Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শিশুর মৃত্যুতে ১৪ বছরের জেল বেবিসিটারের

ভাত খেতে চাইছিল না ১৯ মাসের ছোট্ট ছেলেটা। তবে অবুঝ ওই শিশুকে ভুলিয়ে খাওয়ানো তো দূরের কথা! তার জায়গায় ছোট্ট শিশুটিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল যুবতী বেবিসিটার। তার পর তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও শেষ হয়ে যায় ছোট্ট প্রাণটা।

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

ভাত খেতে চাইছিল না ১৯ মাসের ছোট্ট ছেলেটা। তবে অবুঝ ওই শিশুকে ভুলিয়ে খাওয়ানো তো দূরের কথা! তার জায়গায় ছোট্ট শিশুটিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল যুবতী বেবিসিটার। তার পর তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও শেষ হয়ে যায় ছোট্ট প্রাণটা।

গত বছর জানুয়ারিতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল কানেক্টিকাটে। আর শিশুটিকে হত্যার দায়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই বেবিসিটারকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিল এক মার্কিন আদালত। এ ঘটনায় অবশ্য শিশুটির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তকারীদের ভুয়ো তথ্য দেওয়া, ঘটনার বিষয়ে মিথ্যে বলা— এ সবের জেরেই ছাড় পাচ্ছেন না বাবা-মা-ও।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত দম্পতি শিবকুমার মণি এবং থেনমোঝি রাজেন্দ্রনের সন্তান আথিয়ান শিবকুমার। ছোট্ট ওই শিশুর দেখভালের জন্য নিয়োগ করা হয় বছর উনত্রিশের কিঞ্জল পটেলকে। এ পর্যন্ত তো সবই ঠিক ছিল। কিন্তু এমন কী ঘটল যে শিশুটিকে ও ভাবে মেরে ফেলল কিঞ্জল?

পুলিশের জেরায় প্রথম দিকে খুনের ঘটনা স্বীকার করতে চায়নি কিঞ্জল। প্রথমে সে পুলিশকে জানিয়েছিল, পিছলে পড়ে গিয়েই মাথায় চোট পেয়েছিল আথিয়ান।

পুলিশের দাবি, পরে জেরায় ভেঙে পড়ে সে জানায়, ঘটনার দিন আথিয়ানকে খাওয়াচ্ছিল সে। কিন্তু ছোট্ট ওই শিশুটি কিছুতেই খেতে চাইছিল না। তাই শিশুটিকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টাও করেছিল কিঞ্জল। আর তাতেই বিপত্তি। বিরক্ত শিশুটি থুথু ছোড়ে কিঞ্জলের মুখে। ব্যস! আর রাগ সামলাতে পারেনি কিঞ্জল। বাচ্চাটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে রান্নাঘরের মেঝেতে তিন বার আছাড় মারে সে। এতেই থেমে ছিল না অত্যাচার। রোষ মেটাতে পর পর কয়েক বার দেওয়ালে শিশুটির মাথাও ঠুকে দেয় কিঞ্জল।

পুলিশের কাছে এমন বয়ান দিলেও অবশ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কিঞ্জলকে বাঁচানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন তার আইনজীবী কেভিন স্মিথ। আগাগোড়া তিনি আথিয়ানের মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে দেখিয়ে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে কেভিন জানিয়েছেন, খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। তাঁর মক্কেল শিশুটিকে মেরে ফেলতে চায়নি। হয়তো বাচ্চা দেখভালের ব্যাপারে কিঞ্জলের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। সেই কারণেই হয়তো এটা হয়ে গিয়েছে।

তবে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন?

ঘটনার পরেই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন শিবকুমার এবং তাঁর স্ত্রী। প্রথম দিকে, তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য গল্প ফেঁদেছিলেন শিশুটির মা থেনমোঝি। তিনি জানিয়েছিলেন, আথিয়ান শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল। সে কারণেই কিঞ্জল তাঁর ছেলেকে দেখাশোনা করত। এক দিন দরজার কাছে যাওয়ার সময় আথিয়ান পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পায়। তার জেরেই মারা যায় সে। থেনমোঝির এই গল্পকে অবশ্য সমর্থন করেছিলেন তাঁর স্বামী শিবকুমার।

শুধু তা-ই নয়, আথিয়ানের মা-বাবার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল। কিঞ্জলের এই আচরণ নতুন ছিল না। আগেও শিশুটির সঙ্গে তাঁর এমন আচরণের নমুনা পাওয়া গিয়েছিল। কারণ আথিয়ানের মৃত্যুর এক মাস আগেই তাকে এক বার নিউ হাভেন হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছিল। তখনও তার ঠোঁটে ও গালে চোট ছিল। সেই সময়ই কিঞ্জলকে শিশুটির দেখভাল করার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও তখন আথিয়ানের বাবা-মা জানিয়েছিলেন, কিঞ্জলকে ছাড়িয়ে দেবেন তাঁরা। তবে পরে কিঞ্জলকে কাজ থেকে বরখাস্ত করেননি তাঁরা। এর জেরেও শিশুটির মা-বাবাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

US babysitter child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE