প্রবেশ। আইএফএ-তে জেমস ও কণিকা। শনিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মহিলা রেফারি কণিকা বর্মনের সঙ্গে অশালীন আচরণে অভিযুক্ত এন্ডুরেন্স জেমসকে নিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা আইএফএ-র। তারা যে নাইজিরিয়ান ফুটবলারটিকে শাস্তি দেওয়া নিয়ে চূড়ান্ত দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, সেটা তাদের শনিবারের সিদ্ধান্তের পর আরও পরিষ্কার।
এ দিন বিকেলে লিগ সাব কমিটি সভার পর বিএনআরের ওই ফুটবলার জেমসকে বেকসুর খালাস করা হল। পাশাপাশি আবার তাঁকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতে যাতে তিনি এ রকম আচরণ না করেন। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রেফারি এবং ম্যাচ কমিশনার পুরো ব্যাপারটি অস্বীকার করায় জেমসকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে তাঁকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে যাতে এ রকম আচরণ না করেন।” সচিবের এই মন্তব্যের পর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, জেমস যদি অশালীন আচরণ না করে থাকেন, তা হলে তাঁকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হবে কেন? এই প্রশ্নই তুলেছেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ও। লিগ সাব কমিটির সিদ্ধান্ত শুনে তিনি বললেন, “এ রকম হয় নাকি? আইএফএ-কে আমরা চিঠি দিয়েছি। কী জবাব এসেছে সোমবার দেখব, তার পর যা করার করব।” মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, আইএফএ জেমসকে কোনও শাস্তি না দিলে তারা এফআইআর করবে।
লিগ সাব কমিটির সভায় এ দিন ডাকা হয়েছিল অভিযুক্ত ফুটবলার জেমসকে। তাঁকে খবরের কাগজে প্রকাশিত ছবি দেখানো হয়। জানা গিয়েছে, ফুটবলারটি নাকি বলেন, পেনাল্টির পর বল পেটে লেগেছে দেখাতে গিয়েছিলেন তিনি। তাই-ই মেনে নেন লিগ সাব কমিটির সদস্যরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সে দিন বল লেগেছিল রেল ডিফেন্ডার বরুণ কুণ্ডুর হাতে। তা হলে ‘পেট’-এর গল্প আসছে কোত্থেকে? শুধু তাই নয়, ছবিতে দেখা গিয়েছে, জেমসের দুটো হাতই পেটের নীচে এবং ভঙ্গিটা অশালীন। আরও প্রশ্ন উঠেছে, সারা বিশ্বে রেফারির রিপোর্টে কোনও ঘটনা না থাকলে, বিচারকরা টিভির ভিডিও ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নেন। শাস্তিও দেন। অথচ বাগান-বিএনআর ম্যাচের পুরো খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল। চাইলেই সেটা এ দিন দেখতে পারতেন লিগ সাব কমিটির কর্তারা। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেটা দেখাই হয়নি। নব্বইয়ের দশকের একটি ডার্বি ম্যাচে কিন্তু ভিডিও ক্লিপিংস দেখেই ঢিল ছোড়ার দায়ে অভিযুক্ত তরুণ দে-র শাস্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন আইএফএ সচিব প্রয়াত প্রদ্যোৎ দত্ত। যদিও রেফারি প্রদীপ নাগের রিপোর্টে সে ঘটনার কোনও উল্লেখ ছিল না। প্রদ্যোৎবাবুর মতো কঠোর মনোভাবের কর্তার অভাবে এমনিতেই আইএফএ-র অবস্থা প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। নিয়মিত রেফারিদের গালাগালি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন কোচ-ফুটবলাররা। জেমসও পেয়ে গেলেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার মহমেডান-টালিগঞ্জ অগ্রগামী ম্যাচের বিতর্কের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন সে দিনের রেফারি কণিকা। লিগ সাব কমিটি জেমসের অশালীন আচরণের ছবি দেখিয়ে তাঁকে কোনও প্রশ্ন করেনি। জানতে চায়নি, কেন তাঁর রিপোর্টে এই ঘটনার উল্লেখ নেই। এ দিন আইএফএ-র সভা থেকে বেরোনোর পর কোনও কথা বলতে চাননি কণিকা। প্রায় দৌড়েই বেরিয়ে যান। তবে লিগ সাব কমিটির এক সদস্য বললেন, “জেমসকে শাস্তি দিলে কণিকাকেও শাস্তি দিতে হত। কারণ, কণিকা তার রিপোর্টে এই ঘটনার উল্লেখই করেনি।” আসলে রেফারি সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে নানা কারণে বিরোধে যেতে চাননি উৎপলবাবুরা। অভিযোগ উঠছে, সে জন্যই নাকি বিরোধের পথে না গিয়ে আপসের রাস্তায় হেঁটেছেন উৎপলবাবুরা। এই সুযোগে অশালীন আচরণ করেও ছাড় পেয়ে গেলেন জেমস। শোনা যাচ্ছে, ছাড়া পেয়ে জেমস নাকি মহমেডানে সই করতে পারেন ডুরান্ড এবং আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy