Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নেইমার চলে যাওয়ায় ব্রাজিল নয়, ফুটবলেরও ক্ষতি

নেইমারের বিশ্বকাপ থেকে এ ভাবে বিদায় নেওয়াটা যে কোনও ফুটবলপ্রেমীর মতোই আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। বল প্লেয়ার যে কোনও টুর্নামেন্ট থেকে চলে গেলেই খারাপ লাগে। তা সে যে-ই হোক। বেচারা নেইমার। একেবারে অনভিপ্রেত একটা ধাক্কা ওর স্বপ্নের উড়ানকে নিয়ে গেল ঘন অন্ধকারে। কবে ও মাঠে ফিরবে কে জানে। ফিরবে হয়তো তিন-চার মাস পরে। কিন্তু এ বারের কাপ জয়ের স্বপ্নটা তো শেষ হয়ে গেল ওর। সেই সঙ্গে তীব্র সমস্যায় ফেলে দিল ব্রাজিলকে। যে ক্ষত ঢাকা দেওয়ার নয়।

সাও পাওলোর পথে

সাও পাওলোর পথে

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

নেইমারের বিশ্বকাপ থেকে এ ভাবে বিদায় নেওয়াটা যে কোনও ফুটবলপ্রেমীর মতোই আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। বল প্লেয়ার যে কোনও টুর্নামেন্ট থেকে চলে গেলেই খারাপ লাগে। তা সে যে-ই হোক। বেচারা নেইমার। একেবারে অনভিপ্রেত একটা ধাক্কা ওর স্বপ্নের উড়ানকে নিয়ে গেল ঘন অন্ধকারে। কবে ও মাঠে ফিরবে কে জানে। ফিরবে হয়তো তিন-চার মাস পরে। কিন্তু এ বারের কাপ জয়ের স্বপ্নটা তো শেষ হয়ে গেল ওর। সেই সঙ্গে তীব্র সমস্যায় ফেলে দিল ব্রাজিলকে। যে ক্ষত ঢাকা দেওয়ার নয়।

শুধু ব্রাজিলকে কেন, গত চার বছর ধরে আমরা তো নেইমার-মেসি-রবেনদের দেখার জন্যই মুখিয়ে ছিলাম। পেলে, গ্যারিঞ্চা, মারাদোনা, জিদান, মেসি, নেইমারএ রকম তারকাদের সেরা ফর্মে দেখাটাই তো বিশ্বকাপের প্রধান আকর্ষণ। নেইমার না থাকায় ব্রাজিল বিশ্বকাপের জৌলুস মনে হচ্ছে অনেকটাই কমে গেল।

অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সব সময়ই বড় ক্ষতি করে দেয়। সামনে থেকে কেউ এসে কড়া ট্যাকল করবে, ঘাড়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, ধাক্কা দেবেফুটবল মাঠে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। এ সব এড়াতে মানসিক ভাবে তৈরি থাকে সবাই। সময়ও পায়। কিন্তু পিছন দিক থেকে যদি কেউ ঘাড়ে উঠে পড়ে, সেটার জন্য তো কেউ মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারে না। নেইমার যখন চোখের কোণে জল নিয়ে মাঠ ছাড়ল তখন মনে হচ্ছিল, চোটটা গুরুতর নয়। কিন্তু ম্যাচ শেষ হওয়ার পর রাতে যখন জানতে পারলাম ছেলেটার বিশ্বকাপটাই শেষ হয়ে গেল, তখন মনে হল, বাজির দরে সেমিফাইনালে জার্মানি এগিয়ে গেল সত্তর ভাগ।

নেইমার ব্রাজিলের চল্লিশ ভাগ অংশ জুড়ে থেকেছে প্রতিটি ম্যাচে। চার-চারটে গোলই শুধু নয়, পাসার, শু্যটার, সেট পিসনেইমারের পরিবর্ত কোথায় এই ব্রাজিলে? তা ছাড়া এ রকম একজন ফুটবলার চলে গেলে টিমের আত্মবিশ্বাসটাই তো তলানিতে চলে যায়। পিছিয়ে পড়ে দল।

থিয়াগো সিলভা কার্ড দেখে বাইরে চলে যাওয়ায় হয়তো রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে দাতে আসবে টিমে। দু’জনের মধ্যে পার্থক্য কিছু নেই। চালিয়ে দেবে হয়তো। কিন্তু নেইমারের জায়গায়? যা শুনলাম, উইলিয়ান, বার্নার্ড, অস্কারদের দিয়ে আক্রমণভাগ সাজানোর কথা ভাবছেন স্কোলারি। ওর হাতে তো আর তেমন অস্ত্র নেই এরা ছাড়া। কিন্তু তাতে নেইমার না থাকার সমস্যা ঢাকা যাবে? মানছি, ব্রাজিল জাতীয় দলে যারা খেলছে তারা সবাই ভাল। সফল। কিন্তু নেইমারের পরিপূরক কি? ফ্লুকে একটা গোল করে অঘটনও হয়তো ঘটিয়ে দিতে পারে ওরা। ফুটবল মাঠে সবই সম্ভব। কিন্তু মাঠে নামার আগে অন্তত নেইমার আর অধিনায়ক সিলভাকে ছাড়া মনে হচ্ছে, ব্রাজিল নিঃসন্দেহে অনেকটা পিছিয়ে নামবে। এ সব ক্ষেত্রে যে কোনও কোচ যা করবেন, তাই নিশ্চয়ই করবেন স্কোলারি। ফুটবলারদের টিম মিটিং-এ বলবেন, “নেইমার নেই তো কী হয়েছে। এ রকম ঘটনা তো হতেই পারে। তোমরা কেন আছ? তোমরাই হারাতে পারবে জার্মানিকে।” এতে কতটা মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ হবে হাল্ক, ফ্রেড, অস্কার, জো-রা---তার উপরই নির্ভর করছে সব কিছু। আমি বলতে চাইছি, ব্রাজিল-জার্মানি সেমিফাইনালের লড়াই হবে অন্য রকম। স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্সকে ছাপিয়ে যাবে মাইন্ড গেম। অর্থাৎ মানসিক লড়াই।


শোকাতুর ব্রুনা

জার্মানি নেইমারকে সামলাতে হবে না বলে স্বস্তিতে থাকবে। বোয়াতেং-লামদের উপর চাপ না থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই জোয়াকিম লো চাইবেন মুলার-ওজিলরা তীব্র আক্রমণের ঝড় তুলুক। তেমনই নেইমার-সিলভাহীন দলকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে স্কোলারি চাইবেন প্রতি-আক্রমণে গোল তুলে নিতে। ড্র-য়ের দিকে ম্যাচ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন স্কোলারি। তার পর পেনাল্টি শু্যট আউটে যা হয় দেখা যাবে! এটা ছাড়া বিশ্বকাপ জয়ী কোচের হাতে আর কোনও অস্ত্র নেই যে! এ রকম ধাক্কা সামলাতে আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবলকেই যে কোনও কোচ আঁকড়ে ধরেন।

হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে কোচেরা ভাবনাচিন্তা করবেন এটা স্বাভাবিক। একে অন্যকে কী ভাবে শেষ করবেন তার অঙ্ক কষবেন। তা সত্ত্বেও বলছি নেইমার থাকলে এই ম্যাচটাকে আমি পঞ্চাশ-পঞ্চাশ বলতাম। কিন্তু এখন বলছি না। এখন বলছি, ম্যাচটা মাঠে নামার আগেই মুলারদের দিকে ঝুঁকে সত্তর ভাগ। জার্মানরা কখনও কে উল্টো দিকে আছে, কে নেই তা নিয়ে ভাবে না। তা সে বিপক্ষে যেই নামুক-- নেইমার হোক বা মেসি। ধুন্ধুমার যুদ্ধে জোয়াকিম লো যাকে সামনে পাবেন তাকেই যে ভাবে হোক গুঁড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করবে। যে ভাবে ফ্রান্স ম্যাচে জার্মানির কোচকে স্ট্র্যাটেজি বদল করে সফল হতে দেখলাম, তার পর ওদের নিয়ে বাজি এখন ধরা যেতেই পারে। অনেকে বলছেন, নেইমার না থাকায় জার্মানি অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে না ডোবে! আমি সেটা মানছি না। জার্মানরা কখনও যে তৃপ্ত হয় না।

জার্মানির রাস্তা মসৃণ দেখছি না
নেইমার নেই। নেই থিয়াগো সিলভা। তা সত্ত্বেও সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে
হারানো সহজ হবে না জার্মানির। কেন? বিশ্লেষণে সুব্রত ভট্টাচার্য

এক) ব্রাজিলের মতো জার্মানিরও বল হোল্ড করে খেলার তেমন লোক নেই। ওজিল, মুলাররা সেই কাজটা করতে পারেনি এখনও।

দুই) নিজেদের মাঠে খেলা। তুমুল দর্শক সমর্থন। এটা ব্রাজিলকে উদ্বুদ্ধ করবে। ‘তোমরাই পারবে’ বলে কোচ স্কোলারি নিশ্চয়ই টিম মিটিংয়ে ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করবেন।

তিন) বাষট্টিতে পেলে ছাড়াই ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বিশ্বকাপে। নেইমার না থাকায় চাপে থাকবে স্কোলারির দলও। কিন্তু মনে হয় ভেঙে পড়বে না। বরং বাষট্টির মতোই আরও সংগঠিত হয়ে টিমগেম খেলবে।

চার) জার্মানির মূল শক্তি গতি। সেটা ব্রাজিল নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অনেকটা সমস্যা মুক্ত হয়ে যাবে স্কোলারির টিম। সেটা নিশ্চয়ই বিশ্বকাপজয়ী কোচের অঙ্কে থাকবে।

পাঁচ) নেইমার না থাকায় হাল্ক, ফ্রেড, অস্কাররা বাড়তি উদ্যম, দায়িত্ব নিয়ে খেলবে। নেইমারের বদলে স্কোলারি যাকেই খেলাবেন, সে-ই নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে।

ছয়) নেইমার-থিয়াগো সিলভার মতো ফুটবলার না থাকায় আত্মতুষ্টি আসতে পারে জার্মানির। সেটা হলে ব্রাজিলেরই সুবিধা। আর ম্যাচ টাইব্রেকারে গেলে তো যে কেউ জিততে পারে।

নেইমার, আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে বন্ধু।
লিওনেল মেসি

ভাই, আমি তোমার পাশে আছি।
মারিও বালোতেলি

নিজেকে শক্ত করো ভাই। আমরা তোমার সঙ্গে আছি। আমরা তোমাকে ভালবাসি।
উইলিয়ান দ্য সিলভা

ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তর সইছে না। তবে নেইমারের জন্য খারাপ লাগছে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো।
লুকাস পোডলস্কি

আমার পরিবার ও এই দুনিয়ার বহু মানুষ তোমার জন্য প্রার্থনা করছে।
কাকা

নেইমার, আমি খুব অখুশি। দ্রুত সেরে ওঠো।
মেসুত ওজিল

এই বিশ্বকাপে হৃদয় দিয়ে খেলার আর একটা কারণ পাওয়া গেল। নেইমার, কথা দিচ্ছি, তোমার জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে প্রাণ দিয়ে দেব। তুমি আমাদের দলের আত্মা ছিলে ও থাকবেও। এখন পুরো ব্রাজিল দল তোমার জন্য খেলবে।
ফ্রেড

আধুনিক ফুটবলের এই বিস্ময়ের জন্য উষ্ণ আলিঙ্গন পাঠালাম।
রবের্তো কার্লোস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE