এই চুলের ছাঁটটা খুব দরকার ছিল। শুক্রবার সেলফি পোস্ট করে বিরাট কোহলি।
মেরিন ড্রাইভের পার্শ্ববর্তী সাগরের ঢেউ একই রকম নিঝুম। নিস্তেজ। সে দিন যেমন ছিল, আজও তাই।
মেরিন ড্রাইভের পার্শ্ববর্তী স্টেডিয়ামও একই রকম আছে। আভিজাত্যের রং তার পাল্টায়নি, এখনও সে ভারতবর্ষের ক্রিকেট-গর্বের মিনার। সময়ের নিয়ম মেনে খুচখাচ দু’একটা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু বাকি সব তো এক। সেই মাঠ। সেই বাইশ গজ। সেই উল্লাসের ড্রেসিংরুম। সে দিন যেমন ছিল, আজও তাই।
মেরিন ড্রাইভের পার্শ্ববর্তী হোটেলের বাসিন্দার জীবনও মোটামুটি একই আছে। দাড়ি হয়তো আরও কিছুটা পেকেছে। চুল কিছুটা হয়তো আরও সাদা। কিন্তু পরিচয় পাল্টায়নি, ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর দায়িত্ব বদলায়নি। সে দিন যেমন অধিনায়ক ছিলেন, আজও তাই।
শনিবার সন্ধেয় ওয়াংখেড়েতে পা দেওয়ার সময় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বোধহয় এপ্রিলের একটা রাত মনে পড়লেও পড়তে পারে। পাঁচ বছর আগের এপ্রিলের একটা রাত। আর বোধহয়ই বা কেন? কুলশেখরাকে মারা লং অনের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ? বা দেশকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে শীতল ঔদ্ধত্যে এক বার ব্যাট ঘুরিয়ে ছেড়ে দেওয়া? এ তো তাঁরই মাঠ। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এমএস ধোনির বিশ্বজয়ের মাঠ।
এবং এমএস ধোনির বিশ্বজয়ের নতুন অভিযানে শেষ প্রস্তুতির মাঠও বটে।
মুম্বইয়ের হোটেলে ডে’ভিলিয়ার্স-মিলারদের আড্ডা। ছবি টুইটার
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ শনিবারই খেলতে নামছে ভারত। ওয়াংখেড়েতে। প্রতিপক্ষ রক্তাল্পতায় ভোগা টিম নয়। এবি ডে’ভিলিয়ার্সের পূর্ণশক্তির দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা হয়তো নিছক প্র্যাকটিস ম্যাচেও আসল যুদ্ধের তেজ ছড়িয়ে দেবে। হয়তো সঠিক পরীক্ষা নেবে ভারতীয় প্রস্তুতির। ফাফ দু’প্লেসিরা ভারতের টিম হোটেলে বসে যে ভাবে আসন্ন টুর্নামেন্ট নিয়ে পরের পর তর্জন-গর্জন করে গেলেন, তার পর সেটা আরও বেশি করে মনে হওয়া দোষের কিছু নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক দু’প্লেসি থেকে শুরু করে জেপি দুমিনি, কিলার মিলার, প্রত্যেককে বলতে শোনা গেল ‘চোকার্স’ ট্যাগটা গা থেকে চিরকালের মতো তুলে ফেলতে একটা আইসিসি টুর্নামেন্ট না জিতলে আর চলছে না! আর ভারতে খেলা, সেটা নাকি স্রেফ নামেই। আইপিএল খেলে-খেলে এটা তাঁদের কাছে প্রায় দেশের মাঠই হয়ে গিয়েছে। পরিবেশ, পরিস্থিতি সব জানা। আর হ্যাঁ, ভারতের মাঠ থেকে ভারতেরই বিরুদ্ধে গত বছর টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে জয় থেকে বিশ্বজয়ের প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস তারা নিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজটা ভাল যায়নি। হারতে হয়েছে। শনিবার থেকে ব্যাপারটা অন্য রকম হওয়া দরকার!
দক্ষিণ আফ্রিকা বলছে বটে, কিন্তু শুনছে কে? দু’প্লেসিরা যখন কাপ-যুদ্ধে নিজেদের এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে পরোক্ষ শাসানি আমদানি করছেন, ভারতীয় টিম ততক্ষণে লিফট ধরে উপরে। লবিতে শ’দেড়েক সমর্থকের মোবাইল ক্যামেরা অন করে দিয়ে। শোনা গেল, ভারতীয় শিবিরে নাকি চিন্তার ব্যাপার তেমন নেই। এশিয়া কাপে পরের দিকে একটু নিস্তেজ দেখানো রোহিত শর্মা আবার স্বমহিমায়। আর মহম্মদ শামি? বৃহস্পতিবার রাতে ইডেনে উপস্থিত থাকা কেউ কেউ বললেন, ভারতীয় ড্রেসিংরুমের নাকি মনে ধরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে দু’উইকেটের শামিকে। রান আপে কোনও আড়ষ্টতা দেখা যায়নি। বোলিং করার সময় কোনও সমস্যাও নাকি সে ভাবে চোখে পড়েনি।
কলকাতা থেকে দুপুরে মুম্বই ঢুকে এ দিন টিমের প্র্যাকটিস সেশনের কোনও ব্যাপার ছিল না। শামির অবস্থা এখন কেমন, সামনাসামনি তাই দেখা গেল না। শনিবার সম্ভবত তাঁকে আবার নামানো হবে। টিমের শুক্রবারের ক্রিয়াকর্ম বলতে ছিল ঐচ্ছিক জিম আর পুল সেশন। সন্ধের দিকে সাপোর্ট স্টাফের সঙ্গে টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর বৈঠক। আর মেজাজটা শোনা ও দেখা, দুই-ই গেল। শোনা গেল, গত রাতে ম্যাচের পর নাকি ক্রিস গেইলের সঙ্গে বসে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে একপ্রস্ত আড্ডা দিয়েছেন ধোনি-সহ কেউ কেউ। গেইল আবার দু’টো ব্যাট সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছেন ভারতীয় টিমের সদস্যদের দিয়ে। স্মারক হিসেবে নাকি রাখবেন। আর চর্মচক্ষে মেজাজের নমুনা— সাত সকালে মুম্বই এয়ারপোর্টের রবি শাস্ত্রী। ঘুমচোখে সেলফির অকাতর আবদার যাঁকে সহাস্যে মেটাতে দেখা গেল। জয়ের টানা রথে বিপক্ষ পিষতে-পিষতে মেজাজ এখন এতটাই ফুরফুরে।
সেখানে দু’একটা ছুটকো গুলি-গোলায় কত দূর কী আসে যায়? আর এলেও তো অসুবিধে নেই। বেশ কিছু দিন তো ‘নিরামিষ’ ভোজন হল। এ বার ‘আমিষ’ প্রতিপক্ষ আসুক না।
বিশ্বজয়ের মঞ্চেই আসুক না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy