প্রশ্ন: সুপ্রিম কোর্ট তো আজ অন্তিম দিনরেখা জানিয়ে দিল— ৬ অক্টোবর। হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটমহলে। বোর্ডের লোকজন গভীর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
লোঢা: এ ব্যাপারে আমার কী বলার থাকতে পারে?
প্র: বলবেন তো আপনিই। উচ্চতর আদালতের কাছে আপনার নতুন রিপোর্ট পৌঁছনোর পরেই তাদের নতুন বিধান।
লোঢা: বোর্ড তো আদালত প্রস্তাবিত সংস্কার কার্যকর করার প্রচুর সময় পেয়েছিল। সংস্কার নিয়ে আদালতে মামলা চলাকালীন ওরা সব রকম বক্তব্যও রেখেছে। সুপ্রিম কোর্ট হল দেশে বিচারব্যবস্থার শেষ কথা। তার প্রধান বিচারপতি নির্দেশ মান্য না করে হলে আমাকে তো সে কথা বোর্ডকে জানাতেই হবে। আমরাও তো চার মাসের একটা ডেডলাইনে রয়েছি। তার মধ্যে দু’মাসের বেশি চলে গিয়েছে। বোর্ড কিছুই কার্যকর করেনি। এর পর তো আমাদের সক্রিয় হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
প্র: গাওস্কর-কপিল-শাস্ত্রী এঁরা কিন্তু টেলিভিশনে খোলাখুলি বলেছেন তাঁরা কেন ভারতীয় বোর্ডের সাবেকি ঐতিহ্য ধরে রাখার পক্ষে।
লোঢা: আপনি তিন জনের নাম করলেন। আমি ছ’জন এক্স ক্যাপ্টেনের কথা বলতে পারি যাঁদের বক্তব্য রিপোর্ট তৈরি করার আগে আমরা খুব মন দিয়ে শুনেছি। ওঁরা হলেন তেন্ডুলকর, গাঙ্গুলি, দ্রাবিড়, কুম্বলে, কপিল দেব ও বেদী। একটা দফায় বেঙ্কটেশ প্রসাদ, শ্রীকান্ত আর মোহিন্দর অমরনাথের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়। বিষেণ বেদীর সঙ্গে তো দু’বার কথা হয়েছে।
প্র: বেদী এই লোঢা প্যানেলের সঙ্গে দু’বার কথা বলতে যাওয়ার জন্য বোর্ডের চরম বিরাগভাজন হয়েছেন। কানপুরে ভারতের পাঁচশোতম টেস্ট ম্যাচ বার্ষিকীতে অন্য ক্যাপ্টেনদের ডাকা হলেও বেদীকে বোর্ড ইচ্ছাকৃত বাদ দিয়েছে।
লোঢা: সে সব আমি জানি না। আমার কিছু বলা উচিত হবে না।
আমি যেটা বলতে পারি তা হল, গাওস্কর বা শাস্ত্রী তো তখনই মুখ খুলতে পারতেন। মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের সামনে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার সব রকম সুযোগ ওঁদের সামনে ছিল। বোর্ড যেমন সব রকম সুযোগ পেয়েছিল নিজেদের বক্তব্য পেশের। মামলার রায় তো এক দিনে হয়নি। শুনানি দীর্ঘ দিন ধরে চলেছে। কিন্তু এক বার যখন সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে, সেটাই চূড়ান্ত।
প্র: সৌরভ আপনার সঙ্গে বারকয়েক কথা বলেছেন।
লোঢা: হ্যাঁ, কতগুলো ব্যাপারে ওঁর কিছু প্রশ্ন ছিল। আমি সেগুলোর উত্তর দিই। খোলাখুলি সব জেনে নেওয়াই তো ভাল। গাওস্কর-শাস্ত্রীর প্রতি সব রকম শ্রদ্ধা রেখে বলছি, মনের কথা ওঁরা আগে খুলে বললেন না কেন?
প্র: দিনকয়েক আগের এই স্টেটাস রিপোর্ট কি আপনার সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়ার কথা ছিল?
লোঢা: ছিল না। অপ্রীতিকর হল ব্যাপারটা। কিন্তু উপায় নেই। বোর্ড বাধ্য করল আমাকে।
প্র: সুপ্রিম কোর্টের কড়া মনোভাবের পরেও বোর্ড মহলে নানান বিকল্প সম্ভাবনার কথা উঠছে।
লোঢা: বুঝলাম না। সুপ্রিম কোর্ট হল শেষ কথা। তার ওপর আর কিছু চলে বলে আমার তো জানা নেই।
প্র: বলা হচ্ছে আপনার প্রস্তাবিত কাঠামো অস্ট্রেলীয় বোর্ডের কাঠামো ভিত্তিক। যেখানে সিইও আসল লোক। ভারতীয় বোর্ড মাসতিনেক আগে মাইনে করা সিইও রেখেছে। শোনা যাচ্ছে আপনার সংস্কার কার্যকর হলেও এই সিইওকে শিখণ্ডি রেখে সাবেকি কর্তারাই বোর্ড চালাবেন।
লোঢা: সেটা সম্ভব হবে না। কাজের ডিস্ট্রিবিউশনটা দু’ভাবে যে হবে, সংস্কারে পরিষ্কার বলা আছে। একটা দিক গভর্নেন্স। আর একটা দিক ম্যানেজমেন্ট। সিইওর কাজ হল বোর্ডের ম্যানেজমেন্টটা পেশাদারি দক্ষতা সহ চালানো। সিইওর দায়িত্বে কিন্তু সার্বিক গভর্নেন্স পড়ে না। মাথার ওপরে থেকে সেই কাজ বোর্ড কর্তারাই করবেন।
প্র: আপনার নিজের কী মনে হচ্ছে? বোর্ড যতই শুক্রবার বিশেষ সাধারণ সভা ডাকুক, এখনও তাদের মনোভাব যুদ্ধং দেহী। সে ক্ষেত্রে ৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
লোঢা: এ ভাবে ‘যদি’ ‘হয়তো’ টাইপ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কোনও কথা বলা যায় না। আগে ঘটুক। তখন দেখতে পাব।
প্র: একটা কথা বলুন। আপনার প্রস্তাবে ছিল জাতীয় নির্বাচকের সংখ্যা হবে তিন। বোর্ড তো না মেনে পাঁচ নির্বাচক নিয়োগ করেছে। এ বার সুপ্রিম কোর্ট ৬ তারিখ কোনও কড়া পদক্ষেপ নিলে কি এই পাঁচ নির্বাচক প্যানেল বাতিল হয়ে যাবে?
লোঢা: ইয়েস। যে সব সিদ্ধান্ত আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো পরিষ্কার খারিজ হয়ে যাবে।
প্র: সাধারণ ক্রিকেট সমর্থকদের একটা বড় অংশ কিন্তু লোঢা সংস্কারে খুশি। তাদের মনে হচ্ছে কিছু কর্মকর্তা মৌরসি পাট্টা গেড়ে বসেছিল। এ বার তাদের যে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে, ঠিকই হচ্ছে।
লোঢা: সমর্থকদের কথা মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের গোটা সংস্কারটা তৈরি। আমাদের রিপোর্টে খুব আন্তরিক ভাবে ওদের কথা মাথায় রাখা হয়েছে।
প্র: আরও একটা কথা শোনা যাচ্ছে। সরকারি স্পোর্টস বিল এসে নাকি সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বোর্ড কর্তারা আবার স্বমহিমায় ফেরত আসবেন।
লোঢা: এর ভাল করে উত্তর দেওয়াটা এতই জটিল যে, ফোনে দু’মিনিটের ব্যাখ্যায় সম্ভব নয়। এটুকু বলতে পারি, আমার নিজের এজলাসেই মুল্লাপেরিয়ার ড্যাম নিয়ে কেরল সরকারের জারি করা একটা আইন বিচারের জন্য এসেছিল। আমি কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে বসে সেই আইনকে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy