ডার্বিতে মেতেছে বাংলা।
মাঝে মাত্র আর একটা দিন। শনিবারের রাত পোহালেই মরসুমের প্রথম কলকাতা ডার্বি। যদিও হতাশ কলকাতা। মাঠের অভাবে ডার্বি চলে গিয়েছে শিলিগুড়িতে। ট্রেনে নেই রিজার্ভেশন। দার্জিলিং মেল, পদাতিক, কাঞ্চনকন্যা, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে তিল ধারণের জায়গা নেই। টিটির পিছনে ঘুর ঘুর, ওয়েটিং লিস্টটা যদি কনফার্ম হয়ে যায়। লাল-হলুদ জার্সিটা এখন থেকেই গায়ে চাপিয়ে নিয়েছেন কেউ কেউ। তা পরেই জেনারেলের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে। শিলিগুড়ির হোটেলগুলিতে জায়গা নেই কোনও। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ বলে কথা। সে হোক না শহর থেকে দুরে। তবুও মন খারাপ কলকাতার। যাঁরা যেতে পারলেন তাঁরা মাত্র কয়েক শতাংশ। বাকিদের চোখ রাখতে হবে টেলিভিশনের পর্দায়। কলকাতা লিগের ডার্বিও এ বার হয়নি। ডার্বির আবহের মধ্যেই হতাশায় ডুব দিয়েছে ফুটবলের শহর। এক লাখ ২০ হাজারের যুবভারতীর জায়গায় ৩০ হাজারের কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম। তবুও ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান প্রেম তো এরকমই। যা দেখতে বিদেশ থেকে উড়ে আসেন সমর্থকরা। না আসতে পারলে কলকাতার বন্ধুদের মাথা খেয়ে ফেলেন মিনিটে মিনিটে ম্যাচের খবর চেয়ে। এমনই এই ক্লাবের সমর্থকরা। তাই হয়ত যাঁরা যেতে পারলেন না তাঁরা সকালের অনুশীলনে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন তাঁদের পছন্দের ক্লাবকে।
হালকা মেজাজে ফুটবল খেলছেন মর্গ্যান।
এর মধ্যেই মোহনবাগান শিবিরে মুখে কুলুপ। কোচ থেকে প্লেয়ার সবাই চলে গিয়েছেন মৌনব্রততে। ডার্বির পর কথা বলবেন কি না সেটা তো সময়ই বলবে। ডার্বির ফলের উপর অনেক কিছুই যে নির্ভর করে। সে বাগান কোচ সঞ্জয় সেন যাই বলুন না কেন? না হলে কেন মুখে কুলুপ? আরও একটা সাধারণ ম্যাচ হলে এত রাখঢাকই বা কেন? শুক্রবার শিলিগুড়ি উড়ে যাওয়ার আগের সকালে মোহনবাগান মাঠে আরও এক প্রস্থ অনুশীলন সেরে নিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। একই দিনে একই ফ্লাইটে শিলিগুড়ি গেল ইস্টবেঙ্গলও। তার আগে সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে কিছুক্ষণের অনুশীলন। ইস্টবেঙ্গল শিবিরে সবার কথা বলার অনুমতি না থাকলেও এদিন সাংবাদিকদের হতাশ করলেন না কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যান ও রবিন সিংহ। যেখান সনি নর্ডি প্রসঙ্গে স্ট্রেট ব্যাটে ছক্কা হাঁকালেন মর্গ্যান। প্রশ্ন শুনে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘‘কে সনি নর্ডি? সে কী মোহনবাগানের সেরা প্লেয়ার? আমি যতটা জানি সেখানে ডাফি আছে, কাটসুমি আছে। শুধু কেন সনি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়? কে ও?’’
আরও পড়ুন- ডার্বির আগে প্রতিপক্ষকে সমীহ করেই জয়ের হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন মর্গ্যান
রবিবারের শিলিগুড়ি ডার্বি ঘিরে নাম উড়ছে দুই হাইতিয়ানেরই। একদিকে সনি নর্ডি তো অন্যদিকে ওয়েডসন আনসেলেম। কিন্তু ডার্বি সব সময়ই নতুন তারকার জন্ম দিয়ে এসেছে। এ বার কে হবেন সেই তারকা তা সময়ই বলবে। তার আগে ডার্বির উত্তাপে ঘি ঢাললেন রবিন সিংহ। ডার্বিতে রবিনের রেকর্ড বেশ ভালই। আবার ফিরেছেন লাল-হলুদ জার্সিতে। আবার ডার্বি। পাশে তখন থাকতেন টোলগে ওজবে আর এখন উইলিস প্লাজা। প্লাজার সঙ্গে তাঁর জুটি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী রবিন। বলেন, ‘‘গোল করার কথা ভাবছি না। কিন্তু যদি হয় তার থেকে ভাল কিছুই হতে পারে না। তবে আমাদের জুটি ভালই তৈরি হচ্ছে। আশা করছি এটা ধরে রাখতে পারব।’’ মোহনবাগান রক্ষণের দূর্বলতা নিয়ে যতই কথা হোক না কেন রবিন কিন্তু একদমই হালকাভাবে নিচ্ছেন না। যদিও রক্ষণ সমস্যায় দুই দলই। দুই দলই তিনটি করে গোল হজম করেছে। মোহনবাগানকে যেম সমস্যায় ফেলেছে কিংশুক দেবনাথের চোট। ঠিক তেমনই ইস্টবেঙ্গলের সমস্যা অর্ণব মণ্ডলের না থাকা। যদিও চোট সারিয়ে ফিরেছেন অর্ণব। বেঞ্চে থাকবেন তিনি। মোহনবাগানে এডুকে নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। চোট সারিয়ে ফিরে অনুশীলন করলেও তাঁকে প্রথম দলে দেখা যাবে কি না সেটা এখনও নিশ্চত নয়। আনাসের উপর অনেকটাই ভরসা রাখতে হবে।
ফিটনেস ট্রেনিংসে মোহনবাগান দল।
মাঝমাঠে মোহনবাগানের প্রণয় হালদার, প্রবীর দাসরা থাকলে ইস্টবেঙ্গলে রয়েছে অভিজ্ঞতার পাহাড় নিয়ে মেহতাব হোসেন। সঙ্গে রয়েছে ডিকা, জ্যাকিচাঁদরা। কিন্তু ফরোয়ার্ড লাইনে অনেকবেশি চটকদার মোহনবাগানই। একগুচ্ছ বড় নাম, সনি তো আছেনই সঙ্গে জেজে, বলবন্ত, ড্যারেল ডাফিও। গোল করছে দলের মাঝমাঠও। ইস্টবেঙ্গলে নজর কেড়েছেন উইলিস প্লাজা। যাঁর উপরই সব দায়িত্ব গোল করার। সঙ্গে ডার্বির অভিজ্ঞতা ও সাফল্য নিয়ে রবিন সিংহ। যদিও তিনি বলে দিচ্ছন, ‘‘আমি ইতিহাসে বাঁচি না। রবিবার একটা নতুন ম্যাচ। ৯০ মিনিটই শেষ কথা।’’
এ বার দু’দলই ক্ষমতার দিক থেকে প্রায় সমান সমানই। কেউ এখনও ম্যাচ হারেনি একটিও। দু’জনেরই রয়েছে একটি করে ড্র। কিন্তু ডার্বির সন্ধেয় কে জ্বলে উঠবে সেটা আগে থেকে যে কেউই বলতে পারে না। প্রথম ডার্বিতে কার নাম লেখা হবে, কেই বা হবে এই ডার্বির নায়ক? তার জন্য অপেক্ষা আর মাত্র একটা দিনের।
-ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন- এ বারের সেরা টিমটা ইস্টবেঙ্গলেরই, বলছেন বাগান কোচ সঞ্জয় সেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy