপন্থী জঙ্গিদের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার বোরোদাই জানিয়েছেন, যত ক্ষণ না পর্যন্ত আন্তর্জাতিক উড়ান পর্যবেক্ষকরা তদন্তে আসছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত দেহগুলি ওই ট্রেনেই সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু ট্রেনটি আদৌ তোরেজেই থাকবে, নাকি অন্য কোথাও যাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ওই স্টেশনের ডিউটি অফিসার নাতালিয়া খুরুঝায়া যেমন জানান, যে ট্রেনটিতে এ দিন মৃতদেহ বোঝাই করা হচ্ছিল, সেটির ইলোভায়স্ক শহরের দিকে যাওয়ার কথা। মানচিত্র বলছে, ইলোভায়স্ক রুশ সীমান্তের খুব কাছে। প্রথম থেকেই গোটা ঘটনায় রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক মহল। তার উপর যদি দেহগুলিকে রুশ সীমান্তের লাগোয়া শহরে পাঠানো হয়, তাতে রাশিয়ার উপর চাপ আরও বাড়তে পারে।

তবে ভবিষ্যতে যা-ই হোক না কেন, রাশিয়াকে কোণঠাসা করার এই সুযোগ যে পশ্চিমী দুনিয়া ছাড়বে না, তা স্পষ্ট। বহু দিন ধরেই ইউক্রেনে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবারের এমএইচ-১৭ কাণ্ডের পর যা আরও জোরালো হয়। পুতিনের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট। নিহতদের দেহের প্রতি অসম্মানের অভিযোগ ওঠায় আজ রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টে। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ছিলেন নেদারল্যান্ডসের। তাঁদের সঙ্গে এই ব্যবহার ‘সব অর্থেই ন্যক্কারজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্ক।

মস্কোর উপরে চাপ বাড়াতে নিহতদের পরিজনদের এই ভাবাবেগকেই মূলধন করছে পশ্চিমের দেশগুলি। তাদের দাবি, জঙ্গিদের এই বেপরোয়া মনোভাবের জন্য দায়ী রাশিয়া। এরা তদন্তে অসহযোগিতা করছে। লোপাট করছে প্রমাণ। পশ্চিমী দেশগুলির দাবি, রাশিয়া অবিলম্বে এই জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে আনুক। নয়তো তীব্রতর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপবে তার উপর।

এ ব্যাপারে অবশ্য সব চেয়ে আক্রমণাত্মক ব্রিটেন। এ দিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাঁর দেশের এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরাসরি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি দৃঢ় হচ্ছে। তা-ও আমরা মাঝেমধ্যে এমন ব্যবহার করি যাতে মনে হয় রাশিয়ার আমাদের ততটা প্রয়োজন নেই, যতটা আমাদের রাশিয়াকে প্রয়োজন।” তাঁর মতে, সে জন্যই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে ইউরোপের বহু দেশকে পাশে

পাওয়া যায় না। তাঁর দাবি, অবিলম্বে রাশিয়ার প্রতি নিজেদের মনোভাব বদল করা উচিত তামাম ইউরোপের। ক্যামেরনের কথায়, “আমাদের এই ক্ষোভকে এ বার কঠোর পদক্ষেপে পরিণত করতে হবে।” তা হলে কি তিনি যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছেন? ডেভিড জানান, যুদ্ধ ছাড়াও মস্কোর এই আগ্রাসন রোখার পন্থা আছে। আর তা হল তীব্রতর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।

সে চেষ্টা যে করা হবে সে ইঙ্গিতও এ দিন দিয়েছেন ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে এই প্রসঙ্গ তোলা হবে বলে জানান তিনি। তা ছাড়া রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদও গোটা বিষয়টির নিন্দা প্রস্তাব আনবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা যাতে অবাধ তদন্তের সুযোগ পান, সে প্রস্তাবও তোলা হবে সে দিন।

এ বার কী করবেন পুতিন?

রুশ প্রেসিডেন্ট অবশ্য গত কালই বলেছিলেন, তদন্তে সব রকম সাহায্য করবে রাশিয়া। এমনকী এ দিন বোরোদাই-ও জানিয়েছেন, বিমানের ব্ল্যাক বক্সের মতো দেখতে যন্ত্রাংশগুলি তাদের সংগ্রহেই রয়েছে। এবং আন্তর্জাতিক উড়ান প্রতিনিধিদের হাতে তা তুলে দিতে রাজি তাঁরা।

কিন্তু এ সবেও রেহাই নেই রাশিয়ার। মঙ্গলবারের পরই স্পষ্ট হবে, ঠিক কতটা চাপে পড়তে চলেছেন পুতিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE