পছন্দের শশাঙ্ককে নিয়ে পওয়ার। মুম্বইয়ে শনিবার। ছবি: পিটিআই
তিনি শরদ পওয়ার হালফিল কেন, অনেক দিনই কোনও এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দেননি। শনিবার সন্ধেয় ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ক্রিকেট বোর্ডের অফিসে বসে মরাঠাধিপতি রাজনীতিবিদ অবশ্য ভারতীয় প্রিন্ট মিডিয়ায় একমাত্র এবিপি-কেই একান্ত ক্রিকেট-সাক্ষাৎকার দিলেন।
প্রশ্ন: আজ তো ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক পালাবদলের পালার সন্ধে।
পওয়ার: শুধু পালাবদল বললে কমিয়ে বলা হবে। থার্ড অক্টোবর, টু থাউজ্যান্ড ফিফটিনকে বলা উচিত ভারতীয় ক্রিকেটের এক রেড লেটার ডে। নতুন যুগের শুরু হল আজ থেকে শশাঙ্ক মনোহরের নেতৃত্বে।
প্র: আপনি বলছেন নতুন যুগ। কিন্তু খাওয়াখাওয়ি তো লেগেই রয়েছে বোর্ডে। আজও তো সুব্রহ্মণম স্বামীর পক্ষে একটা পিটিশন পেশ করা হয়েছে যে, শশাঙ্ককে প্রেসিডেন্ট বানালে স্বার্থের সংঘাত দেখা যাবে। তা হলে তো প্রতি পদে তিক্ততা লেগেই রইল।
পওয়ার: শশাঙ্কের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়ার ধরন সব সামলে নেবে। পার্থক্য আর বেশি দিন থাকবে না। শশাঙ্ক রাজ্য সংস্থাগুলোর স্বার্থ রক্ষা করবে, আবার ভারতীয় বোর্ডকেও টেনে নিয়ে যাবে।
প্র: এই যে শ্রীনি যুগ সমাপ্ত হয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে বিশাল পালাবদল ঘটল, তাতে পরোক্ষে আপনার নেতৃত্ব দান একটা বিরাট সাপোর্ট। যেটা বছর দুই ধরেই আপনি দিচ্ছিলেন। কিন্তু আগের জমানা সম্পর্কে আপনার মোহভঙ্গের কারণ কী?
পওয়ার: কারণ বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্রমশ খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছিল। মিডিয়া যা-তা বলছিল-লিখছিল। বিচারপতিরা ক্রিকেট বোর্ড সম্পর্কে ধারাবাহিক অপমানজনক সব মন্তব্য করছিলেন। এমন সব সঙ্কেত ছড়াচ্ছিল যে, ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন মানেই দুর্বিসহ, নোংরা একটা ব্যাপার। আমরা কয়েক জন মিলে ঠিক করি এই ভাবমূর্তির বদল ঘটাতে হবে। এ ভাবে চলতে থাকলে তো গোটা বিশ্বে এত দিনের কষ্টার্জিত ভাবমূর্তিটাই চুরমার হয়ে যাবে। তাই মনোহরের কথা ভাবা হয়। আমি জানতাম ও একজন যে বোর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে পারবে। বোর্ডের প্রশাসনিক কাঠামোটাও ফের তৈরি করতে পারবে।
প্র: কিন্তু বোর্ডের তো অনেক সমস্যা। এই তো সদ্য সদ্য আপনার কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা মামলায় জোচ্চুরির অভিযোগ এনেছেন বোর্ড সচিবের বিরুদ্ধে।
পওয়ার: আমি কাগজপত্র ঠিক দেখিনি। দেখে বলতে পারব। তবে বোর্ডের লড়ালড়ি যে ভয়ঙ্কর পর্যায়ে গেছিল সেটা তো সত্যি কথা। গ্রুপ তৈরি হয়ে গেছিল। ক্র্যাকগুলো ক্রমশ বাড়ছিল। কিন্তু শশাঙ্ক এমন লোক যার সেগুলো সামলানোর যোগ্যতা আছে। ও তো প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার পর বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থা থেকেও বেরিয়ে গেছিল। বলেছিল আর কখনও বোর্ড প্রশাসনে ফিরবে না। আমিই ওকে বোঝাই, একটু চাপও দিই যে, না করা যাবে না। তোমাকে আমাদের ক্যাপ্টেন হতেই হবে।
প্র: উনি ক্যাপ্টেন হলে আপনি কী এই জমানার?
পওয়ার: আমি পর্দার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক শুভানুধ্যায়ী। যে বিশ্বাস করে শশাঙ্ক আসা মানে বোর্ডে আর কোনও দলাদলি থাকবে না। গ্রুপিজ্ম হবে না। বিশেষ কারও কারও ইন্টারেস্ট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
প্র: শোনা যাচ্ছে শশাঙ্ক যেমন এখানে ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, তেমনই আইসিসিতে ভারতীয় প্রতিনিধি হয়ে যেতে পারেন আপনি। শ্রীনির বদলে।
পওয়ার: যাওয়া উচিত বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের নিজের। ও যদি না যায়, আমাকে অনুরোধ করে তখন দেখা যাবে। আইসিসি আপাতত দূরের ব্যাপার। কী হবে দেখা যাবে।
প্র: বোর্ডের এই নষ্ট হওয়া ভাবমূর্তি ফিরতে কত দিন? না কি আর কখনও ফিরবে না?
পওয়ার: আমার ধারণা সেটা ফেরাতে শশাঙ্কের তিন মাসের বেশি সময় লাগবে না। ও তার মধ্যেই চাকা ঘুরিয়ে দেবে। কালকেই দেখবেন না সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন প্রেসিডেন্ট এমন সব বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা বলবে, আপনারা শুনে হাঁ হয়ে যাবেন।
প্র: ডালমিয়ার জায়গায় শশাঙ্ক, এটা ভাবলে কেমন লাগছে?
পওয়ার: আমি বলব যোগ্য হাতে সিংহাসন যাচ্ছে। ডালমিয়াজি অসাধারণ সব কাজ করে গিয়েছেন। আমিও আইসিসির প্রেসিডেন্ট হয়েছি কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তরটা ওঁরই স্থাপন করে যাওয়া।
প্র: একটা ব্যাপারেই শুধু মিস্টার পওয়ার অনেকের খটকা লেগেছে আর সেটা আজও বিঁধছে।
পওয়ার: সেটা কী!
প্র: নাগপুরে শ্রীনির সঙ্গে আপনার দেখা করতে রাজি হওয়া নানা গুজব আর কল্পনার জন্ম দিয়েছিল। শোনা যাচ্ছিল শ্রীনির মদতে আপনি প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন। শ্রীনি আপনাকে কী বলেছিলেন, একটু বলবেন প্লিজ।
পওয়ার: আরে না না। শ্রীনি নাগপুর উড়ে এসে বলেছিল ও কোনও ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট চায় না। বলেছিল ও নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছে না। এমনকী এ-ও বলে, আমি যদি প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে চাই বা শশাঙ্ক যদি দাঁড়ায়, তা হলে ও সাপোর্ট করতে রাজি আছে।
(লেখার শেষ অংশটা যথেষ্টই অবিশ্বাস্য কিন্তু মরাঠাধিপতির মুখের ওপর তর্ক জুড়িনি।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy