Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইতিহাসটা বদলে দিতে চাই

ঈশ্বরের শাপমুক্তি। নাকি স্বপ্নভঙ্গের আর এক অধ্যায়। ৩ জুলাই ২০১৫-র রাতে এমনই এক অদৃশ্য শিরোনাম মুড়ে দিয়েছিল বিশ্বফুটবলকে। আর্জেন্তিনার দশ নম্বর নেমেছিলেন অগ্নিপরীক্ষায়। নামের পাশে অদৃশ্য দাগটা মুছতে।

জন্মদিনে মেসির সামনে কেক। আর্জেন্তিনার টিম হোটেলে। ছবি টুইটার

জন্মদিনে মেসির সামনে কেক। আর্জেন্তিনার টিম হোটেলে। ছবি টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৯:২৬
Share: Save:

ঈশ্বরের শাপমুক্তি। নাকি স্বপ্নভঙ্গের আর এক অধ্যায়।

৩ জুলাই ২০১৫-র রাতে এমনই এক অদৃশ্য শিরোনাম মুড়ে দিয়েছিল বিশ্বফুটবলকে। আর্জেন্তিনার দশ নম্বর নেমেছিলেন অগ্নিপরীক্ষায়। নামের পাশে অদৃশ্য দাগটা মুছতে। কিন্তু সান্তিয়াগোর সেই রাতে চিলির বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনার হারটা যেন বুঝিয়ে দিয়েছিল, ক্লাবের হয়ে তিনি ঈশ্বর হতে পারেন কিন্তু দেশের জার্সিতে রক্তমাংসের মানুষই। যাঁর অতিমানবীয় ফুটবল দক্ষতাও দেশকে আর একটা অভিশপ্ত রাত থেকে বাঁচাতে পারেনি।

সান্তিয়াগো তাঁকে যা দিতে পারেনি, এক বছরের মধ্যে নিউ জার্সি সেই শূন্যস্থান মুছে দিতে হাজির হয়েছে। এক বছরের মধ্যে মুখে চাপা দাড়ি ছাড়া আর কোনও বদল আসেনি। দেশকে ট্রফি দেওয়ার অদম্য জেদও কমেনি। প্রমাণ করার তাগিদও কমেনি যে দেশকেও তিনি সোনার রাত উপহার দিতে পারেন। তিনি— লিওনেল মেসি। যিনি শতবর্ষের কোপার ফাইনালে চিলির বিরুদ্ধে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে বলছেন, ‘‘ইতিহাসটা বদলে দিতে চাই।’’

ক্লাবের জার্সিতে যা প্রায় ভাবা যায় না, দেশের জার্সিতে নামলে সে সব শুনতে হয় মেসিকে। সমালোচকদের বুলেটগুলো তখন বেশি করে ধেয়ে আসে এলএম টেনকে লক্ষ্য করে। দিন কয়েক আগেই তো দিয়েগো মারাদোনার মতো কিংবদন্তিও মেসির নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। ফাইনালে তাই মাঠের ভিতরের পাশাপাশি বাইরের চ্যালেঞ্জটাও সামলাতে হবে মেসিকে।

এটাও সত্যি যে, এক নম্বর হলেও ১৯৯৩-র পরে কোনও বড় ট্রফি ঢোকেনি দেশে। তার মাঝে ফ্রান্স, স্পেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ব্রাজিল পঞ্চমবার বিশ্বকাপ জিতেছে। কিন্তু আর্জেন্তিনা যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গিয়েছে। মেসি বলছেন, ‘‘আর্জেন্তিনার যা ফুটবল ঐতিহ্য তাতে আমাদের আরও ট্রফি জেতা উচিত। ট্রফি জেতার দিক দিয়ে আমরাও বাকি বড় দেশগুলোর সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে থাকতে চাই।’’

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

তিন বার ফাইনালে হার। গত দু’বছরের মধ্যে দু’বার। বিশেষজ্ঞদের মতে এটাই হয়তো মেসির শেষ সুযোগ দেশের হয়ে ট্রফি জেতার। যা নিয়ে আর্জেন্তাইন অধিনায়ক বলছেন, ‘‘জানি না এটাই আমার দেশের হয়ে ট্রফি জেতার শেষ সুযোগ কি না। কিন্তু আমাদের সব কিছু উজাড় করে দিতে হবে শতবর্ষের কোপা জিততে। এই নিয়ে চতুর্থবার কোনও ফাইনাল খেলছি। গল্পটা এ বার পাল্টাতে চাই।’’

মেসি ট্রফি জিতে ইতিহাস পাল্টাতে পারবেন কি না সেটা তো সময় বলবে। কিন্তু রাজপুত্রর উপস্থিতি গোটা যুক্তরাষ্ট্রকে যে পাল্টে দিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যে দেশে খেলা বলতে সবাই জানে বেসবল বা বাস্কেটবল, সে দেশই এখন মেসি-ম্যানিয়ায় আক্রান্ত। এলএম টেনের এক ঝলক দেখতে ব্যারিকেড ভেঙে সবাই মাঠে ঢুকে যাচ্ছেন। মেসি মাঠে ঢোকার আগে সেল্ফির আব্দার। ঈশ্বরকে দেখার সুযোগ তো রোজ রোজ পাওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থকদের আবেগই হয়তো মেসিকে বাড়তি তাতাচ্ছে একবার দেশের জার্সিতে ট্রফি জেতার জন্য। পানামার বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক হোক বা যুক্তরাষ্ট্রের গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে ২৫ গজের ফ্রি-কিক, অনবদ্য সমস্ত মুহূর্ত উপহার দিয়ে যাচ্ছেন এ বার কোপায়।

ফাইনালের ৪৮ ঘণ্টা আগে দেশের ফে়ডারেশনকে কটাক্ষ করে আবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন মেসি। কিন্তু তার পরে ক্ষমা চেয়ে এলএম টেন বলছেন, ‘‘আমি ক্ষমা চাইছি কারণ ফাইনালের আগে এ রকম কথা বলা উচিত হয়নি। অনেক কিছুই চলছে এখানে কিন্তু এখন সে সব ভুলে ফাইনালে মন দেওয়া উচিত।’’

দেশের হয়ে প্রথম ট্রফি আর মেসির মধ্যে এ বারও দাঁড়িয়ে সেই চিলি। শতবর্ষের কোপার প্রথম ম্যাচে আর্জেন্তিনা ২-১ জিতেছিল চিলির বিরুদ্ধে। কিন্তু টুর্নামেন্ট যত এগিয়েছে, চিলি ফর্ম ফিরে পেয়েছে। আর আর্জেন্তিনা মিনি হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। ফাইনালের আগে এখনও অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়া, নিকোলাস গায়তানের মতো ফুটবলাররা অনিশ্চিত। এজেকিয়েল লাভেজ্জি আগেই হাতে চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন।

এর মধ্যে আবার হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন চিলির কোচ। হুয়ান আন্তোনিও পিজ্জি বলছেন, ‘‘প্রতিটা ম্যাচ জেতার মানসিকতা নিয়ে খেলতে হয়। আমার দলের ফুটবলাররা দেশের জন্য সব কিছু উজাড় করে দেয়। আমার ছেলেরা সবাই কিন্তু ভাল ফর্মে আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Messi copa america
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE