Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বর্ণবৈষম্যকে হারিয়েও কর্কট অভিশাপের কাছে হার রাইসের

ইডেন গার্ডেন্স। ১০ নভেম্বর, ১৯৯১। লম্বা, ঋজু চেহারাটা সে দিন দক্ষিণ আফ্রিকা টিম নিয়ে মাঠে পা দেওয়া মাত্র শেষ হয়েছিল ক্রিকেট ইতিহাসের এক অন্ধকারময় অধ্যায়। হয়তো কিছুটা শাপমুক্তি ঘটেছিল তাঁর ক্রিকেট জীবনেরও। ক্রিকেটকে চির বিদায় জানানোর আগে অন্তত দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ ঘটেছিল তাঁর।

শাপমুক্তির দিন। ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকা টিম নিয়ে।

শাপমুক্তির দিন। ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকা টিম নিয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

ইডেন গার্ডেন্স। ১০ নভেম্বর, ১৯৯১। লম্বা, ঋজু চেহারাটা সে দিন দক্ষিণ আফ্রিকা টিম নিয়ে মাঠে পা দেওয়া মাত্র শেষ হয়েছিল ক্রিকেট ইতিহাসের এক অন্ধকারময় অধ্যায়। হয়তো কিছুটা শাপমুক্তি ঘটেছিল তাঁর ক্রিকেট জীবনেরও। ক্রিকেটকে চির বিদায় জানানোর আগে অন্তত দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ ঘটেছিল তাঁর।
ঘটনাটা এতটাই নাড়া দিয়েছিল বিয়াল্লিশ বছরের মানুষটাকে যে পরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আজ আমি বুঝতে পারছি চাঁদে প্রথম পা রাখার পর নিল আর্মস্ট্রংয়ের কী মনে হচ্ছিল।’’
ক্লাইভ এডওয়ার্ড বাটলার রাইস। জন্ম ২৩ জুলাই, ১৯৪৯। মৃত্যু ২৮ জুলাই, ২০১৫। ক্রিকেট দুনিয়া যাঁকে চেনে ক্লাইভ রাইস বলে। ঘনিষ্ঠদের কাছে যাঁর আদরের ডাক নাম ছিল ক্লাইভি। আর কলকাতার মানুষ তাঁকে মনে রেখেছে, সেই অধিনায়ক হিসেবে যিনি দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে বর্ণবৈষম্য যুগের ইতি টেনেছিলেন ইডেনে মহম্মদ আজহারউদ্দিনের সঙ্গে টস করতে নেমে। বর্ণবৈষম্যের ছায়ায় রাইসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন আটকে থেকেছিল ভারতের বিরুদ্ধে তিনটি ওয়ান ডে ম্যাচে। বয়সের কারণে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে আর খেলার সুযোগ ঘটেনি। কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়ার শ্রদ্ধা, ভালবাসা তিনি আদায় করে নিতে পেরেছিলেন নটিংহামশায়ারের হয়ে কাউন্টি খেলে। নটিংহামের ১৯৮১ ও ১৯৮৭ কাউন্টি চ্যাম্পিয়ন দলের নেতৃত্বও দেন তিনি। মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শোকস্তব্ধ ক্রিকেট পরিবার থেকে ভেসে এসেছে একের পর এক প্রতিক্রিয়া।
গ্যারি কার্স্টেন বলেছেন, ‘‘ক্লাইভ রাইসের মৃত্যুর খবরটা একটা বিরাট ধাক্কা। তরুণ বয়সে ও-ই ছিল আমার আইডল। রেস্ট ইন পিস রাইসি।’’ রাইসেরই সমসাময়িক দক্ষিণ আফ্রিকার আর এক প্রবাদপ্রতিম অলরাউন্ডার মাইক প্রোক্টরের বক্তব, ‘‘ক্লাইভের হৃদয়টা ছিল আফ্রিকার মতোই বড়। বিশ্বাস করতে পারবেন না, ও কতটা লড়াকু মানসিকতার ছিল। মাঠ এবং মাঠের বাইরে সেটা বার বার বোঝা গিয়েছে।’’
আর যিনি রাইসকে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে দেখেছিলেন, সেই সচিন তেন্ডুলকরের টুইট, ‘‘ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। আর সে রকমই ব্যক্তিত্ব।’’

কিংবদন্তি অলরাউন্ডারদের সঙ্গে। রিচার্ড হ্যাডলি, ক্লাইভ রাইস, কপিল দেব এবং ইয়ান বোথাম (নীচ থেকে উপরে)।

কী হয়েছিল যে ৬৬ বছর বয়সেই থেমে গেল রাইসের জীবন? ৪৯ বছর বয়সেই মাথার টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। যা আদতে দাঁড়িয়েছিল ক্যানসারে। মাস কয়েক আগে বেঙ্গালুরুতে এসে চিকিৎসা করিয়ে যান। গত রবিবার থেকে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর, যেটা ক্যানসারের ফলেই বলে মনে করা হচ্ছে, পরিবারের লোকজন কেপ টাউনের হাসপাতালে ভর্তি করান রাইসকে। কিন্তু মঙ্গলবার সমস্ত লড়াই শেষ হয়ে গেল।

অলরাউন্ডার রাইসের নাম উঠলেই তুলনা চলে আসে চার কিংবদন্তির নাম। কপিল দেব, ইয়ান বোথাম, রিচার্ড হ্যাডলি এবং ইমরান খান। রাইসের কৃতিত্ব এখানেই যে শুধু কাউন্টি এবং ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই নিজের জন্য এই জায়গাটা তৈরি করে নিতে পেরেছিলেন তিনি।

১৯৬৯ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক। ২২ বছর বয়সেই ১৯৭১-৭২-এর অস্ট্রেলিয়া সফরে নির্বাচিত। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য নীতির কারণে সেই সফর বাতিল হয়ে যায়। এর পর নির্বাসনের অন্ধকার এবং শুধু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। ট্রান্সভাল, নাটাল এবং নটিংহামশায়ারের হয়ে ৪৮২ ম্যাচ খেলে ২৬ হাজারের উপর রান, গড় চল্লিশের উপর। উইকেট নিয়েছেন ৯৩০ এবং সেখানে গড় ২২.৪৯। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর নটিংহামশায়ারের হয়ে কোচিংও করান রাইস।

ভারত থেকে চিকিৎসা করিয়ে গিয়ে রাইস বলেছিলেন, ‘‘চিকিৎসকরা অলৌকিক কাণ্ড করেছেন। আমি পুরো সুস্থ হয়ে গিয়েছি।’’

ক্রিকেট মাঠে যিনি অভিশাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এসেছেন, জীবনের শেষ লড়াইয়ে কোনও ‘অলৌকিকের’ সাহায্য আর পেলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE