Advertisement
E-Paper

‘আজ মনে পড়ছে মৃত্যুর মুখ থেকে এ ভাবে ফিরে এসেছিলাম আমিও’

২১ জুলাই। ভারতীয় ফুটবলে মনে রাখার মতো ভয়ঙ্কর একটা দিন! যদিও ততটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি বলেই হয়তো এখনও ফোনের ও-পারে রিং হলে দেবজিৎ ঘোষের গলাটা পাওয়া যায়। ২০০৩-এর সেই দিনটি ভাগ্যিস মাঠের মধ্যে ডগলাস ছিলেন! এখনও সেই ঘটনার কথা বলতে গেলে শিউরে ওঠেন দেবজিৎ!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৮:৩৬
দেবজিৎ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

দেবজিৎ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

২১ জুলাই। ভারতীয় ফুটবলে মনে রাখার মতো ভয়ঙ্কর একটা দিন! যদিও ততটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি বলেই হয়তো এখনও ফোনের ও-পারে রিং হলে দেবজিৎ ঘোষের গলাটা পাওয়া যায়। ২০০৩-এর সেই দিনটি ভাগ্যিস মাঠের মধ্যে ডগলাস ছিলেন! এখনও সেই ঘটনার কথা বলতে গেলে শিউরে ওঠেন দেবজিৎ! কিন্তু প্রায় ১৪ বছর পর এই অসময়ে কেন সেই ঘটনার উত্থাপন?

রবিবার তেমনই এক ঘটনা ঘটে গিয়েছে যে চেক প্রজাতন্ত্রের ঘরোয়া ফুটবল টুর্নামেন্টে। বোহেমিয়ান্স-স্লোভাকিয়ার মধ্যে ম্যাচে একই ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বোহেমিয়ান্সের গোলরক্ষক। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার ও স্ট্রাইকারের সঙ্গে সংঘর্ষে জ্ঞান হারান তিনি। সেই স্ট্রাইকার একটুও সময় নষ্ট না করে মুখে মুখ দিয়ে তাঁর শ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করেন। তাতেই প্রাণ ফিরে পান সেই গোলকিপার। আপাতত তিনি হাসপাতালে। ঠিক সেই রকম ভাবে। যে ভাবে মুখে মুখ দিয়ে দেবজিৎ ঘোষের প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ডগলাস ডি’সিলভা।

আরও খবর: মুখে মুখ রেখে বিপক্ষ টিমের গোলরক্ষকের প্রাণ বাঁচালেন স্লোভাকোর স্ট্রাইকার

চেকের ওই ঘটনার কথা শুনেছেন দেবজিৎ ঘোষ। ১৪ বছর আগের সেই স্মৃতি তাঁরও মনে পড়ে গিয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই। আজও ভীষন তাজা! যদিও সেই সময়ের ঘটনা কিছুই স্মৃতিতে নেই দেবজিতের। সুস্থ হয়ে ফেরার পর ক্যামেরায় দেখে জেনেছিলেন কী হয়েছিল সেই সময়।

ইস্টবেঙ্গলের বিখ্যাত আসিয়ান জয়ের পথে একটি ম্যাচ। দেবজিৎ বলছিলেন, ‘‘দুই হাফে খেলছিলাম আমি আর ডগলাস। আমাদের দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল। কোন বল কে ধরব। এরিয়াল বল যা আসবে ও হেড করবে আর ফিরতি বল আমি ধরব। সেই সময় ওদের গোলকিপার একটা লং কিক করেছিল। হঠাৎই বলটা নিচু হয়ে আসায় ডগলাস আমাকে কল করে। আমি অনেক পরে বলটা ধরার জন্য ঝাঁপাই। কিন্তু যখন বুঝতে পারি বলটা ধরতে পারব না, তখন একটা ঝাঁপ দিই। সেই সময় পিছনে ওদের এক স্ট্রাইকার দাঁড়িয়েছিল ও বলটা ফ্লিক করতে যায় কিন্তু আমি যে হেতু পিছন দিকেই ঝুঁকে ছিলাম সে কারণে ওর কিকটা এসে লাগে আমার মাথার ঠিক পিছনে ঘাড়ের উপর।’’ তার পরটা তো সবারই জানা। সেখানেই লুটিয়ে পড়েছিলেন দেবজিৎ ঘোষ। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন ডগলাস। মুখ‌ে মুখ দিয়ে দেবজিতের শ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন। তখন প্রতিপক্ষের এক জন বুকে পাম্প করতে শুরু করেন। ‘‘ভগবান ডগলাসকে পাঠিয়ে দিয়েছিল। এই দু’জনের বদান্যতায় বেঁচে গিয়েছি। আরও একটা অবাক করা ঘটনা ঘটেছিল। শান্তিদা (ডাঃ শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত)র সঙ্গে ছিল ডেকাড্রন। যেটা সাধারণত মাঠে থাকে না। যেটা সঙ্গে সঙ্গে দিতেই আমার শ্বাসটা পুরো ফিরে আসে।’’ দেবজিতের মতে, ফুটবল মাঠে ডেকাড্রন রাখার নজির মনে হয় এটাই প্রথম। ব্যবহারও হয়তো প্রথম। দেবজিৎ বলছিলেন, ‘‘শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাম্প করে পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি সেই ইঞ্জেকশনটা দেওয়া যায় তা হলে কাজ হলেও হতে পারে। আমার বেঁচে থাকার পিছনে শান্তিদার চিকিৎসাটাও মনে রাখতে হবে।’’

ডগলাস ডি’সিলভার হাতেই প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন দেবজিৎ।

২১ জুলাই এখনও বাড়ি থেকে বেরতে দেন না স্ত্রী। অদ্ভুত একটা আতঙ্ক কাজ করে। কলকাতা মাঠেই আবার এই দেবজিৎ ঘোষের হাতেই একই ভাবে প্রাণ বেঁচেছিল লাল্টু হেমব্রমের। কিন্তু বাঁচানো যায়নি ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রকে। ডেম্পোর হয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে গোল করে লুটিয়ে পড়েছিলেন মাঠে। গোলকিপার সুব্রত পালের হাতের ধাক্কা এসে লেগেছিল জুনিয়ারের বুকে। দু’বার মাথাটা তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তার পরই সব শেষ। পাগলের মতো জুনিয়ারের বুকে পাম্প করছিলেন র‌্যান্টি মার্টিন্স। টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন সকলে মিলে, কিন্তু হয়নি। দেবজিৎ ঘোষ বলছিলেন, ‘‘অনেকটা ভাগ্য। এই দুর্ঘটনা আমরা এড়াতে পারব না। ফুটবল বডি কনট্যাক্ট গেম। কিন্তু মাঠের মধ্যে সাময়িক চিকিৎসাটা দিতে পারতে হবে ফুটবলারদেরই। সঙ্গে থাকতে হবে উপযুক্ত লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমযুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স। যেটা আমাদের এখানে নেই।’’ আর সে কারণেই বেড়ে যায় জীবনের ঝুঁকি। আবার ফিরে আসে সেই স্মৃতি। যেটা দেবজিৎকে মনে করিয়ে দিল ১৪ বছর আগেই সেই ঘটনা। জুনিয়রের জীবনে কেউ ডগলাস হয়ে ওঠেনি। তাই জুনিয়র এখন শুধুই স্মৃতিতে।

জুনিয়ারের মৃত্যুর সেই দৃশ্য যা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ফুটবল বিশ্বকে।

Debjit Ghosh Christiano Junior Death At Football Ground Indian Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy