Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জেজে-আলোয় শেষ চারের দরজায় বাগান

গাট্টাগোট্টা চেহারা। অদম্য জেদ। চূড়ান্ত ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে সাফল্য পেতে মরিয়া হয়ে ওঠা। আবার সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার নিরলস চেষ্টা। পাহাড়ি ফুটবলারদের মধ্যে এই গুণগুলো প্রায় জন্মগত। মিজোরামের জেজে লালপেখলুয়া ব্যতিক্রম হবেন কী করে? সনি নর্ডি নেই, কর্নেল গ্লেনও চোটের জন্য রিজার্ভ বেঞ্চে।

ভাস্কোয় খুশির দিন বাগানের। সোমবার জেজে গোল করার পর।-নিজস্ব চিত্র

ভাস্কোয় খুশির দিন বাগানের। সোমবার জেজে গোল করার পর।-নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

মোহনবাগান-৩ (জেজে-২, অভিষেক)
সালগাওকর-২ (স্কট, কেলভিন)

গাট্টাগোট্টা চেহারা। অদম্য জেদ। চূড়ান্ত ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে সাফল্য পেতে মরিয়া হয়ে ওঠা। আবার সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার নিরলস চেষ্টা।

পাহাড়ি ফুটবলারদের মধ্যে এই গুণগুলো প্রায় জন্মগত। মিজোরামের জেজে লালপেখলুয়া ব্যতিক্রম হবেন কী করে? সনি নর্ডি নেই, কর্নেল গ্লেনও চোটের জন্য রিজার্ভ বেঞ্চে। কিন্তু বাগানে তো পাঁচ-আটের একটা ছেলে আছেন। তিনিই শেষ পর্যন্ত পরিত্রাতা হলেন। আবারও। এএফসি কাপের শেষ ম্যাচে গোল করে দলকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন করার কয়েক দিনের মধ্যে ফেড কাপেও পাহাড়ি সূর্যের আলো। জেজের জোড়া গোলের দাপটেই সালগাওকরের বিরুদ্ধে তীব্র চাপ থেকে বেরিয়ে এসে বাগান জিতল কোয়ার্টার ফাইনালের অ্যাওয়ে পর্ব। ১-২ পিছিয়ে থাকা ম্যাচে পরপর দু’গোল। ৩-২ জিতে ফেড কাপের শেষ চারের দরজায় টোকা মারার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলল সঞ্জয় সেনের বাগান।

জেজের পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ্বসিত মোহন কোচও। সোমবার ম্যাচের পর গোয়া থেকে ফোনে সঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘দারুণ পারফরম্যান্স জেজের। ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছে। ছেলেটা নিজেকে অপরিহার্য প্রমাণ করে চলেছে প্রত্যেক ম্যাচে।’’ এর সঙ্গেই বাগান কোচের সংযোজন, ‘‘যারা মনে করেন সনিকে ছাড়া মোহনবাগান জিতবে না, সেটা যে ভুল তা প্রমাণ করেছে আমার বাকি ছেলেরা। সনি থাকলে দলের শক্তি বাড়ে ঠিকই, তবে সনিকে ছাড়াও সাফল্য পাওয়া সম্ভব।’’

গোয়ায় চোটে কাবু সনিকে নিয়েই যায়নি বাগান। পরের ম্যাচগুলোর কথা ভেবে গ্লেনকেও তিলক ময়দানে নামাননি সঞ্জয়। এই পরিস্থিতিতে কঠিন চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়ে আসার প্রধান কারিগর ছিলেন জেজেই। ম্যাচ জিতিয়ে উঠে মিজো স্ট্রাইকার টুইট করেছেন, ‘‘অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট পেয়েছি আমরা। এ বার ঘরের মাঠেও জেতার জন্য তৈরি হতে হবে।’’ আই লিগের ফিরতি ডার্বিতে পেনাল্টি নষ্টের খেসারত হয়তো এ ভাবেই মোহনবাগানকে ম্যাচের পর ম্যাচ জিতিয়ে দিতে চাইছেন জেজে।

এ দিন খেলার প্রথম মিনিটেই জেজে এগিয়ে দেন বাগানকে। কিন্তু ড্যারেল ডাফির দৌরাত্ম্যে বাগানের সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। জ্যাকিচন্দ, কেলভিনদের সঙ্গে নিয়ে বাগান ডিফেন্সে কাঁপুনি ধরিয়ে দেন স্কটিশ স্ট্রাইকার। একটা সময় তো দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন কিংশুক, প্রীতম, লুসিয়ানোরা। ডাফি গোল না পান, কিন্তু হাফটাইমের আগেই মার্টিন স্কট এবং কেলভিনের সৌজন্যে ২-১ এগিয়ে যায় সালগাওকর।

এগিয়ে যাওয়ার পরেও পাল্টা দু’গোল খেয়ে চাপে পড়ে যাওয়া বাগান আবার কী করে জয়ের রাস্তায় ফিরল? সূত্রের খবর, হাফটাইমে সঞ্জয় তাঁর ছেলেদের বলেছিলেন, ‘‘আই লিগ পাইনি। এই ম্যাচে হারা মানে ফেড কাপ পাওয়ার উপরও প্রশ্নচিহ্ন পড়ে যাওয়া। গতবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের কাছে সেটা কী খুব সম্মানের হবে?’’ হয়তো সঞ্জয়ের ভোকাল টনিকে তেতে উঠে দ্বিতীয়ার্ধে খেলার রাশ নিজেদের দখলে নিয়ে নেন জেজেরা। কখনও ছোট পাসে, আবার কখনও লং বল খেলে পরের পর আক্রমণ। ডাফিদের কাছে বল যাওয়ার রাস্তাটাও কাতসুমি, লেনিরা কেটে দেন। নিটফল হাতেনাতে পায় বাগান। অভিষেক দাস সমতা ২-২ করার পর খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে জেজের জয়ের গোল। তবে জিতলেও রক্ষণ নিয়ে কিন্তু চিন্তা থাকছেই সঞ্জয়ের। যে ভাবে বারবার গোল করে এগিয়ে যাওয়ার পরেও দেবজিৎরা গোল খাচ্ছেন, তা দেখে বাগান কোচ উদ্বিগ্ন। বললেন, ‘‘আমাদের ডিফেন্স মজবুত করা ভীষণ দরকার।’’

এ দিন অ্যাওয়ে ম্যাচে তিন গোল করায় ফেড কাপের নতুন ফর্ম্যাটে বড় সুবিধে পেয়ে গেল বাগান। পরের ম্যাচ ড্র করলে বা এক গোলে হারলেও অ্যাওয়ে গোলের ভিত্তিতে সেমিফাইনালে পৌঁছে যাবে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। বৃহস্পতিবার বারাসতে সালগাওকরের সঙ্গে ফিরতি ম্যাচ জেজেদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mohunbaga Federation Cup Salgaokar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE