এটা আমার বরাবরের বিশ্বাস ক্রিকেটে ‘মোমেন্টাম’ বলে কিছু হয় না। সাউদাম্পটনে সেটাই প্রমাণ হল। গোটা টেস্টে ও তার এক-এক দিনে কে কেমন খেলে, তার উপরই নির্ভর করে ম্যাচের ফল। লর্ডসে ভারত অসাধারণ খেলল ঠিকই। কিন্তু তৃতীয় টেস্ট রীতিমতো পাঁচ দিন ধরে দাপট দেখিয়ে জিতল ইংল্যান্ড। তাই ছন্দে থাকাটা বোধহয় ক্রিকেটে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়।
টস জেতা যে কতটা জরুরি, তা আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল এই টেস্টে। লর্ডসে প্রথমে ব্যাট করেছিল ধোনিরা, সাউদাম্পটনে কুক। এই দুই টেস্টের ফল দেখেই বোঝা যায়, প্রথম ইনিংসের রানই ম্যাচের দিশা ঠিক করে দিচ্ছে। এই হারের ফলে যারা ভারতীয় দলের নিন্দা শুরু করেছেন, তাঁরা বরং মনে রাখবেন, এই রকম পরিস্থিতিতে ভারতীয় দলের উঠে দাঁড়াতে কিন্তু বেশি সময় লাগে না। দশটা টেস্টের পর অবশেষে জয় পেয়ে ইংল্যান্ড স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত। ভারতও জানে, এ তো আর সেই ২০১১-র ইংল্যান্ড নয় যে, ওদের হারানো যাবে না।
তাই খুব ভাল করে ভেবেটেবে, প্রস্তুতি নিয়ে পরের টেস্টে নামা উচিত ধোনিদের। ভারতের আসল শক্তি ব্যাটিং। তাই ব্যাটিংয়ে প্রথম চারের মধ্যে অন্তত তিন জনকে বুক চিতিয়ে লড়তে হবে। পূজারা ও কোহলি প্রচুর সুনাম নিয়ে ইংল্যান্ড গিয়েছিল। শেষ দুই টেস্টে ওদের নিয়ে সেই ধারণার প্রতি সুবিচার করতে হবে কোহলিদের। ইংরেজদের বোঝাতে হবে, ওঁদের নিয়ে ক্রিকেটমহলের ধারণা বেঠিক নয়। মইন আলিকে ভারতীয়রা যে ভাবে খেলল, তা দেখে একদম খুশি হতে পারিনি। ট্রেন্টব্রিজের মইন সাউদাম্পটনে নিজেকে অনেক উন্নত করে তুলেছে ঠিকই। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানদেরও এ বার ওকে আরও আক্রমণ করা উচিত। মইনের বলে বৈচিত্র নেই। নিখুঁত লেংথে বল করে, এটাই ওর শক্তি। ওকে লাইনচ্যূত করার রাস্তা খুঁজে বার করাই এখন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আসল কাজ। সিরিজে ১৫টা উইকেট নিয়ে থাকতে পারে মইন। কিন্তু মুরলী, ওয়ার্ন, সোয়ানদের সামলেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। তাই এটা খুব একটা কঠিন কাজ বলে মনে হয় না। কয়েকটা আক্রমণাত্মক শট ভারতীয়রা যে নেয়নি, তা নয়। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার, শক্তি মাঝে-মাঝে ক্ষতির কারণও হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য তাই বলে শটগুলোকে আলমারিতে সাজিয়ে রাখারও মানে হয় না। ভারতকে তাদের দল ও কম্বিনেশন নিয়ে প্রচুর ভাবতে হবে। তবে তা ম্যাঞ্চেস্টারের উইকেট দেখার পরই।
ছোটবেলায় ব্যাট হাতে তোলা থেকেই শুনে আসছি, ক্রিকেট সব হিসাব বরাবর করে দেয়। কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কুককে এই টেস্টে নামতে হয়েছে এক বার ভেবে দেখুন। লর্ডসে টেস্ট শেষের পর আথারটনকে ও খুব ভাল একটা কথা বলেছিল। বলেছিল, চাপের মুখে নতিস্বীকার না করে ও লড়াই করে ফিরে আসতে মরিয়া। শেষ পর্যন্ত সেটাই কিন্তু করে দেখাল ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন। সাউদাম্পটনে ও অনেক বেশি প্রত্যয়ী ছিল। ব্যাটিংয়ের টেকনিকে বদল এনে বিপক্ষের মিডিয়াম পেসারদের বিরুদ্ধে আরও এগিয়ে আক্রমণ করার পন্থা অবলম্বন করেছে। তবে এত রান ও সাফল্য যার, তার নিজেকে ফিরিয়ে আনতে এত সময় লাগল কেন, এই ভেবে কিছুটা হলেও অবাক হয়েছি। যখন খেলতাম, তখন বড়-বড় ব্যাটসম্যানদের দেখেছি টেস্ট ম্যাচের দিন সকালে তারা নিজেদের ব্যাটিং টেকনিক ঝালিয়ে নিত। কিছু অ্যাডজাস্ট করার দরকার হলে করে নিত। অ্যালিস্টার কুকেরও সেই অভ্যাস করে নেওয়া উচিত।
জিমি অ্যান্ডারসনকে আরও এক বার অসাধারণ লাগল। আমার দেখা ওর সেরা বোলিং এটাই। একশো টেস্টের কাছাকাছি রয়েছে ও। এক জন পেস বোলারের কাছে এর চেয়ে বড় ব্যাপার আর কী হতে পারে? আমার ধারণা, অ্যান্ডারসন এখন ওর ফর্মের চুড়োয় রয়েছে। শুক্রবারের শুনানির ফল শুনে ইংল্যান্ড শিবির নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। সিরিজ ১-১ থাকা অবস্থায় অ্যান্ডারসনের মতো দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পেসারকে বাইরে রেখে দল নামাতে হলে, সেটা ইংল্যান্ডের পক্ষে মোটেই ভাল হত না।
র্যাঙ্কিংয়ে নামলেন কোহলিরা
সংবাদ সংস্থা • দুবাই
আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে দু’ধাপ নেমে দশ নম্বরে চলে এলেন চেতেশ্বর পূজারা। তিনিই ভারতীয়দের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে এগিয়ে। বিরাট কোহলি এক ধাপ নেমে এখন পনেরো নম্বরে। তবে ন’ধাপ এগিয়ে অজিঙ্ক রাহানে ২৬ নম্বরে উঠে এসেছেন। বোলারদের মধ্যে অবশ্য তিন এবং দু’ধাপ এগিয়ে রবীন্দ্র জাডেজা (২৫) এবং ভুবনেশ্বর কুমার (৩২)। এ দিকে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ এবং একটি টি-টোয়েন্টির দল নির্বাচন হবে মুম্বইয়ে ৭ অগস্ট। তার দু’দিন আগে বোর্ডের মার্কেটিং কমিটির বৈঠকও হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy