দারুণ জিতল টিম। ম্যাচ সেরার পারফরম্যান্সটাও করলাম! টুইট করলেন বাগানের কর্নেল।
মোহনবাগান-৪: সাউথ চায়না-০ (লেনি, সনি, গ্লেন, জেজে)
বিদেশি দলের বিরুদ্ধে লাল-হলুদের সাফল্য এত দিন ছিল ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে মিথ। এ বার তাতে প্রবল ভাবে ভাগ বসাতে শুরু করল মোহনবাগান।
ঘরে আর বাইরে। আই লিগ বা এএফসি কাপ। সঞ্জয় সেনের টিমের বিরুদ্ধে খেলতে নামলেই মাথা নোয়াতে হচ্ছে বিভিন্ন ক্লাবকে। দেশি আর বিদেশি। অপরাজিত এবং অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন সনি নর্ডি-জেজেরা। বুধবার হংকংয়ের সাউথ চায়নার বিরুদ্ধে তাদের মাঠেও সেই ধারা অব্যাহত সবুজ-মেরুনের। এএফসি কাপের দ্বিতীয় ম্যাচেও পুরো তিন পয়েন্ট তুলল বাগান। চার গোলে বিদেশি প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে। সংখ্যাটা হাফডজন হলেও কিছু বলার ছিল না।
বিদেশের মাঠে গিয়ে এত বড় জয় পাওয়ার পরেও তাই আফসোস সবুজ-মেরুন শিবিরে। হংকং থেকে ফোনে কোচ সঞ্জয় বললেন, ‘‘আসলে এ দিন ছ’-সাত গোল হতে পারত। চিনে গিয়ে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হারের দুঃখটা তা হলে হয়তো কিছুটা হলেও ভুলতে পারতাম আমরা। সেটা না হওয়ায় তাই একটু হলেও আফসোস রয়েছে সবার।’’
এ মরসুমে আই লিগ, এএফসি মিলিয়ে এ পর্যন্ত একমাত্র চিনে গিয়ে হারতে হয়েছে কাতসুমি-দেবজিতদের। সেটাও মাইনাস দু’-তিন ডিগ্রিতে শেনডংয়ের মতো প্রচণ্ড শক্তিশালী প্রতিপক্ষের কাছে। সেটা বাদে ১৪ ম্যাচে ১৩টাতে অপরাজিত এ বারের বাগান।
সেই টিমকে আটকাতে হংকংয়ের ক্লাব বুধবার অস্ত্র করেছিল মারপিটকে। যার ফল অবশ্য ম্যাচের গোড়াতেই তাদের পেতে হয়। জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় সাউথ চায়নার চে রুনকিউকে। তার আগেই অবশ্য লেনি রডরিগেস ১-০ এগিয়ে দিয়েছিলেন বাগানকে। তার পরেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। কারণে-অকারণে গ্লেন-প্রণয়দের বিশ্রী ফাউল করে গিয়েছেন সাউথ চায়না ফুটবলাররা। কিন্তু এত মেরেও মোহনবাগানকে আটকানো গেল কোথায়! বরং এএফসি কাপে পরপর দু’ম্যাচ জিতে গ্রুপে ভাল জায়গায় সঞ্জয়-ব্রিগেড।
মোহনবাগানের আক্রমণের দাপটে এ দিন বারবার ভেঙে পড়ে হংকংয়ের ক্লাবের রক্ষণ। সাউথ চায়না টিম এ দিন একেবারেই খেলতে পারেনি। বরং বলা ভাল, বাগানের দাপটে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে বিদেশি দলের প্রতিরোধ। নিট ফল, বিরতির আগেই খেলার ফল মোহনবাগানের পক্ষে ৩-০। সৌজন্যে সনি এবং গ্লেনের গোল। দ্বিতীয়ার্ধেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। জেজে ৪-০ করেন। তার আগে সনি, কাতসুমিরা গোলের সহজ সুযোগগুলো নষ্ট না করলে ব্যবধান বাড়তেই পারত।
বিদেশের মাটিতে গিয়ে এ রকম দাপটের সঙ্গে শেষ কবে জিতেছে মোহনবাগান? ক্লাবের ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যিনি ফুটবল জীবনের পুরোটাই সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলেছেন, বলছিলেন, ‘‘সাম্প্রতিক অতীতে তো এ রকম জয়ের কথা মনে পড়ছে না। তবে আমাদের সময় সাতাশিতে এশিয়া ক্লাব কাপে নেপাল, পাকিস্তানে গিয়ে ওদের ক্লাব টিমের বিরুদ্ধে আমরা পাঁচ-ছয় গোল দিয়েছিলাম।’’ বাগান এ দিন বিদেশের মাঠে চার গোলে জিতেছে বলে তাদের প্রতিপক্ষকে খাটো করে দেখারও উপায় নেই। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর এই সাউথ চায়নার কাছেই ০-২ হেরেছিল বেঙ্গালুরু এফসি। তার চার বছর আগে ২০১১-তে ইস্টবেঙ্গলও ০-১ হেরেছিল এই দলের কাছেই।
যদিও এত বড় সাফল্যের পরেও যেন আরও বেশি সতর্ক বাগান কোচ। হংকংয়ে ম্যাচের পর সঞ্জয় ফুটবলারদের বলে দেন, ‘‘এই জয়ের সব কৃতিত্ব তোমাদের। তবে এখন থেকে এএফসি কাপের কথা ভুলে যাও। এই সাফল্যের উচ্ছ্বাস হংকংয়েই ফেলে কলকাতায় ফিরতে হবে আমাদের। আই লিগে যেন এর প্রভাব না পড়ে। আত্মতুষ্টি যেন কোনও ভাবেই না আসে। কারণ তোমরা যদি আই লিগ চ্যাম্পিয়ন না হতে পার তবে এই চার গোলের কথা কেউ মনে রাখবে না।’’
মোহনবাগানের পরের নতুন মিশন মুম্বই এফসি। যে টিমের কাছে মুম্বইয়ে গিয়ে আটকে গিয়েছিলেন লুসিয়ানো-কিংশুকরা। আই লিগে রবিবার সেই ম্যাচের ফিরতি লড়াই।
মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, লুসিয়ানো, কিংশুক, প্রবীর, কাতসুমি, প্রণয় (বিক্রমজিৎ), লেনি, সনি (শৌভিক চক্রবর্তী), জেজে, গ্লেন (শৌভিক ঘোষ)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy