Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফাইনালে কাজে এল না সেরা অস্ত্র, ব্যর্থ মাঝমাঠও

মেসিদের গায়ে কাপ ফাইনালে আর্জেন্তিনার সাবেকি সাদা-নীল ডোরাকাটার বদলে নীল জার্সি দেখে চমকে উঠেছিলাম! আরে, এটা তো ওদের সেই চব্বিশ বছর আগের শেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার অভিশপ্ত জার্সি। যেটা পরে জার্মানির কাছেই হেরেছিল মারাদোনার দল।

ফাইনালের মঞ্চে কাকা-পেলে-বেকহ্যাম। ছবি: উৎপল সরকার।

ফাইনালের মঞ্চে কাকা-পেলে-বেকহ্যাম। ছবি: উৎপল সরকার।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৪:৩৮
Share: Save:

মেসিদের গায়ে কাপ ফাইনালে আর্জেন্তিনার সাবেকি সাদা-নীল ডোরাকাটার বদলে নীল জার্সি দেখে চমকে উঠেছিলাম! আরে, এটা তো ওদের সেই চব্বিশ বছর আগের শেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার অভিশপ্ত জার্সি। যেটা পরে জার্মানির কাছেই হেরেছিল মারাদোনার দল। আর রানার আপের পদক গলায় ঝোলাতে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছিল মারাদোনা!

কিন্তু ম্যাচটা শুরু হয়ে কিছুটা গড়াতে মনে হল, টিম মেসি যেন ইচ্ছে করেই ফাইনালের জন্য এই জার্সিটা বেছেছে রবিবার। যেন মেসির শপথ মারাদোনার চোখের জল ওর পরা নীল জার্সিতেই আজ মোছাব। অভিশপ্ত জার্সিতেই!

কিন্তু মারাদোনা থেকে মেসি দু’যুগ পরেও নীল জার্সি আর্জেন্তিনার কাছে অভিশপ্তই হয়ে থাকল। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে সুপার সাব গোটজে-র একটা ব্রিলিয়ান্ট গোলে! মেসিও শপথ রাখার মতো কিছু খেলেনি ফাইনালে। প্রথমার্ধে ডান দিক দিয়ে বার কয়েক ২৫-৩০ গজের বিপজ্জনক স্প্রিন্ট টানা আর জায়গা বদল করে বাঁ-দিক দিয়ে কোটি টাকার একটা পাস বাড়ানো ছাড়া। যার থেকে ইগুয়াইন সিটার নষ্ট করে। দ্বিতীয়ার্ধে তো সোয়াইনস্টাইগারের নেতৃত্বে জার্মান জোনাল মার্কিংয়ে মেসি বোতলবন্দি ছিল!

অন্য দিকে ভাগ্য দেখুন! বিশ্বকাপে রেকর্ড গোলের মালিক ক্লোজে বিদায়ী ম্যাচে গোটজেকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে স্ট্যান্ডিং ওভেশন নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর তার বদলিই কি না মারাকানা ফাইনালের মহানায়ক হয়ে উঠল!

আসলে মেসির ম্লান থাকা আর মিডফিল্ডের ব্যর্থতা আর্জেন্তিনাকে ডোবাল। লাতিন আমেরিকা থেকে প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে জার্মানির বিশ্বকাপ নিয়ে যাওয়া আটকাতে পারল না। দি মারিয়ার অভাব ভীষণ ভাবে বোঝা গিয়েছে আর্জেন্তিনার আক্রমণে। দি মারিয়া থাকলে ওর ডান দিক দিয়ে দৌড়গুলোর সময় মেসি যে ফ্রি জোন-টা পেয়ে গিয়ে অ্যাটাকিং থার্ডে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, সেটা একেবারেই হল না ফাইনালে।

মজার ব্যাপার, মাঝমাঠের দখল জার্মানির দখলে থাকলেও গোলের বেশি সুযোগ আর্জেন্তিনাই পেয়েছে। ইগুয়াইন সিটার মিস করার পর অফসাইডে একটা গোল করেছিল। আর জার্মানির ভাল সুযোগ বলতে হাফটাইমের ঠিক আগে হাওডেসের হেড পোস্টে লাগা। আর অতিরিক্ত সময়ের গোড়ায় শুরলের হেড।

আসলে দু’টো দলেরই ডিপ ডিফেন্স দুর্দান্ত খেলায় প্রতিপক্ষরা অ্যাটাকিং থার্ডে বেশি দাঁত ফোটাতে পারেনি। সোয়াইনস্টাইগার আর মাসচেরানোকে প্রায় একই ভূমিকায় দেখা গেল একশো কুড়ি মিনিট ধরে। নিজেদের ডিফেন্সের সামনে দাঁড়িয়ে অসাধারণ খেলে গেল। প্রচুর লোড নিল। কাপ ফাইনালের মতো মহাচাপের ম্যাচে ডিফেন্সকে বাড়তি সাহায্য দিতে এতটাই বেশি নীচে নেমে খেলছিল যে, মাঝমাঠে আক্রমণে বেশি যোগ দিতে পারেনি বটে, তবু পরিস্থিতির বিচারে ওদের ভূমিকা একশো ভাগ সঠিক। দু’জনই দুর্দান্ত খেলেছে। আমার মতে বিশ্বকাপ ফাইনালের যুগ্ম ম্যান অব দ্য ম্যাচ। পার্থক্যের মধ্যে দিনের শেষে এক জন মুখ ফেটে রক্তারক্তি হয়েও লাকি, অন্য জন আনলাকি। দু’টো দলের আঁটোসাটো রক্ষণ সত্ত্বেও খেলাটা কিন্তু মোটামুটি ওপেন হয়েছে। গত বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বিরক্তিকর হয়নি।

আধুনিক ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, মাঝমাঠের দখল নেওয়া। মাঝমাঠে বল পজেশন অনেক বেশি রাখা। সোয়াইনস্টাইগার-ক্রুজ-শুরলে আর ফরোয়ার্ডদের একটু পিছনে খেলা ওজিল প্রায় গোটা ম্যাচটাই মাঝমাঠ শাসন করেছে। অন্য দিকে আর্জেন্তিনার মাঝমাঠে বিগলিয়া-পেরেজ সে ভাবে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেনি। পেরেজের সেমিফাইনালের মতো উইং দিয়ে বিপজ্জনক দৌড়গুলোও মারাকানায় ছিল না। সাবেয়া ব্যাপারটা ঠিক সময়ে ধরে তিনটে পরিবর্তন ঘটিয়েও শেষরক্ষা করতে পারলেন না। বত্রিশ দেশের খেলার মানসিকতা নিয়ে এই বিশ্বকাপে একটা বিশেষণ-লিস্ট তৈরি করেছে ব্রিটিশ মিডিয়া। যেখানে জার্মানি দলের পাশে লেখা শক্তিশালী। ফোকাসড্। নিবেদিতপ্রাণ। ফাইনালে সেই তিনটে চরিত্রই জোয়াকিম লো-র দলের খেলায় ফুটে উঠল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE