Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কমছে নাব্যতা, বাংলাদেশে নদীর রক্ষায় নজর বিশ্বব্যাঙ্কেরও

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বা আমাজোনাস, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের নীল নদ বা বহর-এল-নীল এর দৈর্ঘ্য বিতর্কিত। পরিমাপে গোলমাল। একবারের মাপে এটি পৃথিবীর সব চেয়ে বড় তো পরের বার অন্যটি লম্বা।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৬ ১২:৫৩
Share: Save:

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বা আমাজোনাস, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের নীল নদ বা বহর-এল-নীল এর দৈর্ঘ্য বিতর্কিত। পরিমাপে গোলমাল। একবারের মাপে এটি পৃথিবীর সব চেয়ে বড় তো পরের বার অন্যটি লম্বা। বেঁটে বড় কথা নয়, বিবেচনার বিষয়, কতখানি জল বহন করে আর কতটা অঞ্চল জুড়ে প্রবহমান। নাব্যতাই বা কেমন। কৃষিতে কীভাবে কাজে লাগে। এই বিচারে আমাজনের থেকে অনেক পিছিয়ে নীল। আমাজনের নাব্য অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৩৭ হাজার কিলোমিটার। জলের পরিমাণ সেকেন্ডে এক লাখ ১৯ হাজার কিউবিক মিটার। বন্যায় বেড়ে দু’লাখ কিউবিক মিটার। যা পৃথিবীর সব নদ-নদীর চেয়ে বেশি। অববাহিকাও বৃহত্তম। ৭০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। এর উপনদ-নদী ১৫ হাজার। দীর্ঘতম উপনদী মেডেইরার দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার। এই নিরিখেই বাংলাদেশের নদ-নদী বিচারে ব্যস্ত বিশ্বব্যাঙ্ক। এ দেশে প্রধান নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি, সুরমা, তিতাস, করতোয়া, গোমতী। নদীমাতৃক দেশটির জলসীমা ৪ হাজার ৩৭৫ কিলোমিটার। বর্ষায় নদী জলের দৈর্ঘ্য বেড়ে হয় ৮ হাজার ৪৩১ কিলোমিটার। অন্যান্য ঋতুতে কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ২২১ কিলোমিটার।

মধ্য হিমালয়ের গঙ্গোত্রী থেকে বেরিয়ে গঙ্গা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এগিয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। গঙ্গা মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে বিভক্ত। পদ্মা রাজশাহীর দক্ষিণ সীমা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। একটু এগিয়ে গোয়ালন্দের কাছে যমুনার সঙ্গে মিশেছে। এই মিলিত নদী চাঁদপুরে মেঘনায় গিয়ে পড়েছে। তারপর একত্রে ঝাঁপিয়েছে বঙ্গোপসাগরে। পদ্মার শাখা নদীর মধ্যে আছে আড়িয়াল খাঁ, গড়াই, মধুমতী।

পশ্চিম তিব্বতে হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গের হিমবাহে ব্রহ্মপুত্রের জন্ম। তার গতি তিব্বত-অসমের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রাম হয়ে বাংলাদেশে। একটু এগিয়ে দু’ভাগ। দক্ষিণ পূর্ব শাখা ভৈরবের কাছে মেঘনায় পড়েছে। অন্যটি যমুনার সঙ্গে মিশে গোয়ালন্দের কাছে পদ্মাকেও সঙ্গী করেছে। মণিপুর-মিজোরামের পার্বত্য অঞ্চল থেকে বেরিয়ে মেঘনা বরাক নাম নিয়ে সিলেট সীমান্তে কুশিয়ারা আর সুরমা নামে দুই শাখায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আজমিরগঞ্জের কাছে এক হয়েছে। সেখান থেকে কালনি নাম নিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরব বাজারে মেঘনা নাম নেয়। তারপর চাঁদপুরে মেঘনা পদ্মা-যমুনার সঙ্গে মিলে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। অসমের লুসাই পাহাড় থেকে বেরিয়ে কর্ণফুলী নদী বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী সুরমা। ৩৯৯ কিলোমিটার লম্বা। সবথেকে চওড়া যমুনা। দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র। বাংলাদেশের সব নদীর উৎপত্তি ভারত কিংবা তিব্বতে। রাশ এই দু’দেশের হাতে। একমাত্র সাংগু নদীর শুরু ও শেষ বাংলাদেশে। দেশের অর্থনীতিতে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। নদীর বয়ে আসা পলিমাটিতেই বাংলাদেশের কৃষিজমি অত্যন্ত উর্বর। কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে নদীই ভরসা। পরিবহণের তিন-চতুর্থাংশ নদীপথে। জলপথ ৫ হাজার ৬৩২ কিলোমিটার। বর্ষায় বেড়ে হয় ৮ হাজার ৪৫ কিলোমিটার। সেচ আর বিদ্যুতের জন্যও নদীর দরকার। নদীর মাছ শুধু দেশের অর্থনীতির স্তম্ভ নয়, বৈদেশিক মুদ্রাও এনে দেয়।

এত নদী বিশ্বের কটা দেশে আছে। সমস্যা অন্য জায়গায়। পলি জমে নদীগুলো ক্রমে অগভীর হচ্ছে। জল ধরে রাখার ক্ষমতা কমছে বলে বন্যা বাড়ছে। বিশ্বব্যাঙ্ক সেদিকেই নজর দিয়েছে। নদীস্বাস্হ্য খতিয়ে দেখে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। প্রথমে শুরু হবে ড্রেজিং। প্রথম দফায় বিশ্বব্যাঙ্ক দেবে ৫০ কোটি ডলার। ড্রেজিংয়ের পদ্ধতিও পাল্টাবে। আগে যেখানে দরকার সেখানেই এটা হত। এবার নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এক একটি নদীর দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারা কম করে ছ’বছর ড্রেজিং করে নদীর রক্ষণাবেক্ষণে নজর রাখবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন করিডর, বরিশাল-চাঁদপুর, ঢাকা-আশুগঞ্জের নদীগুলোতে প্রথম দিকে ড্রেজিং শুরু হবে। তাতে ৫৩টি নদীপথের গভীরতা বাড়বে, সুগমও হবে। যদিও ড্রেজিং একমাত্র সমাধান নয়। এর খরচও বেশি। আপাতত এই রাস্তাতেই প্রবাহ তীব্র রাখার পরিকল্পনা। নদী যথেষ্ট গভীর হলে গতিপথ পাল্টানোর শঙ্কাও কমবে। নদীর গ্রাসে কৃষিজমিও হারাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE