জয়োল্লাস: অভাবনীয় জয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। পিএসজি-কে হারিয়ে শেষ আটে মেসি-রা। ড্রেসিংরুমে উৎসবের ছবি পোস্ট করলেন নেমার। ছবি: টুইটার।
বার্সেলোনা কেন বিশ্বের অন্যতম সেরা দল, সেটা আরও একবার প্রমাণ করল লিওনেল মেসি, নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র), লুইস সুয়ারেজ-রা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে পৌঁছতে হলে বুধবার ক্যাম্প ন্যু-তে পিএসজি-এর বিরুদ্ধে অন্তত ৫-০ গোলে জিততেই হতো। তাই আক্রমণাত্মক খেলা ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না বার্সার সামনে। সেই সঙ্গে ম্যানেজার লুইস এনরিকে-কে এটাও মাথায় রাখতে হয়েছিল, যাতে কোনও মতেই গোল করতে না পারে পিএসজি। কারণ, ঘরের মাঠে একটা গোল দু’টো গোলের সমান।
এই পরিস্থিতিতেও আমাকে মুগ্ধ করেছে এনরিকের স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তনের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত। ৩-৪-৩ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন বার্সেলোনা ম্যানেজার। সবচেয়ে বড় চমক ছিল মেসি-কে সেন্ট্রাল মিডফিল্ড পোজিশনে খেলানো। সামনে নেমার, সুয়ারেজ ও রাফায়েল নাসিমেন্তো (রাফিনহা)।
প্রথম লেগের ম্যাচে এমএসএন অর্থাৎ মেসি, নেমার, সুয়ারেজের ত্রিফলাই ছিল বার্সার ফরোয়ার্ড লাইনে। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল নামিয়েছিলেন এনরিকে। কিন্তু মেসিকে ওই ম্যাচে নড়তে দেয়নি পিএসজি-র ফুটবলাররা। মেসি আটকে যেতেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল বার্সার আক্রমণ। এই ম্যাচে মেসি একটু পিছন থেকে খেলায় পিএসজি-র যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল। আর মেসিও অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলছিল। কখনও আন্দ্রে ইনিয়েস্তা ও সের্জিও বুস্কেৎসের সঙ্গে অদৃশ্য ত্রিভুজ গড়ে তুলেছিল। কখনও আবার নেমার, সুয়ারেজ ও ইভান রাকিতিচের সঙ্গে ওয়াল-পাস খেলে গতি বাড়িয়ে বিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে ঢুকে পড়ছিল পেনাল্টি বক্সে।
পিএসজি-র ডিফেন্ডাররা বুঝতেই পারছে না এই আক্রমণের ঝড় কী ভাবে সামলাবে! বিভ্রান্ত হয়ে ওরা বোধ হয় ভাবছিল, মেসি-কে আটকাবে নাকি নেমার, সুয়ারেজ-কে ধরার চেষ্টা করবে? এই গোলকধাঁধায় পথ হারিয়েই ম্যাচের তিন মিনিটে প্রথম গোল খেল পিএসজি। সেই গোলটি করে গেল সুয়ারেজ।
শেষ প্রহরের তাণ্ডব
• ৮৮ মিনিট: নেমারের দুরন্ত ফ্রি কিক। ৩০ গজ দূর থেকে বাঁ দিকের কোণে বল রাখেন। স্কোর ৪-১।
• ৯০ মিনিট: সুয়ারেজকে বক্সে ফাউল। পেনাল্টি দিলেন রেফারি।
• ৯১ মিনিট: পেনাল্টি থেকে নেমারের গোল। স্কোর ৫-১।
• ৯২ মিনিট: পিএসজি বক্সের মধ্যে উঁচু বল। জেরার পিকে-র হেড গোলকিপারের হাতে।
• ৯৩ মিনিট: পিএসজি-র ফুটবলার বদল। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নামিয়ে গোল আটকানোর চেষ্টা।
• ৯৪ মিনিট: মেসিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড ভেরত্তির।
• ৯৫ মিনিট: নেমারের লম্বা লব পিএসজি বক্সে। অফ সাইড ফাঁদ এড়িয়ে সের্জি রবের্তোর শটে গোল। স্কোর ৬-১।
বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকারদের তালিকায় এই মুহূর্তে সুয়ারেজ-কে আমি প্রথম তিনের মধ্যেই রাখব। ওর ক্ষিপ্রতা আর গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপানোর প্রবণতা ডিফেন্ডারদের কখনও স্বস্তিতে থাকতে দেয় না। বার্সার প্রথম গোলটার কথাই ধরা যাক। থিয়াগো সিলভা ও মার্কোস কোরেয়া বুঝতেই পারেনি উরুগুয়ে স্ট্রাইকার কখন ওদের নজর এড়িয়ে ছয় গজের বক্সের ভিতর ঢুকে পড়েছে। যখন বুঝতে পারল, তখন আর কিছু করার নেই। ব্যাকহেডে গোল করে বার্সাকে এগিয়ে দিয়েছে সুয়ারেজ।
বার্সার আক্রমণের ঝড় সামলাতে না পেরেই ৪০ মিনিটে আত্মঘাতী গোল করে ফেলে পিএসজি-র লেফ্টব্যাক লঁ ভিন কুরজাওয়া। তবে আমি ওকে দোষ দিতে চাই না। মেসি-কে আটকানোর মতো অসম্ভব একটা কাজ ওকে দেওয়া হয়েছিল! আর যে দলে মেসি, সুয়ারেজ ও নেমার খেলে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডাদেরও পা কেঁপে যায়।
মেসি গোল করল পেনাল্টি থেকে ৫০ মিনিটে। তবে ওর অসাধারণ ফ্রি-কিকগুলোর একটা থেকেও যদি গোল হতো, তা হলে বেশি খুশি হতাম। এডিনসন কাভানি-র গোলে ব্যবধান কমাল পিএসজি। এ বার জয়ের জন্য ছয় গোল দিতেই হবে বার্সাকে। অর্থাৎ, ২৮ মিনিটে তিনটি গোল করতে হবে! আমার সেই দু’টো অবিস্মরণীয় ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ দু’টোই। একটাতে জিতেছিল লিভারপুল। অন্যটায় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু মেসিদের যে ম্যাচ দেখলাম, তার কাছে আগের সব ম্যাচও হার মানবে। বলতে দ্বিধা নেই, ফুটবলের ইতিহাসে যত ম্যাচ দেখেছি, এটাই সর্বকালের সেরা প্রত্যাবর্তন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy