আগের সাত ম্যাচে কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য (পটলা) মাঠে উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি মাঠেই আসেননি। ক্লাব কর্তারা তাঁকে সকালেই বলে দিয়েছিলেন, ‘‘মাঠে এলে অপমানিত হবেন। ভাল ফুটবলাররা কেউ খেলবে না। আপনি আসবেন না।’’
দুই বিদেশি টরাস, রিচার্ড-সহ প্রথম একাদশের কোনও ফুটবলারই মাঠমুখো হননি। অনুপম সরকার, তপন মাইতি, স্নেহাশিস চক্রবর্তীর মতো যাঁরা লিগ টেবলের দু’নম্বর জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে তাঁরা কেউই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গী হতে চাননি। ক্লাব কর্তারা তাঁদের বারণও করে দিয়েছিলেন আসতে।
টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে এ দিন যাঁদের সাদার্ন সমিতির জার্সি পরে নামানো হয়েছিল তাঁরাও খেলতে চাইছিলেন না। অনেকেই বল পাস করার সময় হাসাহাসি করছিলেন। ইচ্ছে করে বিপক্ষকে একটা পেনাল্টিও দিয়ে দিলেন।
আরও একটা গড়াপেটার অভিযোগে সরগরম হয়ে থাকল ময়দান। এবং সেটা কলকাতা লিগের সব থেকে উপরের বিভাগ, প্রিমিয়ারে। প্রথম থেকে পঞ্চম- লিগের শেষ পর্বে ময়দানে গড়াপেটা হয় নিয়মিত। ভালবাসার পয়েন্ট দেওয়া-নেওয়া চলে নিরন্তর। কিন্তু তা বলে যেখানে ইস্ট-মোহন-সহ রাজ্যের সেরা ক্লাবগুলো খেলে, সেই পর্যায়েও গড়াপেটা!
আরও যেটা আশ্চর্যের তা হল গড়াপেটার অভিযোগে জড়িয়ে গেল রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং তিন বারের আই লিগ জয়ী কোচ সুভাষ ভৌমিকের নামও। তাঁদের গায়েও লেগে গেল কলঙ্কের দাগ। কারণ ওঁরা দু’জনেই টালিগঞ্জ অগ্রগামীর সঙ্গে জড়িত। মন্ত্রী অরূপ প্রেসিডেন্ট। আর সুভাষ টিডি। অরূপকে রাত পর্যন্ত ফোনে পাওয়া যায়নি। আর দেশের অন্যতম নামী কোচ সুভাষ গড়াপেটার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। বলে দিলেন, ‘‘কে গড়াপেটার কথা বলছে জানি না। ও সব তো মোহনবাগান ম্যাচ থেকেই শুনছি। অন্য দিন গোল পাচ্ছিলাম না। আজ গোল পেয়েছি। তাই চার গোল হয়েছে।’’
টালিগঞ্জ-সাদার্ন ম্যাচ গড়াপেটা হবে, ময়দানে গুঞ্জন ছিলই। খেলা শুরুর চব্বিশ ঘন্টা আগেই পোড় খাওয়া কোচ রঘু নন্দী সাংবাদিকদের ডেকে প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন, অবনমন বাঁচাতে টালিগঞ্জ অগ্রগামী গড়াপেটা খেলবে সাদার্ন সমিতির সঙ্গে। তিন পয়েন্ট উপহার দেবে সাদার্ন।
রঘুর আশঙ্কাই ঠিক । বৃহস্পতিবার ইস্টবেঙ্গল মাঠের ফল দেখার পর রঘুর গলা আরও জোরালো। ‘‘যা বলেছিলাম তাই তো হল। ক্ষমতা আছে বলে টালিগঞ্জ যা ইচ্ছে তাই করছে। তিন ম্যাচ না খেলেও সাত পয়েন্ট ম্যানেজ করে ফেলল।’’
মোহনবাগান ইচ্ছে করে ফুটবলার বদল করে টালিগঞ্জকে পয়েন্ট দিয়েছে, এই অভিযোগ ওঠায় তদন্ত কমিটি করতে বাধ্য হয়েছেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। মহমেডান ম্যাচ ১-১ হওয়ায় পরও গুঞ্জন উঠেছিল। কিন্তু এ দিন যা হল, তা চমকে দেওয়ার মতো।
টালিগঞ্জকে পয়েন্ট দিতে এতটাই মরিয়া ছিলেন সাদার্ন কর্তারা যে কোচ, সেরা ফুটবলারদের মাঠেই আসতে দেননি। অথচ এ বার লিগে সাদার্নের রানার্স হওয়ার সুযোগ ছিল।
এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, তা সত্ত্বেও কেন মাঠে আসেননি আপনি? সাদার্ন কোচ সুব্রত বললেন, ‘‘সকালে ক্লাবের কর্তারা আমাকে ফোন করে বললেন, ‘টাকার অভাব আছে সব ফুটবলারকে তাই মাঠে আনছি না।’ আপনারও আসার দরকার নেই। খারাপ ফল হলে অপমানিত হবেন।’’ কর্তাদের নির্দেশ মেনে সুব্রত মাঠে আসেননি। ফলে সহকারী কোচ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় মরসুমে প্রথমবার কোচিং করানোর সুযোগ পেয়ে যান। সাদার্নের এক ফুটবলার রাতে বললেন, ‘‘আরে ওদের তো দু’গোল দেওয়ার কথা। কেন যে চার গোল দিল। টালিগঞ্জ কিন্তু কথা রাখেনি।’’ সাদার্নের হাসাহাসির সুযোগে সহজেই গোল করে যান আদিলেজা, দীপেন্দু বিশ্বাস, সুনীলকুমার এবং সুরাবুদ্দিন।
টালিগঞ্জ কি এর পরেও অবনমন বাঁচাতে পারবে? তাদের পয়েন্ট এখন পাঁচ। মোহনবাগানের সঙ্গে হেরে যাওয়া ম্যাচের পয়েন্ট পেলে সেটা আট হবে। এখনও তাদের ম্যাচ বাকি পুলিশ, এরিয়ান এবং কালীঘাট এম এসের বিরুদ্ধে। টিডি সুভাষ বললেন, ‘‘চেষ্টা তো করছি। দেখা যাক কী হয়। মোহনবাগান ম্যাচের তিন পয়েন্ট আই এফ এ দেবে কি না কে জানে। ওখানে সব কিছুই হয়।’’
আইএফএ অবশ্য মোহনবাগান-টালিগঞ্জ ম্যাচের বিতর্কিত বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখছে ডার্বির টিকিট বিক্রির কথা ভেবে। পয়েন্ট কেটে নিলে মোহনবাগান যদি বড় ম্যাচের আগে ঝামেলা পাকায়, সেটাও অন্যতম কারণ সভা না ডাকার। সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘লিগ সাব কমিটির লোকেদের ধরা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ওই ম্যাচের ফয়সলা ডার্বির পরেই হবে।’’ সচিবের কথা শুনে অবশ্য ময়দানের ঘুঘু কর্তারা হাসছেন। তাঁদের সরস বক্তব্য, ‘‘কমিটির সবাই মনে হয় একসঙ্গে চাঁদে বেড়াতে গিয়েছেন। সে জন্য সচিব ফোনেও পাচ্ছেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy