Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
রোলস রয়েসকে জার্মানিতেই রেখে দিল ডর্টমুন্ড

পিৎজা-পাস্তা ছেড়ে ইউরোর খিদে বাড়াচ্ছেন হুমেলস

দ্রিমি...দ্রিমি...দ্রিমি...। শব্দটা বাড়ছে। টানেলের সাউন্ড সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ছে লেড জেপেলিনের গানটা। টানেলটা সরু, পাশাপাশি তিন জন হাঁটা সমস্যার। আর গোটা পঁচিশেক পা। গানটা উদ্দাম হয়ে উঠছে। ওই যে সামনে ফাঁকা জায়গাটা দেখা যাচ্ছে। ওই তো সিগন্যাল ইডুনা পার্কের সবুজ গালিচা। নাকি ওটা সেই রোমান কলোসিয়াম, যেখানে এখনই শুরু হবে গ্ল্যাডিয়েটরদের মরণপণ যুদ্ধ। লেড জেপেলিনের উত্তাল সঙ্গীতে শুধুই যে যুদ্ধের দামামা।

হুমেলস-রয়েস। ডর্টমুন্ডের দুই তারকা।

হুমেলস-রয়েস। ডর্টমুন্ডের দুই তারকা।

কৌশিক দাশ
ডর্টমুন্ড শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

দ্রিমি...দ্রিমি...দ্রিমি...।
শব্দটা বাড়ছে। টানেলের সাউন্ড সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ছে লেড জেপেলিনের গানটা। টানেলটা সরু, পাশাপাশি তিন জন হাঁটা সমস্যার। আর গোটা পঁচিশেক পা। গানটা উদ্দাম হয়ে উঠছে। ওই যে সামনে ফাঁকা জায়গাটা দেখা যাচ্ছে। ওই তো সিগন্যাল ইডুনা পার্কের সবুজ গালিচা। নাকি ওটা সেই রোমান কলোসিয়াম, যেখানে এখনই শুরু হবে গ্ল্যাডিয়েটরদের মরণপণ যুদ্ধ। লেড জেপেলিনের উত্তাল সঙ্গীতে শুধুই যে যুদ্ধের দামামা।
এই টানেল দিয়েই বেরিয়ে আসে এগারোটা হলুদ জার্সি। টানেলে একই ভাবে বাজে লেড জেপেলিনের গান। হোম ম্যাচ থাকলে ইডুনা পার্কে এ ভাবেই আত্মপ্রকাশ হয় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের।
রবিবার দুপুরে স্টেডিয়াম গাইড বলছিলেন, টানেলে ঢোকার দরজাটা এতটাই নিচু যে, ফুটবলারদের মাথায় গুঁতো লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাড়ে ছ’ফুটের উপর লম্বা ইয়ান কোহলার নাকি প্রায়ই গুঁতো খেতেন। রবিবার বিকেলে যে দুই তারকা ডর্টমুন্ড টিমের সঙ্গে মাঠে নামলেন, তাঁদেরও নিশ্চয়ই মাথা নিচু করতে হয়েছিল। এক জন প্রায় ছ’ফুট। অন্য জন তো আরও লম্বা।
মার্কো রয়েস। ম্যাটস হুমেলস।
মাঠে নামার আগে দু’জনের মাথা ঝুঁকে গেলে কী হবে, এই দুইকে নিয়েই যে মাথা উঁচু করে থাকার স্বপ্ন দেখছে ডর্টমুন্ড। স্বপ্ন দেখছে জার্মানি।
ব্রাজিল বিশ্বকাপের ঠিক আগে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া রয়েস এ মরসুমে শুরুটা দুর্দান্ত করেছেন। হ্যাটট্রিকও হয়ে গিয়েছে। ফর্ম এতই ভাল যাচ্ছে যে, এখানে আসার পর থেকে শুনছিলাম পেদ্রোর বদলি হিসেবে বার্সেলোনা রয়েসকে তুলতে মরিয়া। ২ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের অফারও আছে। গুগল সার্চে রয়েসের নামটা ফেললে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ক্লাব নানা টোপ ফেলে বসে আছে জার্মান তরুণের জন্য। বার্সা তো ছিলই। ইপিএলের বড় ক্লাবগুলোও রয়েসকে চেয়েছিল। তা হলে কি আগামী কয়েক ঘণ্টায় (বড় লিগগুলোর ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর) জার্মানি ছেড়ে চলে যেতে পারে ‘রোলস রয়েস’?

প্রায় ৭০ লাখ ডর্টমুন্ড সমর্থককে নিশ্চিন্ত করে ক্লাবের সেলস এবং মার্কেটিং ডিরেক্টর কার্স্টেন ক্রেমার আনন্দবাজারকে বলে দিলেন, ‘‘রয়েস কোথাও যাচ্ছে না। ওর জন্য অনেক অফার এসেছিল। কিন্তু দিনকয়েক আগেই ও আমাদের সঙ্গে লম্বা চুক্তি করে নিয়েছে। মার্কো আগামী কয়েক বছর ডর্টমুন্ডেই থাকছে।’’

জার্মান ফুটবলের ‘নেক্সট বিগ থিং’ রয়েস হলেও, ডর্টমুন্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার কিন্তু তিনি নন। রবিবার সিগন্যাল ইডুনা পার্কের হাফ কিলোমিটার আগে থেকে যে হলুদ সমুদ্রটা দেখছিলাম, তার বেশির ভাগের জার্সির পিঠেই অন্য আর একটা নাম লেখা ছিল।

ম্যাটস হুমেলসই কি আপনাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার?

সঙ্গে থাকা ডর্টমুন্ড ক্লাবের প্রতিনিধি, জার্মান তরুণী আনিখা বলছিলেন, ‘‘অবশ্যই। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের প্লেয়ার। আমাদের ক্যাপ্টেন। যথেষ্ট সেক্সি, সাংবাদিকদের সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল। সব মিলিয়ে আমাদের সেরা প্যাকেজ।’’

কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ারের গত বছর ক্লাব মরসুমটা জঘন্য কেটেছিল। কারণ প্রায় অবিশ্বাস্য। গত বছর ছুটির সময় হুমেলস নাকি এত বেশি খেয়ে ফেলেছিলেন যে ফিটনেসের বারোটা বেজে গিয়েছিল!

এ বার ছবিটা বদলাল কী করে? জানা গেল, এর পিছনে আছে ক্লাবের নতুন কোচ টুখেলের কড়া স্ট্র্যাটেজি। হুমেলসের ছুটিছাটায় ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়া তো বন্ধ হয়েই গিয়েছে, তা ছাড়া আরও একটা কাজ করেছেন টুখেল। ডর্টমুন্ডের ট্রেনিং গ্রাউন্ডের পাশেই একটা স্থানীয় রেস্তোরাঁ আছে। যেখান থেকে গত বছর পর্যন্ত এন্তার পিৎজা-পাস্তা এসেছে ডর্টমুন্ড প্লেয়ারদের জন্য। টুখেল এসে সে সব আগেই বন্ধ করে দিয়েছেন।

ফর্মে থাকা রয়েস আর ফিটনেস ফিরে পাওয়া হুমেলস। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন কোচের স্ট্র্যাটেজি, যাকে এখানে বলা হচ্ছে টিকি-টুখেল। লম্বা পাস, হাওয়ায় বল রেখে খেলার চেয়ে ছোট-ছোট পাস, কাউন্টার আক্রমণ নির্ভর খেলা। সব মিলিয়ে ডর্টমুন্ড কিন্তু স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে।

স্বপ্ন দেখছে জার্মানিও। রয়েসের ক্লাব সতীর্থ স্মেলজার বলছিলেন, ‘‘রয়েস একটুর জন্য বিশ্বকাপ খেলতে পারেনি। এ বার কিন্তু ওর খিদেটা আরও বেশি থাকবে।’’ খিদে থাকবে হুমেলসেরও।

বাজনাটা কিন্ত বাজছে। দ্রিমি, দ্রিমি, দ্রিমি। ইউরো আসছে, ইউরো আসছে, ইউরো আসছে...!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE