Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাজশাহিতে এ বার খুন সুফি ধর্মগুরু

ফের মৌলবাদীদের হত্যালীলার শিকার বাংলাদেশ। এ বার অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হলেন এক সুফি ধর্মগুরু। গত মাসেই বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের সমকামী আন্দোলনের পুরোধা জুলহাস মান্নানকে।

সংবাদ সংস্থা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০২:৫৩
Share: Save:

ফের মৌলবাদীদের হত্যালীলার শিকার বাংলাদেশ। এ বার অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হলেন এক সুফি ধর্মগুরু।

গত মাসেই বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের সমকামী আন্দোলনের পুরোধা জুলহাস মান্নানকে। বাংলাদেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী দীপু মণির ভাই জুলহাস ছিলেন সে দেশের প্রথম এলজিবিটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক। এই ঘটনার দিন দুয়েক আগেই প্রকাশ্য রাস্তায় খুন হন রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকি। সেই আতঙ্কের রেশ না কাটতেই খুন হলেন সুফি ধর্মগুরু শাহিদুল্লা। এ বারও ফের সেই রাজশাহিতেই।

পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল থেকেই নিখোঁজ ছিলেন ৬৫ বছরের শাহিদুল্লা। গত রাতে রাজশাহির তানোর উপজেলা থেকে উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়ে রাত দশটা নাগাদ একটি আমবাগান থেকে ওই ধর্মগুরুর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর ডান কাঁধে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। গলার নলি ছিল কাটা। যা দেখে পুলিশের অনুমান আগের খুনগুলির মতো একই কায়দাতে ধরালো কোনও অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয় শাহিদুল্লাকে।

রাজশাহির জেলা পুলিশ প্রধান নিশারুল আরিফ জানিয়েছেন, সুফি ধর্মগুরু শাহিদুল্লার বেশ কিছু অনুগামী ছিল ঠিকই, তবে তানোর এলাকার বাইরে তাঁর বিশেষ পরিচিতি ছিল না। অন্যদিকে অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকি হোক বা জুলহাস মান্নান, প্রত্যেকেই পরিচিত ছিলেন তাঁদের প্রগতিশীল ভাবনা এবং কাজের জন্য। পেশায় মুদি শাহিদুল্লা এই রকম কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না কখনওই। এ হেন নামডাকহীন এক ব্যক্তিকে তবে কেন খুন করা হল হঠাৎ?

পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সুফির কদর থাকলেও সংখ্যাগুরু মুসলসান সম্প্রদায় এবং কট্টরপন্থীরা একে ইসলামের সঠিক পথ বলে মনে করেন না কখনওই। সুফির প্রচারক শাহিদুল্লার হত্যার পিছনে তাই প্রাথমিক ভাবে মৌলবাদীদের দায়ী করছে পুলিশ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার জেরে খুন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। গত মাসেই আইএস জঙ্গিদের হাতে খুন হল এক হিন্দু দর্জি। ইসলাম বিরোধী মন্তব্য করার অভিযোগে ২০১২ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তারও আগে নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বা নিলয় নীলের মতো মুক্তমনা ব্লগাররা প্রত্যেকেই পরিচিত ছিলেন উগ্র ধর্মীয় আবেগের বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য। অতীত বলছে, ইসলামের কট্টরপন্থা থেকে সরে এসে যাঁরাই অন্য সুরে কথা বলেছেন, কট্টরপন্থীদের চাপাতির কোপ পড়েছে তাঁদেরই উপর।

যদিও শাহিদুল্লার খুনের পিছনে অন্য একটি সম্ভাবনার কথাও উঠে আসছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিল ওই ধর্মগুরুর। সেই বিবাদের জেরেও খুন হতে পারেন শাহিদুল্লা। রাজশাহির পুলিশ প্রধান নিশারুল আরিফ জানিয়েছেন, তাঁকে প্রথমে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। পরে তাঁর গলার নলি কেটে খুন করা হয়।

সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাংদেশে একাধিক খুনের ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে আইএস (ইসলামিক স্টেট) এবং আল কায়দা। শাহিদুল্লার খুনের পিছনেও আইএস জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশের একটা বড় অংশ। যদিও বাংলাদেশের মাটিতে এই জঙ্গি সংগঠনগুলির উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেছে সরকার। শাহিদুল্লার খুনে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তানোর থানায় একাধিক লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন শাহিদুল্লার ছেলেও। তাঁর দাবি, বাবা ইসলামের যে পথের অনুগামী ছিলেন তার বিরুদ্ধ পন্থী কেউ হত্যা করেছে ওই ধর্মগুরুকে। পুলিশ রেকর্ড বলছে, গত তিন বছরে বাংলাদেশে অনন্ত ৩৭বার হামলা হয়েছে সুফি মুসলিমদের উপর। গত সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে একটি সুফি মাজারের তত্ত্বাবধায়ক এবং তাঁর কর্মচারীকে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা।

বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে একের পর এক মৌলবাদী তাণ্ডবের বলি হয়েছেন প্রগতিশীলরা। শহবাগ আন্দোলনের কর্মী শাফিউল ইসলাম, রাজীব হায়দার, আসিফ মইনুদ্দিনের পর গত বছর অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা নাড়িয়ে গিয়েছে গোটা দেশকে। তবে তার পরেও পিছু হঠেনি হত্যাকারীরা। ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নিলয় নীল, নজিমুদ্দিন সামাদ, রেজাউল করিম সিদ্দিকি, জুলহাস মান্নান, মেহবুব তনয়— নিহতদের তালিকা দীর্ঘ হয়েছে ক্রমশ। সেই তালিকাতেই নতুন সংয়োজন সুফি ধর্মগুরু তানোরে শাহিদুল্লা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh LGBT Foreign Minister Murder Sufi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE