Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রীর কথাতেই দেশ ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম

ভারতীয় স্ত্রী-র এক কথায় পাকিস্তান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার লড়াই, বিশ্বকাপ ও আইপিএলের অভিজ্ঞতা। নয়াদিল্লির টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ সবই বললেন ইমরান তাহির।ভারতীয় স্ত্রী-র এক কথায় পাকিস্তান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার লড়াই, বিশ্বকাপ ও আইপিএলের অভিজ্ঞতা। নয়াদিল্লির টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ সবই বললেন ইমরান তাহির।

রাজীব ঘোষ
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

প্রশ্ন: পাকিস্তানে স্পিন বোলিংয়ের হাতে খড়ি, সেখানেই বড় হয়ে ওঠা আপনার। তা হলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একটা দেশে যেতে গেলেন কেন, যেখানে পেস বোলিং ছাড়া কেউ কিছু বোঝেই না?

তাহির: আমি যে নিজের ইচ্ছেতেই গিয়েছি, তা কিন্তু নয়। বরং বলতে পারেন, আমার স্ত্রী-র ইচ্ছেয় ওখানে যাওয়া। ওকে দেখতে গিয়েছিলাম ডারবানে। তার পরই দ্রুত আমাদের ‘শাদি’ হয়ে যায়। তখন ও-ই বলে এখানে এসে খেলো। তোমার যা প্রতিভা, তাতে তুমি একদিন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের হয়েও খেলতে পারবে। বউয়ের কথাতেই দেশ ছেড়ে চলে গেলাম ওখানে।

(তাহিরের স্ত্রী সুমায়া দিলদার দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবারের মেয়ে ও ১৯৯৮-এ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে দু’জনের প্রথম দেখা ও প্রথম দর্শনেই প্রেম।)

প্র: কিন্তু বউ বলেছে বলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একটা পেসার-সর্বস্ব ক্রিকেটখেলিয়ে দেশে গিয়ে স্পিনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার আগে নিজের কেরিয়ার নিয়ে একবারও ভাবলেন না?

তাহির: (হেসে) কী আর করা যাবে, বউ বলে কথা। এটা সত্যিই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে প্রথম দুটো বছর এত দূর্বিষহ হয়ে উঠেছিল যে, তা বলে বোঝানো যাবে না। একটা দেশে নিজেকে প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে নেওয়ার পরও অন্য দেশে গিয়ে ফের লড়াই শুরু করা যে কী কঠিন কাজ, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। কিন্তু আমি যে আমার স্ত্রী-কে কথা দিয়েছিলাম, যে করেই হোক, যত লড়াই-ই লড়তে হোক, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেখাবই। খুব মোটিভেটেড ছিলাম। ওখানকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব পরিশ্রম করে খেলেছি। ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফর্ম করলাম। ডারবানে এসে আরও ভাল খেলতে শুরু করলাম। তার পর দক্ষিণ আফ্রিকার দরজা খুলে গেল। কথাগুলো যত সহজে বললাম, একটা ছোট ইন্টারভিউতে বোঝানো সম্ভব নয় কি কঠিন লড়াই করতে হয়েছে আমাকে। এই লড়াইয়ে জিততে পেরেছি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

প্র: কিন্তু এই জায়গাটা ধরে রাখা তো আরও কঠিন। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে।

তাহির: খুব কঠিন। কিন্তু একবার যখন নিজের কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি, তখন আর সেই জায়গাটা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আরও পরিশ্রম করতে হবে। সেটাই করছি। আর রিল্যাক্স করার কোনও জায়গা নেই। ঠিকই বলেছেন। এখন আরও বড় লড়াই। সে জন্যই তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক বা আইপিএল, নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আইপিএল তো আমার কাছে বিশাল অভিজ্ঞতা। বিগ ব্যাশ বা ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলিনি বলে জানি না ওগুলো কী রকম। তবে আমার কাছে আইপিএলই সেরা ক্রিকেট লিগ। তাই এখানে নিজেকে দুশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

প্র: অমিত মিশ্রর সঙ্গে আপনার বোলিং পার্টনারশিপে রসায়নটা কেমন?

তাহির: দুর্দান্ত। ওর কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখছি। আমি যতটুকু জানি ওর সঙ্গে ভাগাভাগি করছি। ও সেটা আরও ডেভেলপ করে দেখাচ্ছে। এ ভাবেই চলছে।

প্র: এখন পার্পল ক্যাপ আপনার কাছে। কেমন লাগছে?

তাহির: ভাল তো বটেই। তবে দলের সাফল্যই আমার কাছে বড় ব্যাপার। এ পর্যন্ত প্রায় কুড়িটা ক্লাব দলের হয়ে খেলেছি। যে রেকর্ড আর কারও নেই। তাই টিম ব্যাপারটা আমার চেয়ে ভাল আর কেউ জানে বলে মনে হয় না। পার্পল ক্যাপ পাওয়াটা তাই আমার কাছে বড় ব্যাপার নয়। দলের সাফল্যটাই আসল। বিশ্বকাপে যখন আমরা ছিটকে গেলাম, তখন বরং নিজের উপর রাগ হয়েছিল, একবারও মনে হয়নি ভাল বল করেছি।

প্র: বিশ্বকাপের কথায় আর একবার ফিরি। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের উইকেটকে বশ মানালেন কী করে? বিশেষ কোনও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

তাহির: না, একেবারেই না। সিডনি ছাড়া আর কোনও উইকেটেই বল টার্ন করেনি। বাকি সব পিচই পাটা লেগেছে আমার। তবে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট খেলতে গেলে সিংহহৃদয় নিয়ে মাঠে নামতে হয়। সবার চেয়ে আলাদা হতে হয়। আমি আমার গেমপ্ল্যান অনুযায়ী বল করেছি। আমাদের অ্যানালিস্ট প্রসন্না বিশ্বকাপের আগে থেকে খুব সাহায্য করেছেন। আইডিয়া দিয়েছেন ওখানকার কন্ডিশনে কেমন বল করা উচিত। উনি ডিডি-তেও আছেন।

প্র: ওখান থেকে এখানে আইপিএলে এসে অন্য ধরনের উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছেন কী ভাবে?

তাহির: হ্যাঁ, এখানকার উইকেট অন্য ধরনের। তবে এখানে আসার আগে যে ধরনের টার্নিং ট্র্যাক পাব বলে আশা করেছিলাম, তা না পেয়ে খুব হতাশ হয়েছি। গরম বাড়লে সে রকম উইকেট পাব হয়তো।

প্র: সম্প্রতি কোনও কিংবদন্তি স্পিনারের কাছ থেকে বড় কমপ্লিমেন্ট পেয়েছেন?

তাহির: আব্দুল কাদিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। উনি তো প্রশংসা করেনই। অস্ট্রেলিয়ায় শেন ওয়ার্নের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। খুব উৎসাহ দিয়েছে। এগুলোই বড় পাওয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE