চাই জয়: লাল-হলুদে আর্মান্দোর স্ট্র্যাটেজির ক্লাস। ছবি: উৎপল সরকার
এ বারের কলকাতা লিগে অভিনব এক স্ট্র্যাটেজি আমদানি করেছেন আর্মান্দো কোলাসোলিগকে গুরুত্ব না দেওয়া!
টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে খেতাব-যুদ্ধটাও সেই স্ট্র্যাটেজিকে হাতিয়ার করে জিততে চাইছেন গোয়ান কোচ।
মনে যা-ই থাকুক, টালিগঞ্জ ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে প্রকাশ্যে বলে দিচ্ছেন, “টালিগঞ্জ ম্যাচের আলাদা করে কোনও গুরুত্ব আমার কাছে নেই। শুরু থেকেই তো বলে আসছি, এই লিগ নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই।”
কলকাতা লিগে অবশ্য আগাগোড়া এই গুরুত্ব না দেওয়ার খেলাটাই মাঠের বাইরে খেলে গিয়েছেন র্যান্টিদের কোচ। যার নিট ফল, এই মুহূর্তে এ বারের লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম প্রধান দাবিদার ইস্টবেঙ্গল।
সোমবার যেমন, আর্মান্দোর অনুশীলনের ছবির সঙ্গে কোচের প্রকাশ্য দাবিকে অবশ্য মেলানো গেল না। সেখানে কোচ ভীষণ সিরিয়াস। কখনও র্যান্টি, ডুডুদের হাতে ধরে ভুল শুধরে দিচ্ছেন। কখনও আবার প্রহ্লাদ, অবিনাশ ধনরাজনরা ভুল করলেই কড়া ধমক দিচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, ফুটবলারদের তিনি নাকি বলে দিয়েছেন, শুধু নিজেদের খেলাটা উপভোগ করো। ম্যাচের ফল নিয়ে ভেবে নিজেদের উপর অযথা চাপ তৈরি করার কোনও প্রয়োজন নেই। দলের বর্তমান অধিনায়ক গুরবিন্দর সিংহ বললেন, “কোনও ম্যাচের চাপ নিতেই কোচ আমাদের বারণ করেছেন। শুধু খেলাটা উপভোগ করতে বলেছেন।”
এটাও আর্মান্দোর স্ট্র্যাটেজিরই অঙ্গ!
দলের প্রধান দুই স্ট্রাইকার র্যান্টি মার্টিন্স এবং ডুডু ওমাগবেমি প্রায় সব ম্যাচেই গোল করছেন। শেষ সাই ম্যাচে গোল পেয়েছেন লিও বার্তোসও। জুনিয়ার ব্রিগেডও নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়। সব মিলিয়ে আর্মান্দোর দল এখন সেই টাট্টু ঘোড়া, যারা তিরের গতিতে মরসুমের প্রথম ট্রফি ঘরে তোলার লক্ষ্যে ছুটছে।
আর্মান্দো নিজে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিলেন। হাসলেন, মজা করলেন। কিন্তু ফুটবলাররা সবাই ক্লাব তাঁবু ছাড়লেন গম্ভীর মুখে। দেখে মনে হল, কোকো, ড্যানিয়েলদের হারানোর চিন্তায় ডুবে রয়েছেন সবাই। এমনকী র্যান্টি, ডুডুরা চেষ্টা করলেন সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার। ডুডু তো রীতিমতো লুকোচুরি খেললেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে! সোজা রাস্তা দিয়ে না বেরিয়ে, গ্রিয়ার মাঠের জল-কাদা পেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে এত কসরত করেও সাংবাদিকদের এড়াতে পারলেন না। মৌন ব্রত ভাঙতেই হল ডুডুকে। বাড়ি ফেরার আগে বলে গেলেন, “খেতাব জিতলে সমর্থকদের উৎসর্গ করব।”
র্যান্টি আবার খেলায় পুরো মনঃসংযোগ করার জন্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। নাইজিরিয়ান গোলমেশিন এর আগে বলেছিলেন, “কোনও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে আমি কারও সঙ্গে কথা বলি না। নিজের খেলায় পুরোপুরি ফোকাস করে থাকি।” এ দিনও বোধহয় সেই প্রচেষ্টাই করছিলেন।
সব মিলিয়ে আর্মান্দো পরিস্থিতি হালকা রাখার চেষ্টা করলেও, খেতাবের ম্যাচের একটা অদৃশ্য চাপ কিন্তু কুয়াশার আস্তরণের মতোই ঘিরে রেখেছে লাল-হলুদকে।
মঙ্গলবারের ম্যাচের পর আর্মান্দোর ক্লাসের টানা এক মাস ছুটি চলবে। অনেকটা স্কুল-কলেজের পূজোর ছুটির মতোই। তার আগে কলকাতা লিগ জিতে পূজোর ছুটিকে আরও রঙিন করে তুলতে চান প্রহ্লাদ, অবিনাশরা।
১৯৭০-’৭৫ একটানা ছ’বার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। তার পর থেকে আর কখনও এত দীর্ঘ সময় কলকাতা লিগে কর্তৃত্ব করতে পারেনি তারা। এ বারের খেতাবি-লড়াই জিতলে অবশ্য ফের সেই কৃতিত্ব ছোঁয়ার কাছাকাছি চলে আসবে লাল-হলুদ টানা পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে।
এখন দেখার, ৩৯ বছর পর আসা এই সুযোগটা কতটা কাজে লাগাতে পারে আর্মান্দো ব্রিগেড!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy