পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি ঝুলে রইল চিনা বাধায়। শুক্রবারের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারল ৪৮ দেশের সংগঠন। নন প্রলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি) অর্থাৎ পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তি সই না করা পর্যন্ত ভারতকে এনএসজিতে ঢুকতে না দেওয়ার অবস্থানে অনড় থাকল চিন। আরও চারটি দেশ ভারতকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে বলে খবর।
বৃহস্পতিবার এনএসজি বৈঠকে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ৪৮টি সদস্য দেশের অধিকাংশই ভারতের পক্ষে ছিল। কিন্তু চিন ভারতের বিরোধিতায় অনড় থাকে। তার আগে উজবেকিস্তানের তাসখন্দে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শিখর সম্মলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং চিনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলাদা করে বৈঠক হয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুরোধ করেন, ভারতের এনএসজি-ভুক্তির আবেদন স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিবেচনা করতে। ভারতের দাবিকে পাকিস্তানের দাবির সঙ্গে জুড়ে না দেখার অনুরোধও করেন মোদী। তবে সে বৈঠক যে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি, তা সোলে এনএসজি-র প্লেনারি বৈঠকের গতিপ্রকৃতি থেকেই আঁচ করা গিয়েছে। চিন বৈঠকে সাফ জানায়, এনপিটি সই না করা পর্যন্ত ভারতকে এনএসজি-র অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে চিন মত দেবে না। ভারত বা পাকিস্তান, কোনও দেশের আবেদনকেই চিন সমর্থন করবে না বলে এনএসজি বৈঠকে হাজির চিনা প্রতিনিধিরা জানিয়ে দেন। সুইৎজারল্যান্ডও চিনের সুরে সুর মেলায়। মোদীর সাম্প্রতিক সুইৎজারল্যান্ড সফরের পর কিন্তু সে দেশের তরফে ভারতকে সমর্থনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এনএসজি বৈঠকে সুইৎজারল্যান্ড সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রিয়াও ভারতের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে মতে দেয়নি। এই পাঁচটি দেশ ছাড়া ৪৮ দেশের সংগঠনের আর কোনও সদস্য ভারতের বিরোধিতা করছে না। কিন্তু এনএসজিতে নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতির ভিত্তিতে নেওয়া হয়। তাই এক জন সদস্যের আপত্তি থাকলেও ভারতের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হবে না।
শুক্রবার চিনা বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডাইরেক্টর জেনারেল ওয়াং কুন বলেছেন, ‘‘এনএসজি ভারতের সদস্যপদের বিষয়ে এখন আলোচনা করবে না। এনপিটি স্বাক্ষর করেনি যে সব দেশ, তাদের এনএসজিতে নেওয়ার প্রশ্নে অনেক মতভেদ রয়েছে।’’ নীতির প্রশ্নেই ভারতকে এনএসজি-ভুক্ত করা সম্ভব নয় বলেও কুন মন্তব্য করেছেন।
নয়াদিল্লির দাবি ছিল, ভারতের আবেদনকে যেন অন্য কোনও দেশের দাবিদাওয়ার সঙ্গে জুড়ে দেখা না হয়। কিন্তু চিন ভারতদের আবেদনকে বার বার পাকিস্তানের দাবির সঙ্গে জুড়ে দেখানোর চেষ্টাই করেছে।
আরও পড়ুন: প্রশান্ত মহাসাগরে যে কোনও মার্কিন রণতরীই আমাদের টার্গেটে, হুমকি উত্তর কোরিয়ার
দেশের আর্থিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পরমাণু শক্তির ব্যবহারে জোর দিয়েছে ভারত। পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে ভারতে। এনএসজি সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ২০০৮ সালে ভারতের জন্য যে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছিল সংগঠনটি, তার সুবাদে পরমাণু সরঞ্জাম ও জ্বালানির বাণিজ্য বেশ খানিকটা অবাধেই করতে পারে ভারত। কিন্তু এনএসজি-র সদস্য হতে পারলে আরও অবাধে এবং কম খরচে এনএসজি সদস্যদের কাছ থেকে পরমাণু সরঞ্জাম ও জ্বালানি ভারত কিনতে পারবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy