প্রথম গোলের মুহূর্ত। ছবি: এএফপি।
বার্সেলোনা ৪ (মেসি-হ্যাটট্রিক, নেইমার)
ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ০
সত্যি বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
আর কত একজনের প্রশংসা করব। একটা মাত্রা আছে তো। প্রতিটা ম্যাচেই যখন লিওনেল মেসিকে দেখি, শব্দ হারিয়ে ফেলি। এ রকম এক ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভার সম্বন্ধে নতুন আর কী বলব।
চব্বিশ ঘণ্টা আগে মেসির হ্যাটট্রিক এখনও চোখে লেগে আছে।
পেপ গুয়ার্দিওলার মতো চতুর কোচ বিশ্বফুটবলে খুব কম আছে। যে ক্লাবে গিয়েছে, সেখানেই নিজের মনোভাবটা স্পষ্ট ভাবে দলের মধ্যে ফুটিয়েছেন। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ফুটবল। ছোট ছোট পাস। ন্যু কাম্পে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিও সেই গুয়ার্দিওলা-ছকেই মাঠে নেমেছিল। কিন্তু বিপক্ষে একজন মেসি আছে। যার কয়েক মিনিট লাগে কোনও সিস্টেমকে তছনছ করতে। যার সামনে পড়লে বিশ্বের তাবড় তাবড় ডিফেন্ডাররাও কোনও উত্তর খুঁজে পায় না। বিশ্বফুটবলে আবার প্রমাণ হল, কোচের সিস্টেম যত ভালই হোক না কেন, ব্যক্তিগত দক্ষতার সামনে তার কোনও মূল্য নেই। বিপক্ষে যদি একটা মেসি থাকে, তা হলে বিপক্ষের আর কীসের হাইপ্রেসিং ফুটবল। কীসের তিকিতাকা। সবই তো ওই একটা জায়গায় এসে শেষ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে
• আর্সেনাল ৬: লুদোগোরেতস ০
• রোস্তভ ০: আটলেটিকো মাদ্রিদ ১
• বায়ার্ন মিউনিখ ৪: পিএসভি আইন্দোভেন ১
• প্যারিস সাঁ জাঁ ৩: এফসি বাসেল ০
• সেল্টিক ০: বরুসিয়া মোনশেনগ্ল্যাডবাখ ২
• নাপোলি ২: বেসিকতাস ৩
• ডায়নামো কিয়েভ ০: বেনফিকা ২
বুধবার গুয়ার্দিওলার টিমকে দেখে সেটা আরও ভাল করে বোঝা গেল। শুরুতে ডিপ খেলছিল ম্যান সিটি ডিফেন্স। গোলের সামনে জমাট হয়ে যাওয়া। যা সাধারণত বার্সার বিরুদ্ধে যে কোনও কোচ করে থাকেন। কিন্তু মেসি যত বেশি ম্যাচের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়, ম্যান সিটির ভুলগুলো বাড়তে থাকে। গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ের ইউএসপি হল পাসিং। বার্সেলোনা হোক বা বায়ার্ন মিউনিখ— গুয়ার্দিওলা কোচ থাকাকালীন প্রতিটা দলের শক্তি ছিল পাসিং। কিন্তু বার্সার বিরুদ্ধে ম্যান সিটির পাসিংটা ঠিকঠাক হল কোথায়? বার্সার দুটো গোল তো ওদের মিসপাস থেকেই হল।
লুইস এনরিকের তার বিপক্ষ কোচের মতো গ্ল্যামার নেই। যার সঙ্গেই আলোচনা করি শুনতে হয়, এনরিকের কোনও চিন্তা নেই। ওর কাছে মেসি আছে। এমনি এমনি তো আর কেউ বার্সেলোনার মতো বড় একটা ক্লাবের দায়িত্ব পায় না। এনরিকের মধ্যেও যথেষ্ট মশলা আছে সেরা কোচ হওয়ার। মেসিকে ফলস নাইনে খেলিয়ে ম্যাচটা বের করলেন এনরিকে। মেসির ওপর নির্দিষ্ট কোনও পজিশনের দায়িত্ব ছিল না। তাই ফ্রি-মুভমেন্ট করতে পেরেছে। কখনও রাইট ইনে এসেছে, কখনও লেফট ইন। কখনও মিডল থার্ড। যে কারণে ওকে মার্ক করতে পারেনি ম্যান সিটি। প্রথম গোলটার সময় বাকিরা স্রেফ প্রত্যক্ষদর্শী ছিল। মেসি সবার পিছন থেকে এসে গোলটা করে বেরিয়ে গেল। দ্বিতীয় আর তৃতীয় গোলটার সময় বোঝা গেল মেসির পজিশনিং সেন্স কতটা প্রখর। মেসির খেলার অন্যতম শক্তি হল ম্যাচ রিডিং। প্রতিটা গোলেই ওর পজিশন সঠিক ছিল। যেন আগেভাগেই নিজের মাথায় ছকে নিয়েছিল কোন পজিশনে থাকলে গোলটা পাবে।
একে মেসি আছে। তার ওপরে নেইমার ও সুয়ারেজ। করতেনই বা কী গুয়ার্দিওলা। সুয়ারেজ গা-জোয়ারি প্লেয়ার। নেইমার আবার সূক্ষ্ম স্কিলের। দু’জন মিলে দারুণ সাপোর্ট দিয়েছে মেসিকে। বল সাপ্লাই করে গিয়েছে। মার্কারদের আকৃষ্ট করেছে যাতে মেসির জায়গা ফাঁকা হয়। নেইমার পেনাল্টি মিস করার প্রায়শ্চিত্ত করল দুর্দান্ত গোল করে।
আক্রমণ স্বস্তি দিলেও ডিফেন্স চিন্তায় রাখবে এনরিকে-কে। পিকে চোট পেয়ে বসে পড়ল ঠিকই কিন্তু যতক্ষণ খেলেছে খুব একটা ভাল কিছু করতে পারেনি। গুন্দোগান তো দেখলাম ওকে ড্রিবল করে বেরিয়ে গেল। টের স্টেগেন না বাঁচালে অবধারিত গোল।
গুয়ার্দিওলার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল সের্জিও আগেরোর মতো স্ট্রাইকারকে শুরুতে বসিয়ে রাখা। আগেরো থাকলে এত হাই ডিফেন্সিভ লাইন নিয়ে খেলতে পারত না বার্সা। ডিফেন্ডাররা ওভারল্যাপে যেতে পারত না। তার ওপর ক্লদিও ব্র্যাভো। এত খারাপ কোনও গোলকিপারকে সাম্প্রতিক কালে খেলতে দেখিনি। কোপা আমেরিকা ফাইনালেও তো এই মেসিকে আটকেছিল ব্র্যাভো। কিন্তু এ দিন কোনও আত্মবিশ্বাসই দেখতে পেলাম না ওর মধ্যে। নিজেই মিসপাস করে হ্যান্ডবল করল। লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে গেল। হাস্যকর।
দুটো লাল কার্ড। গোলকিপারের জঘন্য ভুল। পেনাল্টি নষ্ট। কিন্তু মেসি যেখানে হ্যাটট্রিক করেছে, কে বা আর কী মনে রাখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy