আইনত অপরাধ হলেও গোয়াতে ফুটবল নিয়ে বেটিং কুটিরশিল্পের মতো! বাড়ির বউ-মেয়েও বেটিং করে। আর সামনেই ক্রিসমাস ও নিউইয়ার্স ডে-র হুল্লোড়ের প্রস্তুতির মধ্যে গোয়ানদের আইএসএল-জ্বরে জুয়াড়িদের ব্যবসা যেন আরও ফুলেফেঁপে উঠছে! জুয়ারি নদীর দু’পারের জুয়াড়িদের বিচারে আটলেটিকো দে কলকাতা চলছে তিন নম্বরে। এফসি গোয়া (৫-১০) আর কেরল ব্লাস্টার্সের (৩-১০) পরে হাবাসের টিম (২-১০)।
আইএসএল শুরুর আগে, এমনকী প্রথম পর্বের পরেও যাদের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বিপজ্জনক দল বলা হচ্ছিল, সেই আটলেটিকো দে কলকাতাকে সাধারণ মানুষ এখন এই চোখে দেখছেন কেন? ডাবোলিম বিমানবন্দর থেকে যে ট্যাক্সিচালক মারগাওয়ের হোটেলে পৌঁছে দিলেন, তিনিও তিনশো টাকার বাজি ধরেছেন এফসি গোয়ার উপর। “কলকাতা টিমটা ভাল। কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই,” ড্রাইভের ফাঁকেই বলছিলেন তিনি।
কট্টর কলকাতা সমর্থক হয়তো এ সব শুনে বলে উঠবে, কে ধারাবাহিক আর কে ধরাছোঁয়ার বাইরে, সেটা কাল মাঠেই দেখা যাবে! তবে গোয়ার ট্যাক্সিচালক কি খুব একটা ভুল বলেছেন? সেই যে গত মাসের ২১ তারিখ কোচিতে রেফারির ভুলে গার্সিয়ার গোল বাতিল এবং কেরল ব্লাস্টার্সের পেদ্রোর গোলে আটলেটিকোর গ্রাফ নিম্নমুখী হওয়া শুরু, এখনও পর্যন্ত তা ওঠার লক্ষণ নেই। কোনওক্রমে সেমিফাইনালের টিকিট হাতে পেলেও বিপক্ষের কাছে নামটা বদলে আগের ‘আতঙ্ক দে কলকাতা’ থেকে এখন ‘আটলেটিকো ড্র কলকাতা’ হয়ে গিয়েছে! হয়তো সে জন্যই গোয়ার ব্রাজিলিয়ান কোচ প্রবাদপ্রতিম জিকো বলে দিলেন, “আলাদা করে আটলেটিকোর কাউকে ভয় পাওয়ার নেই। টিমটাকে একটু দেখে নিয়ে খেলতে হবে।”
কেন, ফিকরু তেফেরা? প্রশ্নটা যেন শুনেও না শোনার ভান করলেন হোয়াইট পেলে। বরং তাঁর সহকারী কোচ গ্যাব্রিয়েল মিগুয়েলের পাল্টা প্রশ্ন, “আপনাদের গার্সিয়া কেমন আছে? কাল শুরু থেকেই খেলবে?” বোঝাই যাচ্ছে, গোয়ার কোচিং টিম সঠিক জায়গাটা ধরার চেষ্টা করছে! কেননা, ফিকরুর খেলা নিয়ে তো খোদ আটলেটিকোর অন্দরেই ধোঁয়াশা। আজ দুপুরে টুর্নামেন্টের বাইরে চলে যাওয়া ডেঞ্জিল ফ্র্যাঙ্কো আর সহকারী কোচ হোসে ব্যারেটোর সঙ্গে ফিকরু একই বিমানে গোয়া এলেন বটে। তবে কাল ফতোরদা স্টেডিয়ামে তাঁকে নামতে দেখা যাবে কি না, তা অনিশ্চিত। কোচ হাবাসের দাবি, “ফিকরু পুরো ফিট নয়। এই ম্যাচে ওকে দলে রাখিনি। তা ছাড়া ও তো দলের সঙ্গে আসেনি!”
আটলেটিকো কোচের চোখমুখে তখন প্রবল বিরক্তি। দেখে মনে হতেই পারে, তিনি বলছেন এক, বোঝাতে চাইছেন আর এক! তার উপর কলকাতা টিম ম্যানেজমেন্টের যা মনোভাব, তাতে ফিকরু-রহস্য যেন আরও জটিল এই মুহূর্তে। কোচ যখন অনড় ইথিওপিয়ান স্ট্রাইকারকে নিয়ে, তখন রাতে গোপনে ফিকরুর এমআরআই করাতে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটলেন কয়েক জন আটলেটিকো কর্তা (সত্যিই চোট কতটা নিশ্চিত হতে)। যা শুনে টিম হোটেলে যাওয়ার আগে জিকোরও কটাক্ষ, “ফিকরু খুব বড় শিল্পী।”
তবে ফিকরু নিয়ে টানাপড়েনে চাপে কলকাতাই! সে অর্ণব-বোরহাদের বহিরঙ্গ যেমনই দেখাক না কেন! তাই আইএসএল ফাইনালে উঠতে এফসি গোয়া মিরোস্লাভ স্লেপিচকার উপর যতটা না নির্ভরশীল, তার চেয়েও এখন অনেক বেশি গার্সিয়ার দিকে তাকিয়ে কলকাতা। স্লেপিচকার দোসর আবার এডগার মার্সেলেনো। মাঠে নামার জন্য যিনি নাকি ছটফট করছেন।
সেখানে কলকাতা? একেই স্ট্রাইকার-সমস্যায় নাজেহাল। তার উপর ফিকরু-হাবাস মনোমালিন্য যদি না থামে, তা হলে বুধবারের মরণবাঁচন যুদ্ধে একা স্ট্রাইকার দেশি রফি! যদিও এ সবের মধ্যেই আশার আলো হোফ্রে আর পরিসংখ্যান। মঙ্গলবার পুরোদমে প্র্যাকটিস করলেন স্প্যানিশ মিডিও। যদি আজ হোফ্রে-গার্সিয়া জুটি খেলে, তা হলে জিকোদের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে অপরাজিত থাকার যে রেকর্ড, সেটা অটুট থাকার সম্ভাবনা হয়তো থাকবে।
টুর্নামেন্টের নিয়মানুযায়ী ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে গার্সিয়ারা আজ স্টেডিয়ামে অনুশীলন করলেও নিজের টিমকে বিকেলে স্টেডিয়াম থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে তিলক ময়দানে অনুশীলন করালেন গোয়া কোচ জিকো। তবে ট্রেভর মর্গ্যানের মতো কলকাতার সাংবাদিকদের এড়াতে না চাওয়ায় সেই অনুশীলন ক্লোজ্ড ডোর ছিল না। জিকোর প্র্যাকটিস দেখে মনে হবে, কলকাতাকে ত্রিশূলে বিদ্ধ করতে চাইছেন। স্লেপিচকা-সান্তোস-গ্রেগরি, এই ত্রিশূলের আঘাত কলকাতা কতক্ষণ সহ্য করতে পারে, সেটা দেখার। প্র্যাকটিস শেষে জিকো বলেও গেলেন, “কলকাতাকে সঠিক সময়ে হারাব বলেই আগে হারাইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy