Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গতির সামনে অস্ট্রেলীয়দের এত অসহায় কখনও দেখিনি

যে সময় টেস্ট ক্রিকেট সে ভাবে লোক টানতে পারছে না, আমরা টানটান উত্তেজনার একটা সিরিজ দেখলাম। এই ধরনের ম্যাচই তো ক্রিকেটের আসল বিজ্ঞাপন।

ত্রাস: গতি আর রিভার্স সুইংয়ে ভারতের সেরা উমেশ। —ফাইল চিত্র।

ত্রাস: গতি আর রিভার্স সুইংয়ে ভারতের সেরা উমেশ। —ফাইল চিত্র।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

যে সময় টেস্ট ক্রিকেট সে ভাবে লোক টানতে পারছে না, আমরা টানটান উত্তেজনার একটা সিরিজ দেখলাম। এই ধরনের ম্যাচই তো ক্রিকেটের আসল বিজ্ঞাপন। তাই কোনও ভাবেই দু’দলের এই লড়াকু মানসিকতাকে নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরা উচিত নয়। সবাইকে বুঝতে হবে, যখন চ্যাম্পিয়ন প্লেয়াররা একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে, সে লড়াইয়ের তীব্রতা কতটা মারাত্মক থাকে। জেতার জন্য সবাই কতটা মরিয়া মেজাজে থাকে।

সত্যি কথা বলতে কী, আমি ভাবিনি অস্ট্রেলিয়া এতটা লড়াই করবে। বিশেষ করে যেখানে ওদের টিমে এত তরুণ প্লেয়ার ছিল। স্টিভ স্মিথের কৃতিত্বও অসাধারণ। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ও নিজেকে তুলে আনতে পেরেছে। সব রকম পরিস্থিতিতে পারফর্ম না করতে পারলে এটা সম্ভব নয়। পুণেতে খেলা ইনিংসটাই ওর সেরা। কঠিন পিচেও স্মিথ কিন্তু আগ্রাসী ক্রিকেটটা খেলেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের উইকেটে যেটা মোটেও খুব সহজ কাজ নয়।

সিরিজ হারলেও আমার মনে হয় স্মিথ কিছুটা তৃপ্তি নিয়ে দেশে ফিরতে পারবে। ওর বোলাররা ওকে সেই তৃপ্তিটা দেবে বলেই মনে হয়। বিশেষ করে নেথান লায়ন। নব্বই দশকের শেষ দিকের অস্ট্রেলিয়া বা ২০০৬-২০১০ সালের ইংল্যান্ড— সবারই অস্ত্র ভাণ্ডারে এক জন ভাল স্পিনার ছিল। লায়ন কিন্তু স্মিথের হাতে একটা বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

ভারত আরও একবার বুঝিয়ে দিল, ঘরের চেনা পরিবেশে ওদের হারানো কতটা কঠিন। পুণেতে হেরেও সিরিজটা ঠিক জিতে বেরিয়ে গেল। আমি দু’টো দিনের কথা আলাদা করে বলব বিরাট কোহালিদের এই সিরিজ জয়ের পিছনে। এক, বেঙ্গালুরুর দ্বিতীয় ইনিংস। যেখানে চেতেশ্বর পূজারা এবং অজিঙ্ক রাহানে নিজেদের ক্লাসটা দেখিয়ে দিল। দুই, ধর্মশালার তৃতীয় দিনটা। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা পেসের সামনে ভয় পাচ্ছে, এ রকম দৃশ্য অনেক দিন দেখিনি। ওই টেস্টেই উমেশ যাদব প্রথম নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী বল করল। এখন ওকে ধারাবাহিকতাটা রেখে যেতে হবে। বিদেশ সফরে উমেশ-মহম্মদ শামি-ভুবনেশ্বর কুমারের লাইন আপ কিন্তু ভারতের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।

বিদেশ সফরের জন্য ভারতকে আর এক জন ফাস্ট বোলার খুঁজে পেতে হবে। ইশান্ত শর্মা ভাল বল করেছে, কিন্তু ও কিছুতেই উইকেট পাচ্ছে না। আমার মতো যারা ইশান্তের শুভানুধ্যায়ী, তাদের কাছে ব্যাপারটা খুব হতাশার। ওর প্রতিভা বা চেষ্টা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু উইকেট সংখ্যায় সেটার প্রতিফলন হচ্ছে না। কে এল রাহুলের ওপর আমার আস্থাটা বেড়েই চলেছে। এই সিরিজে ওর ক্লাসটা আরও একবার বোঝা গেল।

স্পিনারদের থেকে যেটা চাওয়া হয়েছিল, সেটাই পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কুলদীপ যাদবের নির্বাচনটা ভারতের হাতে আরও বিকল্প এনে দিল। ভাল পিচেও কুলদীপের বৈচিত্র খুব কাজে আসবে। মাঝে মাঝে এমন সময় আসে যখন বিশেষ কোনও প্রতিভাকে আলাদা যত্ন করতে হয়। ভারতীয় দলে অনিল কুম্বলে আছে। তরুণদের জন্য আদর্শ কোচ। এ বার টিম এবং নির্বাচকদের বাড়তি উদ্যোগটা দেখাতে হবে কুলদীপকে এক জন পরিণত স্পিনার করে তুলতে।

ধর্মশালায় ভারতের জয় আমার বিশ্বাসকে আরও মজবুত করে দিল এই কারণেই যে, ভারতের এই টিম পিচের সাহায্য ছাড়াও জিততে পারে। এই ধরনের পিচে খেলা মানে বিদেশের পরিবেশের জন্যও পুরোপুরি তৈরি হয়ে থাকা। ওয়েল ডান, বিরাট আর অজিঙ্ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Umesh Yadav Pacers India Australia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE