স্ত্রী ফোন করে জিজ্ঞেস করল, “কী রকম চলছে সব?” বললাম, “দারুণ। প্রথম ম্যাচটা জিতেছি। তা-ও আবার গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বইকে হারিয়ে।” ও বলল, “সে সব তো হল, কিন্তু তুমি কী ভাবে শূন্য রানে আউট হয়ে গেলে? তা-ও আবার টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে?” শুনে কী বলব বুঝতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল আমি ছোট একটা ছেলে, যে ইংরেজি পরীক্ষার দিন সায়েন্স পরীক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে। এখানেই কিন্তু ব্যাপারটা শেষ হয়নি। স্ত্রীর দাবি, “তোমার এ বার বোলিংটাও শুরু করা উচিত। তা হলে অন্তত একটা ম্যাচে খারাপ ব্যাট করার পরেও তোমার করার মতো একটা কিছু থাকবে।” আর আমার নেতৃত্ব? করুণ ভাবে জিজ্ঞেস করলাম। ঝড়ের মতো উত্তর এল, “ওটা আর এমন কী? তুমিই তো বলো যে ক্যাপ্টেন ততটাই ভাল যত ভাল তার টিম।” আমি আত্মসমর্পণ করার পরেও ও বলে চলল, “শুনলাম গালা ডিনারের রাতে বাকি ক্যাপ্টেনদের মতো তুমি এসআরকের সঙ্গে নাচোওনি। কাম অন গোতি, একটু নাচলে কী হত?”
ভেবে দেখুন তো, দুবাইয়ে বসে আমি দিল্লির বিরুদ্ধে পরের ম্যাচের জন্য প্ল্যান করছি। আর আমার স্ত্রী আমার গায়ে লেবেল আটকে দিচ্ছে, “ব্যাট করতে পারে না, বল করতে পারে না, নাচতেও পারে না।” সত্যি বলতে কী, আমি কোনও দিনই নাচতে পারিনি। কোনও দিন নাচিওনি। বন্ধুরা বিয়ে করেছে, আত্মীয়স্বজন বিয়ে করেছে, আমার বোন বিয়ে করেছে। এগুলো সবই প্রায় হুল্লোড়ে পঞ্জাবি বিয়ে। যেখানে ডান্সফ্লোর থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে ছিলাম আমি। ১৫ এপ্রিলের গালা ডিনারেও সেটা করতে পারলে খুব ভাল হত। ওই মুহূর্তটার আগে পর্যন্ত কিন্তু নিজেকে উপভোগ করছিলাম। আমাকে ব্যাকস্টেজে ডাকা হল। একটা লুঙ্গি পরতে বলা হল। ওদের বলার চেষ্টা করেছিলাম যে আমি চেন্নাই সুপার কিংসের ক্যাপ্টেন নই, কলকাতার অধিনায়ক। তবে ওদের প্ল্যানটা অন্য রকম ছিল।
শেষ পর্যন্ত বাকি ক্যাপ্টেনদের সঙ্গে আমিও লুঙ্গি পরে স্টেজে উঠলাম। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর ‘লুঙ্গি ডান্স’-এর সঙ্গে শাহরুখ ভাই আমাদের নাচাচ্ছিল। সে দিন যদি আমার পেট খারাপ হত! বা পিঠে ব্যথা। বা ফিজিও যদি বলতেন পুরো বিশ্রাম নিতে। মনে হচ্ছিল কেন যে কোনও একটা অজুহাতে হোটেলের ঘরে থেকে যেতে পারলাম না! কিন্তু সে সব কিছুই হল না। কোনও আর্ট গ্যালারিতে স্টকব্রোকারের বেমানান উপস্থিতির মতো আমিও ভীষণ ভাবে স্টেজে হাজির ছিলাম। এসআরকের যাবতীয় চেষ্টার ফল হিসেবে বাঁ হাতটা তুলে একটু নাড়িয়েছিলাম। ওটাই আমার নাচ!
তবে প্রথম ম্যাচটা জেতার পর নিশ্চয়ই জঘন্য নাচের জন্য এসআরকে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। আমার স্ত্রী নিশ্চয়ই জেনে খুশি হবে যে আমাদের টিমে বেশ কয়েক জন আছে যারা ব্যাট করতে পারে, বল করতে পারে, আবার নাচতেও পারে। জাক কালিস তাদের অন্যতম। বুধবার সেই সব স্কিল ও দেখিয়েও দিয়েছে। সুনীল নারিনের রহস্য এখনও কেউ ভেদ করতে পারেনি। কেউ জানে না ওর কোন বলটা কোন দিকে স্পিন করবে। ডান্সফ্লোরেও কিন্তু বোঝা যায় না নারিন কোন দিকে স্পিন করবে। ইন্ডিয়ান দিকে, না ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দিকে? দু’ধরনের নাচেই ও চ্যাম্পিয়ন।
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে আমাদের টিমের নৃশংসতা দেখে খুব খুশি হয়েছি। দিল্লি ম্যাচেও তার চেয়ে এতটুকু কম কিছু আশা করছি না। কেভিন পিটারসেন থাকুুক বা না থাকুুক, দিল্লি খুব ভাল মানের দল। কেপির কথায় মনে পড়ে গেল, ওর ‘পাই-চাকার ফ্রেন্ড’ যুবরাজ কিন্তু নিজের দিনে সত্যিই বস্! আশা করছি যুবরাজের টিম যে দিন আমার টিমের বিরুদ্ধে নামবে, সেই দিনটা ওর হবে না।
জানেন, দাড়ি কামাতে আমি একটুও পছন্দ করি না। দাড়িটা কাটব কি না, এই লেখাটা লিখতে লিখতে সেটাই ভাবছি। স্ত্রী বলছে কেটে ফেলা উচিত। জানি না কী করব। দেখা যাক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy