Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভারগাসের ভরসায় আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ আর্জেন্তিনার

সুযোগ ছিল হোসে পেকারম্যানের। নিটফল, পেনাল্টিতে হার। সুযোগ ছিল রামোন দিয়াজের। নিটফল, ১-৬ বিধ্বস্ত হওয়া। দেশজ কোচেদের কাছেই সুযোগ ছিল তাঁদের দেশের স্বপ্ন শেষ করার। কিন্তু পরীক্ষায় কেউ পাস করতে পারেননি। তা হলে কি এ বার জর্জ সামপাওলি হয়ে উঠবেন ঘরের শত্রু বিভীষণ? শেষ বাধায় এসে কি সেই আর্জেন্তিনীয় কোচের হাতেই শেষ হবে আর্জেন্তিনার কোপা-স্বপ্ন?

চিলির অন্যতম অস্ত্র ভিদাল

চিলির অন্যতম অস্ত্র ভিদাল

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৪
Share: Save:

সুযোগ ছিল হোসে পেকারম্যানের। নিটফল, পেনাল্টিতে হার। সুযোগ ছিল রামোন দিয়াজের। নিটফল, ১-৬ বিধ্বস্ত হওয়া। দেশজ কোচেদের কাছেই সুযোগ ছিল তাঁদের দেশের স্বপ্ন শেষ করার। কিন্তু পরীক্ষায় কেউ পাস করতে পারেননি। তা হলে কি এ বার জর্জ সামপাওলি হয়ে উঠবেন ঘরের শত্রু বিভীষণ? শেষ বাধায় এসে কি সেই আর্জেন্তিনীয় কোচের হাতেই শেষ হবে আর্জেন্তিনার কোপা-স্বপ্ন?

চিলির নতুন প্রজন্ম যাঁর হাতে তৈরি, সেই সামপাওলি জন্মেছিলেন আর্জেন্তিনার এক ছোট শহর কাসিলদার সাধারণ পরিবারে। চোটের কারণে খুব বেশি দিন খেলতে না পারলেও কোচ হিসাবে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ইকুয়েডর, আর্জেন্তিনার ঘরোয়া ফুটবলে কোচিং করিয়ে ২০১২-এ চিলি জাতীয় দলের দায়িত্ব নেন। আর তিন বছরের মধ্যেই এমন দল তৈরি করেছেন যাদের কাছে ফুটবল মানেই আক্রমণ। গোটা টুর্নামেন্টে যেখানে ব্রাজিল-উরুগুয়ের মতো দল ধুঁকতে ধুঁকতে খেলেছে, চিলি সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে তারা মোটেই ভয় পায় না।

তাই ফাইনালে বিপক্ষ আর্জেন্তিনা হলেও গুটিয়ে খেলবে না চিলি। উজাড় করে দেবে সর্বস্ব। আক্রমণের জবাবে দেবে আক্রমণেই। কোপা ফাইনালে চিলি শেষ বার উঠেছিল ১৯৮৭ সালে। যখন ফাইনালে উঠেও শেষমেশ উরুগুয়ের কাছে হারতে হয় চিলিকে। সারা বিশ্ব যখন আর্জেন্তিনাকে অঘোষিত চ্যাম্পিয়ন বলতে শুরু করেছে, চিলি কিন্তু ভর দিয়ে আছে ঘরের সমর্থকদের উপর। ‘‘আমার অধীনে থাকা ফুটবলাররা অবিশ্বাস্য ছন্দে আছে। আমি ভাগ্যবান যে, ঘরের সমর্থকদের সামনেই খেলব আমরা। তাতে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস পাবে দল,’’ বলছেন সামপাওলি।

সোমবার রাতে সেমিফাইনাল হয়ে যাওয়ায় ফাইনালের প্রস্তুতির জন্য প্রায় ছ’দিন সময় পেয়েছে চিলি। কিন্তু পুরোদমে চলছে অনুশীলন। অ্যালেক্সিস সাঞ্চেজের সঙ্গে দলের সম্পর্কে চিড় ধরলেও অনুশীলনে তাঁকে দেখে কেউ সেটা বুঝতে পারবে না। শোনা যাচ্ছে, সেমিফাইনালের দলই ফাইনালে রাখতে চলেছেন চিলি কোচ। অর্থাত্ টুর্নামেন্টে চার গোল করা এডুয়ার্ডো ভারগাসের উপরেই গোল করার দায়িত্ব পড়তে চলেছে। চিলির অনুশীলনে নাকি এখন থেকেই লং রেঞ্জ প্র্যাকটিস করতে শুরু করে দিয়েছেন ভারগাস। পেরুর বিরুদ্ধে তাঁর দুর্দান্ত গোলের রেশ এখনও কাটেনি, সে কথা জানিয়ে ভারগাস বলছেন, ‘‘আমি দূরপাল্লার শট মারা প্র্যাকটিস করে যাচ্ছি। পেরুর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গোলটা করে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। এখন যে শটই মারছি, সেটাই জালে ঢুকে যাচ্ছে।’’ আগে থেকেই আর্জেন্তিনাকে সতর্ক করে রাখছেন যে, তাঁকে জায়গা দিলে বিপদে পড়তে হতে পারে। চিলির হয়ে ৪৭ ম্যাচে ২২ গোল করা ভারগাসের পরিসংখ্যান বিপক্ষকে ভয় পাওয়ানোর মতোই।

ফাইনালের যে নীল নকশা আঁকছেন সামপাওলি, শোনা যাচ্ছে তাতে লিওনেল মেসি ও সের্জিও আগেরোকে আটকানোর দায়িত্ব পড়তে চলেছে গ্যারি মেদেলের ঘাড়ে। মাঝমাঠের ইঞ্জিন ভিদাল আবার চান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাতে সান্তিয়াগোর গ্যালারি দলের বারো নন্বর সদস্য হোক। যাঁর মতে সমর্থকদের আরও বেশি করে চিত্কার করা উচিত। তবেই উদ্বুদ্ধ হতে পারবেন চিলি ফুটবলাররা। ‘‘আমি দেখছি ম্যাচে অনেক সময় চুপচাপ থাকছেন চিলি সমর্থকরা। সেটা যেন ফাইনালে না হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গ্যালারি আমাদের জন্য চিত্কার করে যাক। প্লেয়ার হিসাবে সেটাই আমার ইচ্ছে,’’ বলছেন ভিদাল। যিনি ইতিমধ্যেই ফুটবলবিশ্বের অন্যতম সেরা গ্ল্যামার আইকন হয়ে উঠেছেন। কোপা ফাইনালের জন্যও তিনি নতুন হেয়ারস্টাইলেও নামতে চলেছেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মজা করে জানিয়েও রেখেছেন, এই হেয়ারস্টাইলই হয়তো সাহায্য করবে চিলিকে ৯৯ বছরের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে।

গত মরসুমে বার্সেলোনার হয়ে স্প্যানিশ ত্রিমুকুট জিতলেও দেশের জার্সিতে প্রিয় বন্ধুর প্রতি আবার কোনও সমীহ নেই ক্লডিও ব্র্যাভোর। বরং আর্জেন্তিনার দশ নম্বরকে কটাক্ষ করে ব্র্যাভো বলে দিচ্ছেন, ‘‘শুধু মেসির উপরে নয়। গোটা আর্জেন্তিনার উপর মনোযোগ দিতে হবে। জাভিয়ের মাসচেরানোও খুব ভাল প্লেয়ার। ও দলে থাকা মানে আর্জেন্তিনা আরও শক্তিশালী।’’

আর্জেন্তিনাকে ‘ফেভারিট’ বলেও ব্র্যাভো জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁর দল ভয় পাচ্ছে না কাউকে। ‘‘আমরা কোনও দলকে ভয় পাই না। আর্জেন্তিনার প্রতি শ্রদ্ধা আছে। তবে চিলিও তৈরি,’’ বলছেন ব্র্যাভো। সাঞ্চেজ ও ভিদাল যেখানে প্রচারের আলোয় ছিলেন, চুপচাপ নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন ভালদিভিয়া। গোটা টুর্নামেন্টে চিলির অন্যতম হৃদপিণ্ড হয়ে উঠেছেন তিনি। সেই ভালদিভিয়া বলছেন, চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলে সব খাটনি মাটিতে মিশে যাবে।

ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগেই চিলির সান্তিয়াগোতে উত্সবের আমেজ। রাস্তায় রাস্তায় সাঞ্চেজ-ভিদালের ব্যানার। সমর্থকরা চিত্কার করছেন, ‘‘৯৯ বছরের অভিশাপ কাটাবেই দল।’’ এত উত্সবের পরে ক্লাইম্যাক্সটা কি কোপা জিতেই করবে চিলি? না কি কোপা জেতার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে?

উত্তর আর চব্বিশ ঘণ্টায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE