লর্ডসে ‘ধ্যানমগ্ন’। ছবি: রয়টার্স
অন্য রকমের একটা টেস্ট ম্যাচ দেখলাম ট্রেন্ট ব্রিজে। দু’দলই ভাল জায়গায় চলে আসা সত্ত্বেও কিছু অপ্রত্যাশিত পারফরম্যান্স সেই জায়গা থেকে তাদের ফিরিয়ে আনল। এক দিকে সেই কাজটা যেখানে করল ভারতের ভুবনেশ্বর ও শামি, অন্য দিকে ইংল্যান্ডের অ্যান্ডারসন ও রুটের পার্টনারশিপ একই কাজ করল।
হেডিংলেতে কয়েক দিন আগে অ্যান্ডারসনকে একের পর এক শর্ট বল দিয়ে চাপে ফেলে কী ভাবে শেষ পর্যন্ত এক বল বাকি থাকতে টেস্ট জিতে শ্রীলঙ্কা ইংল্যান্ডে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতল, তা তো আমরা সবাই দেখেছি। তার পরও যে ভাবে ও ব্যাট হাতে ফলো অন বাঁচানোর লড়াইটা লড়ল, তাতে ওর মানসিক দৃঢ়তা সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণাই হয়। বহু দিন ধরে ইংল্যান্ডের সেরা বোলারের জায়গাটা ধরে রেখেছে জেমস। এ বার ও দেখাল, জীবনে যে কোনও বিষয়ে নিজেকে নিয়ে গর্বিত হওয়াটা কতটা জরুরি।
আমার ধারণা, ইংল্যান্ডের আর এক সিনিয়র বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডও এই টেস্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এত ওভার বল করে এত কম রান দেওয়াটা কৃতিত্বের বই কি। এমন পাটা উইকেটে ঠিক কী ভাবে বল করা উচিত, তা ও-ই দেখিয়ে দিল। চাপের মুখে ব্যাটিংটাও মন্দ করেনি ব্রড। অন্য কেউ হলে হয়তো ওই চাপের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখত। কিন্তু ওই সময়ে পাল্টা আক্রমণ করে ভারতীয়দের উল্টে চাপে ফেলে দেওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল।
ভারতের পক্ষেও টেস্টটা বেশ ভালই গেল। যে কোনও বিদেশ সফরেই প্রথম টেস্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তা সেই প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে পেরে ভারতীয়দের খুশিই হওয়া উচিত। ইতিহাস বলছে ভারত ভাল শুরু না করার পরও সিরিজে ভাল করেছে। আর এখানে তো শুরুটাই তো ভাল হল। প্রথম টেস্ট থেকে ভারত প্রচুর ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছে। ভুবনেশ্বর কুমারের কথাই ধরুন না। ব্যাটিং, বোলিং, দু’দিক দিয়েই ও কতটা পরিণত হয়ে উঠেছে, তা বুঝিয়ে দিল ও। ওর ব্যাটিং টেকনিক অসাধারণ।
উইকেটটা যে পাটা ছিল, তা এখন আমরা সবাই জানি। কিন্তু যে সময়ে উইকেটে এসে ও অত ভাল ব্যাট করল, তাতে ওর ভাল ব্যাট করার ক্ষমতার দিকটাও ভাল ভাবেই বুঝে নেওয়া গিয়েছে। বোলিং বেশ ভাল করেছে। ওর অবদান ও চেষ্টা নিয়ে এখন আর কারও মনে কোনও সন্দেহ আছে বলে মনে হয় না। কারও ক্ষমতাকে কীভাবে উপযোগী করে তোলা যায়, ভুবনেশ্বর তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। ওর মধ্যে চেষ্টার কোনও শেষ নেই। আর এটাই মাঠে দেখতে ভাল লাগে।
তরুণ স্টুয়ার্ট বিনির কথাও বলতে হবে। ভাল খেলেছে ছেলেটা। দ্বিতীয় ইনিংসে ও যখন ব্যাট করতে নামল, তখন ভারত বেশ চাপে। তা সত্ত্বেও ভাল ব্যাট করল ও। এমনিতেই ওকে কম বোলিং করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তার উপর এমন উইকেট। এই অবস্থা সামলানো একজন তরুণ ক্রিকেটারের পক্ষে মোটেই সোজা নয়। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় ইনিংসে স্টুর্য়াট রান করে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিল। আমি সবসময়ই বলে আসছি যে ওকে দলে থাকতে হলে ছ’নম্বরে নেমে ধারাবাহিকভাবে রান করে যেতে হবে। এই ইনিংসটা ওকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস জোগাবে।
আসলে এই স্তরে রানই একজন ক্রিকেটারকে বদলে দেয়। রান এলে এই বিশ্বাসটাও আসে যে, আমি এই স্তরে ক্রিকেট খেলার যোগ্য। আশা করি, এই সিরিজে যা কিছু ভাল হবে, তার শুরুটা ট্রেন্ট ব্রিজ থেকেই হয়ে গিয়েছে। এবং এই শুরুটা দেখেই বোঝা গেল সিরিজটা বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চলেছে। ট্রেন্ট ব্রিজের পর এ বার ফোকাস সরছে লর্ডসের দিকে। যেখানে উইকেট কেমন হবে, এটাই এখন আলোচনার বিষয়। তবে উইকেট যেমনই হোক, আশা করি, লর্ডসের এই টেস্টও জমে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy