তৎপর: ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ। বুধবার উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাঘাঁটিতে। নিজস্ব চিত্র
পর পর তিনটি গোলা। ‘উড়ন্ত বাঘ’ নামে অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক থেকে ছুটে এল। তার ঘূর্ণিধোঁয়া কাটলেই সামনে চোখ জুড়োনো সবুজ পর্বতমালা। কিন্তু পিছনে পাহাড়শ্রেণি তো একেবারেই ন্যাড়া!
৪১৩ ব্যাটালিয়ানের প্রধান বাক সে হোয়ানের মুখ অনেকটা ঢাকা জলপাইরঙা ক্রিমে। কয়েক ঘণ্টা আগেই উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবরটির জন্যই বোধহয় চোয়াল বাড়তি শক্ত। উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ কোরিয়ার এই সেনাঘাঁটিতে আজ সাজো সাজো রব।
হোয়ানের কথায়, “সবুজ পাহাড় আমাদের। তার পিছনেই সীমান্ত। উত্তর কোরিয়াকে চেনা সহজ, কারণ ওদের পাহাড় ন্যাড়া। ওখানকার অর্থনীতি এতই দুর্বল যে সব গাছ উত্তর কোরিয়াবাসীদের কেটে নিতে হয় জ্বালানির জন্য। সাধে কি লোকে পালিয়ে এ দিকে আসতে চাইছে! একে তো কিম-এর সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ আর মগজধোলাই করার প্রশাসন। কাজ নেই। পেটে দানাপানি নেই।”
কিন্তু পরমাণু অস্ত্রের ভাঁড়ার আমেরিকা তৈরি করে দিয়েছে!
সম্প্রতি আমেরিকারই একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়ায় বসানোর পরে গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে সুর গরম করেছে চিন। তার মধ্যে আজ ভোর থেকে সীমান্তে যে বিপুল গোলাবর্ষণ (সামনের পাহাড়ে সংখ্যা বসিয়ে চাঁদমারি করা রয়েছে চকের দাগে) এবং সাঁজোয়া ট্যাঙ্কের মহামিছিল করল দক্ষিণ কোরিয়া, তা মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে প্রতিবেশীর কানে না পৌঁছনোর কোনও কারণ নেই।
পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার জন্য অর্থ বা সময় কোনওটাই ব্যয় করতে হয়নি। কিন্তু কে ৯ (ভারত এটি কিনতে চলেছে), কে ৩০, কে ২৪২-র
মতো ট্যাঙ্ক-সহ যা অস্ত্রাগার বানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, তা ইজরায়েলেরও ঈর্ষার কারণ হতে পারে। প্রতিটি ট্যাঙ্কের ভিতরে জিপিএস, বিভিন্ন সেন্সর এবং ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ছয়লাপ।
কিম জং উনের আইসিবিএম ছোড়ার খবর নিয়ে আজ বিছানা ছেড়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। টানটান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও। আমেরিকা-দক্ষিণ কোরিয়া সেনা অক্ষকে কী ভাবে আরও তৎপর করা যায় তা নিয়ে মার্কিন কর্তাদের সঙ্গে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। জরুরি বৈঠক ডেকেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ।
আরও পড়ুন : আবার নতুন জুজু কিমের, ফুঁসছেন ট্রাম্প
কার্যত আরও একটি বিশ্বযুদ্ধের এই আতঙ্কের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ো সুক জু জানাচ্ছেন, “উত্তর কোরিয়ার এটা ভাল করে জেনে রাখা উচিত যে আমেরিকার সঙ্গে আমাদের সামরিক সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের পরমাণু ভাঁড়ারেও কমতি নেই। আমেরিকা পরমাণু অস্ত্র মোকাবিলার পাকা ভিত গড়ে দিয়েছে।” আগামী বছরের গোড়ায় এখানে শীতকালীন অলিম্পিক হওয়ার কথা। সেটিকে নির্বিঘ্নে হতে দেওয়া সোলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই অশনি সঙ্কেতের মুখে দক্ষিণ কোরিয়া মনে করছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে! অসম্ভব তাড়ার মধ্যেও যেটুকু কথা বললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, একাধিকবার এল রবি ঠাকুরের প্রসঙ্গ। বললেন, “রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রিয় কবি। তাঁর দেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা আমরা তো বাড়াবোই।” সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষের মুখে আবারও বললেন, “রবীন্দ্রনাথ কোরিয়াকে পূর্বের সংস্কৃতির প্রদীপ বলেছিলেন। আমরা সেই পথেই চলছি।” জানালেন, এই প্রথম রবি ঠাকুরের দেশের সঙ্গে নৌ সেনা পর্যায়ে কথা শুরু হতে চলেছে। ক্রমশ বাড়বে দু’দেশের মধ্যে বায়ু এবং স্থলসেনা সমঝোতাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy