ক্রিকেট আইপিএলের নিলামের পর গৌতম গম্ভীরের টিমকে দেখে মনে হয়েছিল দিশাহীন। সবাই ধরে নিয়েছিলেন এই টিম নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দূরে থাক, প্লে-অফে ওঠাও দুষ্কর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব হিসাব উলটে দিয়ে ফেভারিট চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, পঞ্জাবকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নাইট রাইডার্স-ই।
আটলেটিকো দ্য কলকাতা-র ক্ষেত্রেও কি তাই হবে?
সুপার লিগ বা আইএসএলের ভারতীয় ফুটবলার কেনা-বেচার সাত রাউন্ডের পর কেরল, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর পাশে কলকাতাকে রুগ্ন দেখাচ্ছে। মেহতাব হোসেন, সুব্রত পাল, লেনিদের না পেয়ে চোটগ্রস্ত, বহু দিন না খেলা ফুটবলারদের নিতেও বাধ্য হয়েছে কলকাতা। তবে বুধবার ভারতীয় ফুটবলারদের বাকি সাত রাউন্ড নির্বাচনের পর, স্পেনের লুইস গার্সিয়া-সহ সাত বিদেশির যোগদানের পর কলকাতার অবস্থা কী দাঁড়াবে এখনই বলা সম্ভব নয়।
কিন্তু অন্তত প্রথম দিন কলকাতার ফুটবলার নির্বাচন নিয়ে কর্তাদের ভাবনা দেখে মুম্বইয়ের হোটেলে উঠে গিয়েছে নানা প্রশ্ন।
কেউ বলছেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের কাছে হেরে গিয়েছেন হোসে ব্যারেটো।
না কি লটারিতে পাঁচ নম্বর টেবিলে বসার মাশুল-ই দিতে হল আটলেটিকো দ্য কলকাতাকে?
হোটেল ছেড়ে যাওয়ার সময় বিস্মিত ভাইচুং ভুটিয়াও মন্তব্য করে গেলেন, “কলকাতা টিমে মেহতাব-নবি-সুব্রত পাল নেই! এটায় কিন্তু অবাকই হচ্ছি। আমিও চাইছিলাম কলকাতার টিম ভাল হোক। কিন্তু...”
ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে সবার আগে মাঠে নেমেছিল কলকাতা। লা লিগা চ্যাম্পিয়ন এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালিস্ট আটলেটিকো মাদ্রিদের মতো স্প্যানিশ হেভিওয়েট ক্লাবের সঙ্গে প্রথম গাঁটছড়া বাঁধার পাশাপাশি আইকন এবং এক বিদেশি ফুটবলার নেওয়া, লোগো, টিম জার্সি উদ্বোধন সবার আগে করেছে কলকাতার টিমই। কিন্তু যেখানে প্রথম এগারোয় ছয় জন বিদেশি, পাঁচ জন ভারতীয় রাখা টুর্নামেন্টে বাধ্যতামূলক, সেখানে দেশের ফুটবলার বাছার ক্ষেত্রে এ দিন ব্যর্থ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হোসে ব্যারেটোর দল।
সেটা কেমন? দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অর্ণব মণ্ডল, ডেঞ্জিল ফ্র্যাঙ্কো-কে কেনা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু প্রায় দু’বছর মাঠের বাইরে থাকা, চোটগ্রস্ত মহম্মদ রফিক, দীর্ঘদিন বসে থাকা লেফট ব্যাক বিশ্বজিৎ সাহাকে নেওয়ার মানে কী? বহু দিন ফর্মের ধারেকাছে না থাকা, মহমেডানের বাতিল রাকেশ মাসিকেও কেন বাছা হল তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। চোটের জন্য গত মরসুমে মাত্র চার মাস খেলা মহম্মদ রফি-ও জায়গা পেয়ে গেলেন কলকাতায়! কেভিন লোবোর ধারাবাহিকতা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে তাঁর ক্লাব ইস্টবেঙ্গলেই। টেবিলে বসে থাকা হোসে ব্যারেটো সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, “আমরা যাদের চেয়েছি তাদের অনেককে পেয়েছি, আবার অনেককে পাইনি। টিমে ভাল স্ট্রাইকার দরকার। দেখি কাল কী হয়।” আর কলকাতার প্রধান কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস বলছেন, “আমরা খুশি। এটা একটা ব্যালান্সড দল। সঙ্গে কয়েকজন অভিজ্ঞ ফুটবলারও পেয়েছি।”
বাস্তব ঘটনা হল, পাঁচ নম্বর টেবিলে বসার জন্য শুরুতেই ধাক্কা খায় ব্যারেটোদের ‘চাওয়া’। ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে দফায় দফায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে টিম নিয়ে আলোচনা করেছিলেন ব্যারেটো-সহ এ দিন টেবিলে বসে থাকা কলকাতার কর্তারা। কুড়ি জনের একটা তালিকা ছিল তাঁদের টেবিলে। যেখানে মেহতাব হোসেন, লেনি রডরিগেস, ইসফাক আহমেদ, ধনচন্দ্রের নাম ছিল। কিন্তু পুণে প্রথম রাউন্ডে লেনিকে এবং এর পরই কেরল দ্রুত মেহতাবকে তুলে নেওয়ায় সব অঙ্ক ওলট-পালট হয়ে যায় কলকাতার। শেষ পর্যন্ত লোবোকে বাছে তারা।
কলকাতার টেবিলে বসা এক কর্তা প্রদীপ জ্যোতি অগ্রবাল বলছিলেন, “পাঁচ নম্বর টেবিলে থাকায় টার্গেটে থাকা অন্তত দু’জন ফুটবলারকে আমরা কিনতে পারিনি। কাল আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।” অন্য এক কর্তা বললেন, “শৌভিক বিশ্বাস আর দীপক মণ্ডল হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় বিশ্বজিৎ সাহা ছাড়া তেমন আর কাউকে পাইনি।”
প্রথম সাত রাউন্ডে তেমন কোনও তারকাকে কিনতে না পারায় বুধবার বাকি সাত রাউন্ডে চমক দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা। গোলকিপার সন্দীপ নন্দী-শুভাশিস রায়চৌধুরী-অরিন্দম ভট্টাচার্যের মতো কোনও কিপার, সঞ্জু প্রধানের মতো মিডিও এবং মননদীপ সিংহের মতো কোনও স্ট্রাইকার নেওয়ার কথা ঘুরছে কলকাতা-কর্তাদের মাথায়।
প্রথমে ঠিক ছিল ইচ্ছে মতো বিদেশি ফুটবলার নিতে পারবে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। প্লেয়ার্স পুল থেকে না নিলেও চলবে। কলকাতার কর্তাদের ইচ্ছে ছিল আটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে আইকন ও সাত ফুটবলার নেবেন। কিন্তু এ দিন জানিয়ে দেওয়া হল, আইকন-সহ আট বিদেশির মধ্যে কেবল দু’জনকে ইচ্ছে মতো নিতে পারবেন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। বাকি ছয় জনকে নিতে হবে ২০ অগস্টের আন্তর্জাতিক পুল থেকে। এতেও সমস্যায় কলকাতা। ইতিমধ্যেই দু’জনকে নিয়ে নিয়েছে তারা। বাকি ছয় জন কে হবেন তা এখনই বোঝা সম্ভব নয়। ফলে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কলকাতাকে।
তার আগে বুধবারের পুল থেকে হোসে ব্যারেটোরা কোন সাত ভারতীয় ফুটবলারকে তোলেন তা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
মর্গ্যানের মগজাস্ত্র, টাকার থলি নিয়ে বসে থাকা মুম্বই এবং নিজেদের পাঁচ নম্বর টেবিল পাওয়া যে গভীর সমস্যায় ফেলে দিয়েছে কলকাতাকে!
গোল টেবিলে যুযুধান। কলকাতার ব্যারেটো, কেরলের মর্গ্যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy