Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ইশান্তকে নিয়ে বিরক্ত প্রাক্তনরা

সিরিজ জয়ের আগমনিতে বেসুরো দুই ‘অগ্নিশর্মা’

সোমবারের সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে রোহিত ও ইশান্ত, দুই শর্মার মধ্যে মিল কোথায়? দু’জন একই দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের সফল চরিত্র। দু’জন একই দিনে টিমকে গর্ব করার মতো পারফরম্যান্স দিয়ে গেলেন। আবার দু’জন একই দিনে জড়িয়ে পড়লেন নাটকে। ইশান্ত মাঠে। শ্রীলঙ্কা পেসার ধামিকা প্রসাদের সঙ্গে তাঁর স্লেজিং-কাণ্ড যে পর্যায়ে গেল, তাতে শেষ পর্যন্ত আইসিসির নির্বাসনের কোপ ঘাড়ে এসে পড়লে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
কলম্বো শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

সোমবারের সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে রোহিত ও ইশান্ত, দুই শর্মার মধ্যে মিল কোথায়?
দু’জন একই দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের সফল চরিত্র। দু’জন একই দিনে টিমকে গর্ব করার মতো পারফরম্যান্স দিয়ে গেলেন। আবার দু’জন একই দিনে জড়িয়ে পড়লেন নাটকে। ইশান্ত মাঠে। শ্রীলঙ্কা পেসার ধামিকা প্রসাদের সঙ্গে তাঁর স্লেজিং-কাণ্ড যে পর্যায়ে গেল, তাতে শেষ পর্যন্ত আইসিসির নির্বাসনের কোপ ঘাড়ে এসে পড়লে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না। ধামিকা দিয়ে শুরু করে সেই গনগনে আগুনের লাভাস্রোত একে একে দীনেশ চন্ডিমল থেকে উপুল থরঙ্গা, সবার দিকে ছুটে গেল। যা দুর্দান্ত বোলিং সত্ত্বেও মনোজ প্রভাকরের মতো প্রাক্তন ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের প্রখর সমালোচনা কুড়োচ্ছে। রোহিত আবার যেটা ঘটালেন, তা মাঠের বাইরে। সাংবাদিক সম্মেলনে। সাংবাদিকদের চোখা প্রশ্নের উত্তরে চোখা এবং অতিনাটকীয় জবাব দিয়ে। এবং শেষ পর্যন্ত ‘দুর্দান্ত সব প্রশ্ন পেলাম, থ্যাঙ্ক ইউ’ বলতে বলতে ড্রেসিংরুমে চলে গিয়ে!
গোটা সিরিজেই লঙ্কা প্লেয়ারদের সঙ্গে ভাল রকম নরমে-গরমে চলছিল ভারতের এক নম্বর পেসারের। আউট করার পর ব্যাটসম্যানকে উত্তেজিত ভাবে মাঠ ছাড়তে বলে ইতিমধ্যে তাঁর মোটা অঙ্কের জরিমানা হয়েছে। কিন্তু এ দিনের এসএসসি দেখল, তাতে কোনও কাজ হয়নি। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের শেষ পর্ব চলছে তখন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে শেষ জুটিতে ইশান্ত। দেখা গেল, দিল্লিওয়ালা স্টান্স নেওয়ামাত্র ধামিকা প্রসাদের হাতে বল তুলে দিলেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ। এবং পরপর বাউন্সার! আর ‘ডাক’ করতে-করতে এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়লেন ইশান্ত যে, সিঙ্গলস নিয়ে ধামিকার প্রান্তে যাওয়ার সময় হেলমেটে অদ্ভুত ভাবে হাত দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। যেন বোঝাতে চাওয়া, মাথায়, আমার মাথায় মারো!
আম্পায়ার নাইজেল লং সঙ্গে সঙ্গে ভারত অধিনায়ক বিরাট এবং ইশান্তকে ডেকে নেন। প্রেসবক্স থেকে যেটুকু বোঝা গেল, আম্পায়ারদের কথাবার্তা মোটেও সুখকর ছিল না। ইশান্তকেও উত্তেজিত ভাবে অভিযোগ করতে দেখা যায়। মুহূর্তে ম্যাচ থেমে মাঠে একটা জটলা তৈরি হয়ে যায়। অ্যাঞ্জেলোও চলে যান সেখানে। তাতেও পরিস্থিতিকে শান্ত করা যায়নি। উল্টে এ সবের মধ্যে চন্ডিমল ভারতীয় পেসারকে আবার ছোট্ট করে ধাক্কা দিয়ে বসেন। যার চরম শোধ ইশান্ত তোলেন চন্ডিমলকে আউট করার পর। তাঁর মুখের কাছে গিয়ে চিত্‌কার করতে থাকেন। নিজের মাথা চাপড়াতে থাকেন। এমনকী থরঙ্গাকে আউট করেও স্লেজিং বন্ধ করেননি। এগুলো তবু ও রকম গনগনে ঘটনার পর প্রত্যাশিত। প্রত্যাশিত নয়, ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার পর এসএসসির ছবি। অশ্বিন আউট হওয়ার পর তাঁর জন্য আর দাঁড়াননি ইশান্ত। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সোজা ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড়তে থাকেন! এবং তাঁর পিছনে আরও একজন দৌড়তে থাকেন। নামটা? কেন, ধামিকা প্রসাদ!

দিল্লি পেসারের যে নাটকীয় আচরণ মোটেও পছন্দ হচ্ছে না প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারদের। জাভাগল শ্রীনাথকে কর্নাটকে ফোনে ধরা হলে তিনি বললেন, “ম্যাচ দেখিনি। তাই ওকে নিয়ে বলাটা ঠিক হবে না।” কিন্তু দিল্লি থেকে মনোজ প্রভাকর বললেন। তিরানব্বইয়ে শেষ বার যে ভারতীয় টিম শ্রীলঙ্কা থেকে সিরিজ জিতে যায়, সেই টিমে প্রভাকর ছিলেন। ম্যাচে ছ’টা উইকেটও নিয়েছিলেন। “আরে, ও তো এমন করতে থাকল যেন মহাজাগতিক কিছু করছে! এই পিচ পেলে আমি তো আমাদের ম্যাচটায় ছ’টার জায়গায় দশটা তুলতাম। কিছুই তো করতে হচ্ছে না। সেখানে এমন বাচ্চাদের মতো আচরণের মানে কী?” বিরক্তিতে গরগর করছিলেন প্রভাকর। সঙ্গে আরও যোগ করলেন, “ওকে বুঝতে হবে, সাতষট্টি টেস্ট খেলা হয়ে গিয়েছে। শিশুর মতো কাজ-কারবার ওকে মানায় না। দেখে তো মনে হল, নিজের উপরই হতাশায় ও রকম হেলমেটে ঠুকল, তেড়ে গেল। কীসের এত ফ্রাস্ট্রেশন? ম্যাচটা তো তোরাই জিতছিস। কিন্তু এক বার নির্বাসন খেয়ে গেলে, তখন টিমই ভুগবে।”

আশঙ্কা মিথ্যে নয়। ইশান্তের নামে রিপোর্ট জমা পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে এক টেস্ট বা তিন ওয়ান ডে-র নির্বাসন হতে পারে। সেটা হলে, সম্ভবত দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে তাঁকে পাওয়া যাবে না। রোহিত শর্মার ‘‘ধামিকা-ইশান্তকে চা খেতে দেখে এলাম তো’’-তেও কিন্তু তখন চিঁড়ে ভিজবে না।

মুম্বইকর নিজে আবার পরে যা করলেন, অবাক করার মতো। সাধারণত মেজাজ হারান না। কিন্তু তাঁর ব্যাটিং ঘিরে মিডিয়ার এত দিনের সমালোচনামূলক লেখালেখির প্রশ্ন উঠতেই প্রায় ক্ষেপে গেলেন রোহিত। একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ক্রিজে জমে গিয়েও উইকেট ছুড়ে আসার রোগ নিয়ে তাঁর মতামত কী? রোহিত পাল্টা বলেন, “আগে বলুন, উইকেট ছুড়ে দেওয়া মানে কী?” তাঁকে তাঁর আজকের নির্দশনটাই বলা হলে রোহিত জবাব দেন, “ঠিক একই শটে সকালে প্রদীপকে বাউন্ডারি মেরেছিলাম। আপনি তখন নিশ্চয়ই হাততালি দিয়েছিলেন!” বলে আরও যোগ করেন, “শুনুন, আমি কারও কথায় আমার শট খেলা থামাব না। আর বাইরের বিশ্ব আমার খেলা নিয়ে কী বলল, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ তাতে আমার খেলার কোনও উন্নতি হবে না।” তাঁকে ফের জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার কোন স্লট পছন্দ? তিন না পাঁচ? রোহিত এ বার বলে দেন, “টিম যেখানে চাইবে। অন্য প্লেয়ারদেরও জিজ্ঞেস করে দেখুন না। কী বলে তারা? আপনার পছন্দ না হলে কিছু করার নেই আমার।”

কী দাঁড়াল?

ভারতের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের প্রাক্-লগ্নেও বিতর্কের কাঁটা থেকেই গেল। দুই ‘শর্মার’ কাঁটা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE