Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিখরের ভুলে ভুগছে ভারতীয় ব্যাটিং

লর্ডস উইকেটে বলের নড়াচড়া দেখে যারা উদ্বিগ্ন তাদের বলি, লর্ডসে এই রকম উইকেটই স্বাভাবিক। ইংল্যান্ডের উইকেটে প্রতি সেশনে ব্যাটসম্যানরা একশোর উপর রান তুলবে, এমন প্রত্যাশা করাই উচিত না। ট্রেন্টব্রিজে যা হয়ে গিয়েছে, যাক। এই সিরিজে আর এমন হবে বলে মনে হয় না। যা অস্বাভাবিক, তা হল ওখানকার গরম। কয়েক দিন আগেই ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছি বলে আরও ভাল জানি ব্যাপারটা।

দীপ দাশগুপ্ত
ফুটওয়ার্ক-ই সমস্যা শিখরের। শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

লর্ডস উইকেটে বলের নড়াচড়া দেখে যারা উদ্বিগ্ন তাদের বলি, লর্ডসে এই রকম উইকেটই স্বাভাবিক। ইংল্যান্ডের উইকেটে প্রতি সেশনে ব্যাটসম্যানরা একশোর উপর রান তুলবে, এমন প্রত্যাশা করাই উচিত না। ট্রেন্টব্রিজে যা হয়ে গিয়েছে, যাক। এই সিরিজে আর এমন হবে বলে মনে হয় না। যা অস্বাভাবিক, তা হল ওখানকার গরম। কয়েক দিন আগেই ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছি বলে আরও ভাল জানি ব্যাপারটা।

শুক্রবার লর্ডসে চা বিরতির পর যখন খেলা চলছে, তখন ইন্টারনেটে দেখলাম ওখানকার তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কলকাতায় এটা বড় কিছু নয়। তবে ইংল্যান্ডের গরমটা অন্য রকম। ২০-২৫ ডিগ্রিতেই রোদ বেশ কড়া লাগে। আর এখন তো তা অসহ্য হয়ে ওঠার মতোই। তাই লর্ডস উইকেটে স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটাও নেই। তবু উইকেটের ঘাস ও তার নীচে যেটুকু আর্দ্রতা রয়েছে, তা বোলারদের মুভমেন্ট পেতে সাহায্য করছে। তাই তো শুক্রবার ভুবনেশ্বর কুমার অত ভাল বল করল। প্রথম স্পেলে ওকে টানা দশ ওভার বল না করিয়ে মাঝখানে দুটো ওভার স্টুয়ার্ট বিনিকে দিলে হয়তো ছবিটা অন্য রকম হত। ফের সেই প্রশ্নটা আসছেই। বিনিকে কী জন্য দলে রাখা?

এ রকম পিচে ভাল ব্যাট করতে হলে যে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতা দরকার, সেটা টি-টোয়েন্টি যুগে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বড় একটা দেখা যায় না। স্ট্রোক খেলাটা যেমন একটা শিল্প, তেমন না খেলার বল ছেড়ে, রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করে উইকেটে পড়ে থাকাটাও তো শিল্প। এটা যে যত ভাল রপ্ত করতে পারবে, ততই সে যোগ্য টেস্ট ব্যাটসম্যান হয়ে উঠবে।

শুক্রবার গ্যারি ব্যালান্স (১১০) যেমন ব্যাট করল, আগের দিন তেমনই করেছে অজিঙ্ক রাহানে। এই ধরনের ব্যাটসম্যানরাই টেস্ট ক্রিকেটে বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। উইকেটে পড়ে থাকার প্রবণতা, অসীম ধৈর্য, নিখুঁত ভাবে স্ট্রোক নিয়ে, বল ছেড়ে, ডিফেন্স করে লম্বা ইনিংস খেলার গুণ ওর যথেষ্ট রয়েছে। রাহুল দ্রাবিড় যেমন খুব ভাল করে জানত, কোন বলে কী জবাব দেওয়া উচিত। একশো শতাংশ নিশ্চিত না হয়ে যে স্ট্রোক খেলার কোনও প্রশ্নই ওঠে না, এটা যেমন ওর মাথায় গাঁথা থাকত, রাহানেও তেমনই।

ধোনির দলে এ রকমই আরও একজন ব্যাটসম্যান আছে, যাকে আর এক দ্রাবিড় বলা যায়। সে চেতেশ্বর পূজারা। আগের দিন স্টোকসের যে বলটা ওর স্টাম্প ছিটকে দিল, সেই বলের পরিণতি এ ছাড়া আর কিছু হয়ই না। ট্রেন্টব্রিজে দ্বিতীয় ইনিংসে কিন্তু পূজারা একটা ৫৫ করেছে। আমার মনে হয়, দু’জনই ইংল্যান্ডের পরিবেশে ভাল ব্যাট করবে। শুধু ঠিকঠাক ব্যাটিং অর্ডারে নামাতে হবে।

রাহানে যেখানে ক্রিকেটটা খেলে বড় হয়েছে, সেই ওয়াংখেড়ের উইকেটে সকালে বল যথেষ্ট মুভ করে। এমন উইকেটে ও বছরের পর বছর ওপেন করেছে বা তিন নম্বরে নেমেছে। নিখুঁত টেকনিক ও অসীম ধৈর্য দিয়ে নতুন বল সামলানোর বিদ্যেটা ও ভালই জানে। এই জন্যই ওকে তিন নম্বরে নামানো উচিত। বিশেষ করে যখন ওপেনাররা ভরসা জোগাতে পারছে না। পূজারার ক্রিকেটশিক্ষা রাজকোটে। যেখানকার উইকেট এতই পাটা যে, হাইওয়ের সঙ্গে তার তুলনা হয়ে থাকে। তাই ওর চার নম্বরে নামাই ভাল। কোহলি-ধোনিরা মূলত স্ট্রোকপ্লেয়ার। ওদের মাটি কামড়ে পড়ে থাকার প্রবণতা বা ধৈর্য রাহানে-পূজারার মতো নয়। তাই ওপেনাররা তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়ার পর প্রায় নতুন বলের সামনেই পড়ছে কোহলি, যেটা ওর দুর্বল জায়গা। এই কোহলিকেই ৩০-৪০ ওভার পুরনো বলের সামনে অন্য চেহারায় দেখবেন। ধোনি সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়।

একটা পরিসংখ্যান পেলাম, ২০১২-র পর বিদেশে টেস্টে ভারতীয় ওপেনাররা মাত্র একটা ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়েছে। আসল সমস্যাটা এই ওপেনিং জুটিতেই। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে শিখর ধবনে। ব্যাটসম্যানের একটা ট্রিগার মুভমেন্ট থাকে। এটা বোলার বল রিলিজ করার আগেই ব্যাটসম্যানকে করতে হয়। রিলিজ হওয়ার পর তাকে হয় ফ্রন্টফুটে, নয় ব্যাকফুটে যেতে হয়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ট্রিগার মুভমেন্ট ছিল ব্যাক অন অ্যাক্রস। শিখরের ফ্রন্ট প্রেস। শিখরকে ভাল করে লক্ষ্য করে দেখছি, ওর ট্রিগার মুভমেন্ট হচ্ছে বল রিলিজের পর। ফলে ওকে একসঙ্গে দু’টো মুভমেন্ট করতে হচ্ছে। যে জন্য নিজেকে সঠিক পজিশনে আনার জন্য কম সময় পাচ্ছে ও।

ওপেনারদের কাজ শুধু ইনিংসের ভিত গড়া নয়, মিডল অর্ডার যাতে নতুন বলের সামনে পড়ে না যায়, তার দায়িত্ব নেওয়াও। কিন্তু শিখরের ভুলের জন্যই পুরো ব্যাটিং লাইন আপ চাপে পড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা নেটে সহজেই শুধরে নেওয়া যায়। কেন ওকে কেউ সমস্যাটা ধরিয়ে দিচ্ছে না জানি না। তবে এর সমাধান হলে শুধু ওর নয়, লাভ হবে গোটা দলের।

ভুবনেশ্বরের চার উইকেট

সংবাদ সংস্থা • লন্ডন

কুককে ফেরানোর অভিনন্দন। ছবি: এপি

লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনটা অজিঙ্ক রাহানের হলে দ্বিতীয় দিনটা হয়ে থাকল ভুবনেশ্বর কুমারের। প্রচণ্ড আর্দ্রতাকে কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারকে একে একে ফেরত পাঠিয়ে দিল ভুবির সুইং বোলিং। দিনের শেষে তাঁর বোলিং হিসেব ২৩-৯-৪৬-৪। আর ইংল্যান্ড আপাতত ২১৯-৬, ভারতের প্রথম ইনিংসের স্কোর থেকে ৭৬ রান পিছিয়ে। ক্রিজে আছেন ম্যাট প্রায়র (২ ব্যাটিং) এবং লিয়াম প্লাঙ্কেট (৪ ব্যাটিং)। ভুবনেশ্বর ছাড়া ভারতীয় বোলারদের মধ্যে উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র জাডেজা (১-৪১) এবং মুরলী বিজয় (১-১২)।

এ দিন ইংরেজ প্রতিরোধ বলতে ছিল শুধু গ্যারি ব্যালান্সের সেঞ্চুরি (১১০)। তার আগে চা-বিরতির মধ্যে ১২৫-৪ হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। চার টেস্টে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার সেঞ্চুরি করলেন চব্বিশ বছরের বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। এই মাঠেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন ব্যালান্স। এ দিন অবশ্য ৩২ রানে তাঁর ক্যাচ ফেলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। পঞ্চম উইকেটে মইন আলির (৩২) সঙ্গে ৯৮ রান যোগ করেন ব্যালান্স। তবু ভারতীয় বোলারদের ফোকাস নড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। গ্রিন-টপ পিচ কিছুটা সহজ হয়ে গেলেও ভাল লাইনে বল করে যান তাঁরা। প্রথম দিনের স্কোরের সঙ্গে মাত্র পাঁচ রান যোগ করে ২৯৫ অল আউট হয়েছিল ভারত।

ভারত

প্রথম ইনিংস

(আগের দিন ২৯০-৯)

শামি ক কুক বো স্টোকস ১৯

ইশান্ত নট আউট ১২

অতিরিক্ত ২৮

মোট ২৯৫।

পতন: ১১, ৪৮, ৮৬, ১১৩, ১২৩, ১২৮, ১৪৫, ২৩৫, ২৭৫।

বোলিং: অ্যান্ডারসন ২৩-৭-৬০-৪, ব্রড ২২-৫-৭৯-২, প্লাঙ্কেট ১৫-৫-৫১-১,

স্টোকস ১৭.৪-৫-৪০-২, আলি ১৪-২-৩৮-১।

ইংল্যান্ড

প্রথম ইনিংস

কুক ক ধোনি বো ভুবনেশ্বর ১০

রবসন ক ধোনি বো ভুবনেশ্বর ১৭

ব্যালান্স ক ধোনি বো ভুবনেশ্বর ১১০

বেল ক জাডেজা বো ভুবনেশ্বর ১৬

রুট এলবিডব্লিউ জাডেজা ১৩

আলি এলবিডব্লিউ বিজয় ৩২

প্লাঙ্কেট ব্যাটিং ৪

প্রায়র ব্যাটিং ২

অতিরিক্ত ১৫

মোট ২১৯-৬।

পতন: ২২, ৩১, ৭০, ১১৩, ২১১, ২১৪।

বোলিং: ভুবনেশ্বর ২৩-৯-৪৬-৪, শামি ১৫-৫-৩৩-০, ইশান্ত ১৭-৫-৩২-০,

বিনি ১০-০-৪৫-০, জাডেজা ১৮-১-৪১-১, বিজয় ৩-০-১২-১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE