Advertisement
E-Paper

সৌরভের হাতেই কি বোর্ডে সূর্যোদয়, জল্পনা গোটা ক্রিকেট-ভারতে

সতেরো বছর আগের মার্চে গড়াপেটায় বিক্ষত ভারতীয় ক্রিকেটকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন সূর্যোদয়ের পথে। নিয়তি কি আবার নতুন যুগে কলঙ্ক-বিধ্বস্ত ভারতীয় বোর্ড পরিচালনার জন্য তাঁকে আহ্বান করছে?

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৮
অনুরাগ ঠাকুর।—রয়টার্সের ফাইল চিত্র

অনুরাগ ঠাকুর।—রয়টার্সের ফাইল চিত্র

সতেরো বছর আগের মার্চে গড়াপেটায় বিক্ষত ভারতীয় ক্রিকেটকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন সূর্যোদয়ের পথে। নিয়তি কি আবার নতুন যুগে কলঙ্ক-বিধ্বস্ত ভারতীয় বোর্ড পরিচালনার জন্য তাঁকে আহ্বান করছে?

রোববার পর্যন্ত প্রশ্নটা ছিল বঙ্গদেশের। এ দিন দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে প্রশ্নটা এখন গোটা ক্রিকেট-ভারতের। নতুন ক্রিকেট বোর্ড পরিচালনায় কি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখা যাবে? সে তিনি প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি যা-ই হোন না কেন!

ইংল্যান্ডে ছুটি কাটিয়ে এ দিন কলকাতায় ফেরা সৌরভ সব ক’টা শর্তই পূরণ করছেন। তিনি ভারতীয় নাগরিক। তাঁর ক্রিকেট প্রশাসনে মোটেও ন’বছর হয়নি। তিনি সত্তর বছরের ঊর্ধ্বে নন। তাঁর কোনও ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। তিনি দেউলিয়া সাব্যস্ত হননি। তিনি মন্ত্রী বা আমলা নন। তিনি অন্য কোনও ক্রীড়াসংস্থার পদেও নেই। শীর্ষ আদালত নির্দেশিত এ সব ধারার বাইরেও প্রেসিডেন্ট বা সচিব পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বোর্ডের নিজস্ব আইন রয়েছে। প্রার্থীকে অন্তত দু’টো বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে হবে। সৌরভের সেই যোগ্যতাও রয়েছে।

ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়কের সিংহাসনে বসার আগে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অজয় জাডেজা আর অনিল কুম্বলে। প্রশাসনের শীর্ষ পদে বসার জন্য আপাতত তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিজেশ পটেল আর অমিত শাহ-পুত্র জয়।

পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, সোমবার তার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। এমন নয় যে, এ দিন সুপ্রিম কোর্টে উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম বনাম অখিলেশ জাতীয় অতিনাটকীয় কিছু ঘটেছে। মোটামুটি যেমন কড়া রায় আশা করা হয়েছিল, তেমনই।

আগামিকাল অবসরে চলে যাওয়া প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর নজিরবিহীন ভাবে গদিচ্যুত করেছেন প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর আর সচিব অজয় শিরকেকে। আর গোপাল সুব্রহ্মণ্যম ও ফলি নরিম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন, ১৯ জানুয়ারি বোর্ডের প্রশাসক নিয়োগ করার। প্রশাসক এখানে এক অর্থে রিসিভার। যাঁদের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাঁরা সিইও-কে নিয়ে আপাতত বোর্ড চালাবেন। ১৫ জানুয়ারি পুণেতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচ অবশ্য বোর্ডের মাইনে করা পেশাদাররাই পরিচালনা করবেন। আদালতে যে পরিস্থিতি গম্ভীর দিকেই যাবে, সে বিষয়ে সকলের আন্দাজ থাকলেও ব্যাপারটা ঘটে যাওয়ার পরে বোর্ড কর্তারা এমন হতবাক, যেন শেষ বলে ছয় খেয়ে হেরেছেন! কারও কারও সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, এঁরা শেষ মুহূর্তে কোনও ভোজবাজির আশা করেছিলেন। সেটা সরকারি হস্তক্ষেপ হতে পারে। অন্য কিছুও হতে পারে। সেটা যে ঘটল না, তার সঙ্গে এখনও মানিয়ে নিতে পারছেন না তাঁরা।

আরও খবর: বোর্ডের মাথায় সৌরভকে চান গাওস্কর

এ দিনের পরে অনুরাগের আর মুখ খোলার মতো অবস্থা নেই। উল্টে মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাঁকে শো-কজ করেছে শীর্ষ আদালত। ক্রিকেট তো সাঙ্গ হলই, এ বার রাজনৈতিক কেরিয়ার বাঁচাতে সচেষ্ট অনুরাগ। বিকেল পর্যন্ত বোর্ডের অফিসেই আসেননি। একটা বিবৃতিতে যদিও সামান্য ব্যঙ্গের সঙ্গে বলেছেন, ‘‘মহামান্য আদালত যদি মনে করে প্রাক্তন বিচারপতিরা বোর্ডকর্তাদের চেয়ে আরও কুশলী ভাবে ক্রিকেট চালাবেন, তা হলে তাই হোক।’’

যতই তিনি এখন এ ধরনের কথাবার্তা বলুন, বোর্ডের একাংশ কিন্তু একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে আজকের পরিস্থিতির জন্য তাঁকেই দায়ী করছে। বলছে, আদালতের সঙ্গে লড়াই এই পর্যায় টেনে নিয়ে যাওয়াটা তাঁর চূড়ান্ত অপরিনামদর্শিতা। ফলে, সৌরভের মনোনয়নে বাধা সৃষ্টি করা এই মুহূর্তে অনুরাগের নিজের পক্ষে আরও হানিকারক হবে।

বাকি থাকেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। তিনি অবশ্যই সৌরভকে চাইবেন না। শশাঙ্ক মনোহর আইসিসিতে চলে যাওয়ার পরে বোর্ডে শ্রীনির প্রতাপ সামান্য হলেও ফিরেছে। সত্তর বছরের বেশি বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনিও যোগ্যতা-সীমানার ওপারে। যদিও পিছন থেকে বাধা সৃষ্টি করার মতো লোকজন শ্রীনির হাতে এখনও রয়েছে।

ক্রিকেট সমর্থকেরা যে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে হারকিউলিসের আস্তাবল সাফ করার সমতুল্য মনে করছেন, তাতে শ্রীনির অবশ্যই কিছু আসে যায় না। রাজেন্দ্র মাল লোঢার সঙ্গে কথা বলে অবশ্য মনে হল, এই রায় নামেই অনুরাগের বিরুদ্ধে। আসলে শাস্তি পেলেন স্বয়ং শ্রীনিবাসন।

ডালমিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যদি লোঢা কমিটির মনে হয়ে থাকে তিনি মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে যথেষ্ট ফিট নন, তা হলে শ্রীনির ক্ষেত্রে অভিযোগ আরও অনেক সাংঘাতিক। একনায়কতন্ত্র চালাতে গিয়ে পদে-পদে স্বচ্ছতাকে আক্রমণ করেছেন। কুক্ষিগত করে রেখেছেন ক্ষমতা। এমন সব পথের আশ্রয় নিয়েছেন, যার সঙ্গে ক্রিকেটীয় মানসিকতার কোনও সম্পর্ক নেই। নির্বাচকদের উপর জবরদস্তি করে ধোনিকে অধিনায়ক রেখে দিয়েছেন।

অনেকের মনে হচ্ছে, যত দিন যাবে তত বোর্ড সদস্যরা বুঝবেন, এই বিপর্যয়ের জন্য প্রধানত দায়ী শ্রীনিবাসনই। অনুরাগ নন। আর তখন প্রত্যক্ষ সমর্থন হারাবেন তামিলনাড়ু কর্তা।

ভারতীয় বোর্ডের গোড়াপত্তন আজ থেকে ৮৯ বছর আগের এক ডিসেম্বরে। মাত্র ক’দিন আগেও শোনা গিয়েছিল, নব্বই বছর পূর্তি কতটা জমকালো ভাবে করা যায়, তা তাঁরা ভেবে দেখছেন। কে জানত, প্রথম ইনিংস এক ঐতিহাসিক রায়ে ৮৯-তেই যে শেষ হয়ে যাবে! অ্যান্টনি ডি’মেলোর বোর্ড, ভিজি-র বোর্ড, রুংতার বোর্ড, চিদম্বরমের বোর্ড, ডালমিয়ার বোর্ড, বিন্দ্রার বোর্ড, পওয়ারের বোর্ড, শ্রীনির বোর্ড— সব আজ থেকে ইতিহাস! ভবিষ্যতে ক্রিকেট-ছাত্ররা পড়বে।

আসলে আনুষ্ঠানিক ভাবে না-হলেও, মঙ্গলবার থেকে ভারতীয় বোর্ড প্রশাসন তার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দিচ্ছে। চরিত্রগত ভাবে যেটি স্বেচ্ছাচারী কর্তা-ভিত্তিক ইনিংসের চেয়ে আলাদা হওয়া উচিত। সে তার মাথায় ফেব্রুয়ারি মাসে সৌরভ বসুন বা ব্রিজেশ। আরও একটা প্রশ্ন।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আদালত থেকে স্বাধীন হয়ে ফিরল? নাকি এতদিনের পরাধীন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী স্বাধীন হলেন?

‘সৌরভ হবেন কি না’-র মতো সপ্তাহের প্রথম দিনে দ্বিতীয় প্রশ্নটাও অমীমাংসিত থেকে গেল!

Anurag Thakur BCCI Supreme Court Sack Sourav Ganguly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy