সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেও সত্যিই তাঁদের জন্য কি শুভ হতে চলেছে নতুন বছর? এই প্রশ্নে ঘোর আশঙ্কায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা।
নতুন বছরের স্পোর্টিং ক্যালেন্ডারে মেগা ইভেন্টের কমতি নেই। কিন্তু সোমবার সকালে নয়াদিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের একটা রায় সেই সব নিয়ে চর্চাকে অনেক পিছনে ঠেলে দিতে পারে। ২০১৭-র ২ জানুয়ারি হয়ে উঠতে পারে ভারতীয় ক্রীড়া জগতের সবথেকে বিতর্কিত এবং বৈপ্লবিক একটা দিন।
শীতের ছুটির পর সোমবার সুপ্রিম কোর্ট খোলার দিন সম্ভাব্য বিস্ফোরণের আতঙ্কে অনেক বোর্ডকর্তারই শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইতে শুরু করেছে যে।
মঙ্গলবার দেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের কর্মজীবনের শেষ দিন। পেশাদারি জগৎ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে হয়তো দেশকে একটা ‘ল্যান্ডমার্ক জাজমেন্ট’ দিয়ে যাবেন সিজেআই, এমনই ধারণা আইনি মহলের।
কী হতে পারে বিসিসিআই বনাম লোঢা কমিশন মামলার ঐতিহাসিক রায়? তিনটে সম্ভাবনা ঘোরা ফেরা করছে। এক, বোর্ডের শীর্ষকর্তাদের সরিয়ে দেশের ক্রিকেট প্রশাসন চালানোর জন্য কয়েকজন পর্যবেক্ষেক নিয়োগ করা। দুই, বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুরকে কোর্টে মিথ্যে বলার অপরাধে কারাবাসের শাস্তি দেওয়া বা তাঁর বিরুদ্ধে আলাদা তদন্ত শুরু করার নির্দেশ। তিন, লোঢা কমিশনের সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে এখন থেকে ক্রিকেট প্রশাসন চালানোর নির্দেশ বোর্ড ও তার অনুমোদিত ক্রিকেট সংস্থাগুলোকে।
রবিবার বছরের প্রথম দিন দেশের ক্রিকেট মহলে এমনই জল্পনা ছিল তুঙ্গে। যার অর্থ, নববর্ষে ভীষণ ভাবে ব্যাকফুটে বিসিসিআই।
গত মাসে যে শুনানিতে অনুরাগ ঠাকুরকে কোর্টে শপথ নিয়ে মিথ্যা বলার অভিযোগে বিঁধেছিল সর্বোচ্চ আদালত, সেই শুনানিতে এও বলা হয়েছিল যে, ক্ষমা না চাইলে বোর্ড প্রেসিডেন্টের এ জন্য বছর সাতেকের জেল হওয়া উচিত। তার কয়েক দিন পর অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে ঠাকুর বলেছিলেন, সুযোগ পেলে আদালতকে এর ব্যাখ্যা দিতে পারেন তিনি। সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ তিনি পাবেন কি না, এটা যেমন দেখার, তেমনই দেখার, কাকে বা কাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে বোর্ড চালানোর দায়িত্ব দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় আদালতের কাজকর্ম শুরু হওয়ার পরপরই এই মামলার রায় বেরনোর কথা। যদিও গত শুনানির পর বলা হয়েছিল, মঙ্গলবার ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এই মামলার রায় মুলতুবি রাখা হচ্ছে। তাই সোমবার একেবারে শুরুতেই এই মামলা ‘লিস্টেড’ হওয়ায় কেউ কেউ আবার কিছুটা অবাকও। তা হলে কি অনুরাগ ঠাকুরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতেই এক দিন হাতে রেখে তারিখ দেওয়ার সিদ্ধান্ত? উঠছে এই প্রশ্নও।
লোঢা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব জিকে পিল্লাইকে পর্যবেক্ষক বাছা হতে পারে। তবে একজন নয়, আরও কয়েকজনকে এই একই ক্ষমতা দেওয়া হতে পারে বলে গত শুনানিতেই আলোচনা হয়েছিল। দু’পক্ষের কাছে পছন্দের কয়েকজনের নাম চেয়েছিলেন বিচারপতিরা। ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই নাম পেশ করতে বলা হলেও বোর্ডের তরফ থেকে কোনও নাম পেশ করা হয়নি বলেই খবর। মনে করা হচ্ছে, বোর্ড কর্তারা নাম পেশ করা মানেই প্রকারান্তরে এই ব্যবস্থাকে সমর্থন জানানো।
লোঢা কমিশন আরও কিছু নাম হয়তো দিয়েছে। সেগুলো জানা যাবে সোমবার কোর্ট খুললে। এর মধ্যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মোহিন্দর অমরনাথ, সুনীল গাওস্করদের নাম থাকবে কি না, সেই নিয়েও জল্পনা কম নয় ক্রিকেট মহলে। এঁরাও প্রত্যেকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকায় জল্পনা শুধু বেড়েই চলেছে।
সব জল্পনা ও অপেক্ষার অবসান হয়তো হয়ে যাবে আজ, বছরের প্রথম সোমবার। জানুয়ারির শীতেও ক্রিকেটে উত্তেজনার পারদ নামার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বরং বেড়েই চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy