Advertisement
০৭ মে ২০২৪

‘এখন যতই মিষ্টি কথা বলো, তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট নও!’

চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ। নজিরবিহীন মিছিল-সমাবেশ। কাল তাঁর জয়ের ধাক্কায় হতবাক হয়ে গিয়েছিল তামাম দুনিয়া। উল্টো চমক ছিল তাঁর বিজয় ভাষণে, হাতে হাত মিলিয়ে চলার ডাকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে সদ্য নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতায় সমাবেশ। বৃহস্পতিবার লস অ্যাঞ্জেলেসে। ছবি: রয়টার্স।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে সদ্য নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতায় সমাবেশ। বৃহস্পতিবার লস অ্যাঞ্জেলেসে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ। নজিরবিহীন মিছিল-সমাবেশ।

কাল তাঁর জয়ের ধাক্কায় হতবাক হয়ে গিয়েছিল তামাম দুনিয়া। উল্টো চমক ছিল তাঁর বিজয় ভাষণে, হাতে হাত মিলিয়ে চলার ডাকে। আজ পথে নেমে আমেরিকার একটা ব়ড় অংশ কিন্তু বুঝিয়ে দিল, দীর্ঘ প্রচারপর্বে যে সব কটূ কথা বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা সহজে ভুলছে না তারা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ‘প্রেসিডেন্ট’-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হলো গোটা দেশ! পুলিশের গুলি-লাঠিচার্জ-কাঁদানে গ্যাসের মধ্যে রাজ্যে-রাজ্যে স্লোগান উঠল— ‘নো রেসিস্ট ইন আমেরিকা’!

প্রেসিডেন্টের কোনও পদক্ষেপের বিরোধিতায় বিক্ষোভ আগেও দেখেছে এ দেশ। কিন্তু নির্বাচনের পরের দিন এক রাষ্ট্রপ্রধানকে মানতে না চেয়ে এমন প্রতিবাদ নজিরবিহীন। আঠারো মাসের প্রচারপর্বে একের পর এক ভাষণে ঘেন্না উগরে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন মুসলিমদের দেশে ঢোকা বন্ধ করে দেবেন। শরণার্থী ঠেকাতে মেক্সিকোর সীমান্তে পাঁচিল তোলার হুমকিও দিয়েছিলেন। মহিলাদের সম্পর্কে যা-নয়-তাই বলেছিলেন। সেই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি দেশের একটা বড় অংশ।

আজ দিনভর বিভিন্ন রাজ্যে ট্রাম্প-বিরোধী সমাবেশ চলেছে। ট্রাম্পের মেক্সিকো-নীতির বিরোধিতায় সিয়াটেলের রাস্তায় নামেন কয়েকশো মানুষ। অভিযোগ, প্রতিবাদ থামাতে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। ট্রাম্পের শরণার্থী-বিরোধী নীতির প্রতিবাদে সান ফ্রান্সিসকো ও লস অ্যাঞ্জেলেসে মিছিল করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। কেন এই মিছিল? লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি মিছিলের উদ্যোক্তা, স্পেনীয় বংশোদ্ভূত স্টেফানি হিপ্পোলিতোর কথায়, ‘‘কোনও বাচ্চাকে যেন ডিপোর্ট হওয়ার ভয় নিয়ে না বাঁচতে হয়! এই আমেরিকা সকলের আমেরিকা।’’

নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, বস্টন, ফিলাডেলফিয়ার মতো জনবহুল শহরে এ দিন বিক্ষোভ সমাবেশে পা মিলিয়েছেন বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন লাতিন আমেরিকার বংশোদ্ভূত তরুণী কেলি লোপেজ। ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, ‘‘সারা প্রচারপর্ব জুড়ে ট্রাম্প মানুষকে ছোট করেছেন। এখন হঠাৎ প্রেসিডেন্ট হয়ে অন্য কথা বলতে শুরু করলেন। তাতে তো ওঁর আগের কথাগুলো মিথ্যে হয়ে যায় না।’’ আর এক বিক্ষোভকারী, আফ্রো-আমেরিকান তরুণ ইলাজ ইবেনের কথায়, ‘‘আমাকে যদি দেশের প্রাতিষ্ঠানিকতা, প্রেসিডেন্সিকে সম্মান করতে বলা হয়, আমি বলব, প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে আমারও।’’

এ দিন বেশ কয়েকটি রাজ্যে ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল ‘দ্য সোশ্যালিস্ট অল্টারনেটিভ’ নামে এক সংগঠন। তাঁদের মুখপাত্র বললেন, ‘‘ট্রাম্পের জয় সারা দেশকে হতাশা আর আতঙ্কের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিশেষত মহিলা ও শরণার্থীদের।’’

মিছিল-সমাবেশে বিভিন্ন শহরে ব্যপক যানজট হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ১০১ ও ১১০ নম্বর সড়কের উপর বসে পড়ে এ দিন বিক্ষোভ দেখানোয় বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অকল্যান্ডে ছ’হাজার মানুষের একটি মিছিল স্তদ্ধ করে দেয় যান চলাচল। পুলিশ আসতেই পুলিশকে লক্ষ করে উড়ে আসে ইট-পাটকেল। পোড়ানো হয় পোস্টার-ব্যানার। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভ থামায় পুলিশ। জখম হন দুই পুলিশকর্মী। শিকাগোর ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড টাওয়ার্সে পৌঁছে যায় ১৮০০ জনের একটি দল। স্লোগান তোলে ‘নো ট্রাম্প, নো রেসিস্ট ইউএসএ’।

দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেক্টোরাল ভোট জিতে নিয়েছেন মার্কিন ধনকুবের। আজ হোয়াইট হাউসে গিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু যাঁরা সমানে স্লোগান তুলছেন ‘নট আওয়ার প্রেসি়ডেন্ট’, সেই বিশাল সংখ্যক অভিবাসী, সংখ্যালঘু ও মহিলাদের মন তিনি জিতবেন কবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

protest against Trump Anti-Trump slogan New York
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE