Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কলকাতার কাছে তিকিতাকা চাইবেন না, বলছেন গার্সিয়া

জাভিরা বলল, ভারত থেকে কাপটা নিয়ে আসিস

হোসে মোরিনহোর রাগ এখনও কমেনি তাঁর উপর। সেই ইতিহাস হয়ে যাওয়া ‘ভুতুড়ে গোল’-এর কথা তুললে এখনও কুঁকড়ে যান তিনি। বিতর্ক এড়াতে বলে দেন, ‘‘আমার চোখে ওটা গোল ছিল। কারণ বলটা গোললাইন পেরিয়েছিল। চেলসি কোচ মোরিনহো সেটা না-ও মানতে পারেন। হয়তো উনি ওটা দেখতে পাননি।’’ এ রকম চমকপ্রদ নানা উত্তর বেরিয়ে এল প্রাক্তন লিভারপুল তারকার মুখ থেকে। স্পেন থেকে শহরে পা রাখার সতেরো ঘণ্টার মধ্যে আনন্দবাজারের মুখোমুখি বিশ্বকাপার লুই গার্সিয়া। আটলেটিকো দে কলকাতার আইকন ফুটবলার। রবিবার দুপুরে দিলেন প্রথম মুখোমুখি একান্ত সাক্ষাৎকার।

গার্সিয়ার সারা দিন। অন্যতম টিম মালিক সৌরভের সঙ্গে।

গার্সিয়ার সারা দিন। অন্যতম টিম মালিক সৌরভের সঙ্গে।

রতন চক্রবর্তী ও সোহম দে
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

হোসে মোরিনহোর রাগ এখনও কমেনি তাঁর উপর। সেই ইতিহাস হয়ে যাওয়া ‘ভুতুড়ে গোল’-এর কথা তুললে এখনও কুঁকড়ে যান তিনি। বিতর্ক এড়াতে বলে দেন, ‘‘আমার চোখে ওটা গোল ছিল। কারণ বলটা গোললাইন পেরিয়েছিল। চেলসি কোচ মোরিনহো সেটা না-ও মানতে পারেন। হয়তো উনি ওটা দেখতে পাননি।’’ এ রকম চমকপ্রদ নানা উত্তর বেরিয়ে এল প্রাক্তন লিভারপুল তারকার মুখ থেকে। স্পেন থেকে শহরে পা রাখার সতেরো ঘণ্টার মধ্যে আনন্দবাজারের মুখোমুখি বিশ্বকাপার লুই গার্সিয়া। আটলেটিকো দে কলকাতার আইকন ফুটবলার। রবিবার দুপুরে দিলেন প্রথম মুখোমুখি একান্ত সাক্ষাৎকার।

প্রশ্ন: পুণেতে ত্রেজেগুয়ে। দিল্লিতে দেল পিয়েরো। মুম্বইয়ে আনেলকা। আপনার টিমের স্ট্রাইকিং ফোর্স তো মনে হচ্ছে অন্য দলের তুলনায় দুর্বল? মানছেন?

গার্সিয়া: কে বলল আমাদের স্ট্রাইকিং ফোর্স খারাপ? ব্যাপারটা সিক্রেট রাখতে চাই। মাঠে নামি। তিনটে ম্যাচের পর আমার সঙ্গে এসে এ বিষয়ে কথা বলবেন। খাতায়-কলমে নাম দেখে আগেই কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। আগে আমাদের মাঠে নামতে দিন।

প্র: তা হলে আপনি-ই কি স্ট্রাইকারের অভাব মেটাবেন? কিন্তু আপনার প্রিয় পজিশন তো অ্যাটাকিং মিডিও বা উইং?

গার্সিয়া: গত এক মাসের অনুশীলনে অ্যাটাকার হিসাবে সব পজিশনেই আমাকে দেখেছেন কোচ। আমি আগেও বিভিন্ন টিমে স্ট্রাইকার খেলেছি। এখানে কোচ যেখানে খেলাবেন সেখানেই খেলব। আমি ফিট এবং তৈরি।

প্র: আপনার কেরিয়ারে তো মেসি-রোনাল্ডোর মতো প্রচুর গোল নেই। কিন্তু অভিনব ব্যাপার হল বড় ম্যাচে সব সময়ই আপনি সফল। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোল করে দেন। ইতিহাস তাই বলছে।

গার্সিয়া (হেসে): দলের প্রয়োজনের সময় গোল করাটাই তো আসল। আর এখানে তো সব ম্যাচই বড় ম্যাচ। ১২ অক্টোবর প্রথম ম্যাচ। প্রথম ম্যাচটা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সহকারী কোচ ব্যারেটো সব খবর আনছে মুম্বইয়ের। কোচ সে ভাবেই টিম সাজাবেন।

প্র: আপনার টিমের ফর্মেশনটা কী?

গার্সিয়া: সবাই তো এখন ৪-২-৩-১ ফমেশনেই খেলছে। আমরাও সেটাই অনুশীলন করছি। তবে উল্টো দিকে যেমন দল থাকবে সেই অনুযায়ী ফর্মেশন তৈরি হবে।

প্র: স্পেনের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবলের তো আকাশ-পাতাল তফাত। আপনি কী ভাবে সঞ্জু প্রধান-ক্লাইম্যাক্সদের গতিহীন খেলার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেবেন?

গার্সিয়া: গত এক মাস ধরে ওদের সঙ্গে থেকে সেটাই তো বোঝার চেষ্টা করেছি। কিছুটা বুঝেছিও। মানছি স্পেনের ফ্লুইড ফুটবলের সঙ্গে এখানকার ফুটবলের পার্থক্য অনেক। কিন্তু মানাতে তো হবেই। কোচ সেটা করার চেষ্টা করছেন। এক মাস আগে যে সমস্যায় পড়েছিলাম সেটা অনেক কাটিয়ে উঠেছি এখন। আসলে প্রচণ্ড গতি আর গতিহীনতার মধ্যে এমন একটা ব্রিজ তৈরি করতে হবে যাতে সবাই মানিয়ে নিতে পারে।

প্র: মাদ্রিদে অনুশীলনের শুরুতে তা হলে প্রচুর সমস্যা হচ্ছিল?

গার্সিয়া: অবশ্যই। কেউ তো পাসই ঠিকঠাক দিতে পারছিল না। অনুশীলন ম্যাচেও শুরুতে সমস্যা হচ্ছিল। ভাষা নিয়েও ঝামেলা। এখন তা অনেকটা কেটে গিয়েছে। কারও নাম বলব না। কয়েক জন ভারতীয়কে দেখে বেশ ভালই মনে হচ্ছে।

প্র: অবসর নিয়েছিলেন বছরের শুরুতে। হঠাৎ ভারতের মাটিতে খেলে প্রত্যাবর্তনের সাধ হল কেন?

গার্সিয়া: ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাব পেয়েছিলাম কলকাতায় খেলার। এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিই। কারণ প্রথমত ফুটবলকে খুব মিস করছিলাম। দ্বিতীয়ত, স্পেন ও ইংল্যান্ডের মানুষ যেমন আমাকে চেনে এবং ভালবাসে, ভারতীয়রা সে ভাবেই আমাকে চিনুক এটা চাইছিলাম। সোজাসুজি বলছি, আমি ভারতীয় ফুটবলে নতুন ইতিহাস গড়তে এসেছি।

প্র: সব দলেই আইকন ফুটবলারের উপর ভয়ঙ্কর চাপ থাকে। সবাই ভাবে তারাই ম্যাচ জেতাবে। আপনার উপরও তো একই চাপ।

গার্সিয়া: এটা মানছি কলকাতার আইকন হওয়ায় আমাকে চাপ নিতেই হবে। তা বলে এই নয় যে আমি সব ম্যাচ জেতাব। ওটা ক্রিকেটে হয়, ফুটবলে হয় না।

প্র: কলকাতা টিমের বিদেশিদের মধ্যে স্প্যানিশ ফুটবলার বেশি থাকায় সবাই ধরে নিয়েছে আপনারা তিকিতাকা খেলবেন...

গার্সিয়া: (হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে) তিকিতিকা খেলা অত সহজ নাকি? ওটা বার্সেলোনা আর বায়ার্ন খেলতে পারে। কারণ ওদের টিমে কোয়ালিটি ফুটবলার অনেক। আমাদের কাছে তিকিতাকা আশা করবেন না। আমরা কাউন্টার অ্যাটাকে খেলব। কারণ এখন ডিফেন্সের চেয়ে আক্রমণেই সবাই জোর দিচ্ছে।

হোটেলেই প্র্যাকটিস শুরু করে দিলেন। ছবি: উৎপল সরকার

প্র: বার্সেলোনা যখন প্রসঙ্গে এল তখন জানতে ইচ্ছে করছে ছোটবেলার মেসির অনুশীলন তো দেখেছেন বার্সায়। অভিজ্ঞতাটা কেমন?

গার্সিয়া: বার্সায় আমি যখন খেলেছি, তখন আমাদের জুনিয়র দলের অনুশীলনে মেসিকে প্রতিদিন দেখতাম। মেসি অসাধারণ ফুটবলার। এখনও মাঝেমধ্যে কথা হয়। আমার মতে ক্রিশ্চিয়ানো (রোনাল্ডো) নয়, মেসিই সেরা। মেসির চারশোতম গোলটা দেখলাম শনিবার রাতে হোটেলে ঢুকে। দারুণ অনুভূতি।

প্র: আপনি যে মাঠে খেলবেন সেখানে মেসি খেলে গিয়েছেন। শুনেছেন?

গার্সিয়া: মেসি কেন, পেলে-মারাদোনারাও তো কলকাতায় এসেছেন শুনলাম। পেলেও খেলেছেন শুনেছি।

প্র: মেসি কৃত্রিম ঘাসে খেলে খুশি হননি। আপনাকে কিন্তু সেখানেই খেলতে হবে। লিগের সাতটা ম্যাচ। সমস্যা হবে?

গার্সিয়া: আমার হলে সবার হবে। অন্যরাও তো এই মাঠে খেলবে। মানিয়ে নিতে হবে। সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।

প্র: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভুতুড়ে গোল তো ইতিহাস। মোরিনহো এখনও বলেন ২০০৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে লাইন পেরোয়নি আপনার গোল, তবু গোল দেওয়া হয়েছিল। আপনার ফুটবল জীবনে আরও একটা স্মরণীয় ঘটনা আছে। ওই ২০০৫-এই এসি মিলানের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। যে ম্যাচে ৩-০ পিছিয়ে থেকে ৩-৩ করে টাইব্রেকারে ম্যাচ জেতে আপনার দল লিভারপুল।

গার্সিয়া: আপনারা এত খবর রাখেন? সত্যিই ওই জয়টা অবিশ্বাস্য ছিল। শুনেছিলাম বিরতিতে ০-৩ পিছিয়ে পড়ার পর অনেক লিভারপুল সমর্থক টিভি বন্ধ করে দিয়েছিল। স্টেডিয়ামও ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হয় ফুটবল মাঠে সবই সম্ভব। ওই ম্যাচটা নিয়ে তো সিনেমাও হয়েছে। আমিও আছি তাতে। কলকাতা টিমের অনেককে সেটা বলেওছি।

প্র: আপনার ভারতে আসা। কলকাতা টিমে যোগ দেওয়া। আপনার অন্য বিশ্বকাপার সতীর্থরা কী ভাবে দেখছেন ব্যাপারটা?

গার্সিয়া: জাভি, জাবি আলোন্সো, ইনিয়েস্তা সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ভারতে আসার আগে। বলেছে কাপ নিয়ে আসতে। আই এস এলে খেলতে আসা কাপদেভিয়া আমার ভাল বন্ধু। ও তো গোয়ার সি-বিচ দেখে এখন পাগল।

প্র: কী মনে হচ্ছে বন্ধুদের ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন? কলকাতা চ্যাম্পিয়ন হবে প্রথম আই এস এলে?

গার্সিয়া: সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। সব টিমকে তো এখনও দেখিনি। তাদের শক্তিও জানি না। আপাতত আমাদের লক্ষ্য প্রথম ম্যাচে মুম্বইকে হারানো।

প্র: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হল?

গার্সিয়া: আজ ফটোশ্যুটের সময় দেখা হল।

সকাল থেকেই যে ফটোশ্যুট চলছিল। সেখানে বলজিৎ সাইনি, মোহনরাজরাও ছিলেন। লুই গার্সিয়াকে প্রশ্ন করা হল বলজিতদের কাছ থেকে কোনও ভারতীয় ভাষা শিখলেন কি না?

উত্তরটা গার্সিয়া নয়, দিলেন বলজিৎ। বললেন, “ওকে শিখিয়েছি আগে বাড়ো, পিছে আও।’’

কী বুঝলেন কে জানে, দেখা গেল গার্সিয়া মাথা নাড়ছেন। শুধু বললেন, “নমস্কার। ফাটাফাটি ফুটবল!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE