দু’জনের নাম উঠলে ঠোকাঠুকি নিশ্চিত। সব ছেড়েছুড়ে তখন তর্কের বিষয়বস্তু হয় একটাই— ফুটবল সাম্রাজ্যের সেরার সেরা নাম কোনটা?
দু’জনের ব্যাক্তিগত সম্পর্ক যে খুব মধুময়, সেই ‘অভিযোগ’ কখনও ওঠেনি! খুব কম মুখোমুখি হলেও একে অপরের ‘বন্দনা’ কিন্তু প্রায়শই শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে।
কিন্তু ৮ অক্টোবর, ২০১৫ দিনটা বোধহয় ব্যতিক্রমী। উলটপুরানের দিন বলা যেতে পারে।
কেন?
স্বয়ং পেলের গলায় মারাদোনার প্রশংসা!
ভারতে পা রাখার বাহাত্তর ঘণ্টা আগে সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ফুটবলসম্রাট বলেছেন, ‘‘পেলে আর হবে না। কারণ আমি আমার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ওঁরা তার পরে আর সন্তান চাননি (মজা করে)।’’
একটু থেমে পেলে আরও যোগ করেন, ‘‘আমার মতে সব ফুটবলারই অদ্বিতীয়। যেমন আর একটা মারাদোনা হবে না। আর একটা জিদান বা বেকেনবাওয়ারও জন্মাবে না।’’
পেলের দখলে তিনটে বিশ্বকাপ এবং ১২৮৩ গোল! কিন্তু সাফল্যের এভারেস্টে পৌঁছনোর জন্য যুব টুর্নামেন্টগুলো যে কী অপরিসীম সাহায্য করেছিল তাঁকে, সেই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন পেলে। বলেছেন, ‘‘ছোটবেলায় আমি প্রচুর স্থানীয় টুর্নামেন্টে খেলতাম। সেখানেই প্রথম বার স্যান্টোসের হয়ে স্কাউটিং করতে এসে ওয়ালদেমার দে ব্রিটো আমাকে আবিষ্কার করেন। সেই সুযোগটা আমার গোটা জীবনকে পাল্টে দিয়েছিল। তার পরে টানা কুড়ি বছর স্যান্টোসে খেলি আমি।’’
নিজের জীবন-কাহিনির মধ্য দিয়ে ভারতীয় ফুটবলকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টাও করেছেন পেলে। কিংবদন্তি ব্রাজিলীয় ফুটবল তারকার মতে ভারতের মতো দেশে যেখানে কিছু দিনের মধ্যেই বসতে চলেছে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ, সেখানে সুব্রত কাপের মতো স্কুল টুর্নামেন্টকে আরও অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ‘‘স্পোর্টস-ই একমাত্র মাধ্যম যা বাচ্চাদের উৎসাহ দিতে পারে। আর তার জন্য যুব টুর্নামেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেই ফুটবল স্কিলের উন্নতি হয়। কোচ, সতীর্থদের থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। নতুন নতুন বন্ধু পাওয়া যায়,’’ বলেছেন পেলে।
পরের সপ্তাহেই অম্বেডকর স্টেডিয়ামে সুব্রত কাপ ফাইনালে পেলের থাকার কথা। তবে বাচ্চাদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য এখন থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছেন ফুটবলগ্রহের ‘ব্ল্যাক পার্ল’। ‘‘আমি খুব উত্তজিত। টিমওয়ার্কের গুরুত্ব কী, তার অভিজ্ঞতা আমি বাচ্চাদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চাই। শুধু তাই নয়, স্পোর্টসম্যানশিপ, একে অপরকে সম্মান করার মনোভাব এবং কঠোর পরিশ্রমের সুফল কী হতে পারে, সেটাও বলব ওদের। আসলে ফুটবল একটা বা দু’টো তারকার খেলা নয়। জেতার রহস্য একটাই— টিমগেম।’’
এখানেই শেষ নয়। পেলে দাবি করেছেন, আটত্রিশ বছর পরে তাঁর এ বারের ভারত সফরে তিনি নাকি ‘স্যুটকেস ভরে’ প্রচুর অজানা গল্প নিয়ে আসছেন। যা শুধু বাচ্চাদেরই নয়, যে কোনও ফুটবলার, ফুটবলপ্রেমীকেও উদ্বুদ্ধ করতে পারে। বলছেন, ‘‘ভারতে এ বার একটাই লক্ষ্য নিয়ে আসছি। নিজের ফুটবল-দর্শনকে সবার মধ্যে ভাগ করে দিতে চাই। বেশ কিছু গল্প বলব, যা উদ্বুদ্ধ করবে নতুন প্রজন্মকে। ওদের জন্মের আগে আমার ফুটবলারজীবনের এমন সব ঘটনা বলব, যা আগে কখনও বলিনি। এক কথায় নিজের ইতিহাসকে তুলে ধরব ভারতবাসীর সামনে।’’
পেলে যে নতুন উদ্যমে ভারত-সফরে আসছেন, সেটা যেন তাঁর সমস্ত কথায় স্পষ্ট। পাশাপাশি ফুটবলসম্রাটের স্মৃতির ভাণ্ডারে ইডেনে খেলে যাওয়া ১৯৭৭-র সেই ঐতিহাসিক ম্যাচও আছে, সেটাও বুঝিয়েছেন। ‘‘সম্প্রতি আমি ১৯৭৭-এ কসমসের হয়ে ভারতে খেলতে আসা ম্যাচের কথা ভাবছিলাম। অনেক মধুর স্মৃতি জড়িয়ে ওই ম্যাচটা ঘিরে। এ বার আরও অনেক নতুন স্মৃতি তৈরি করতে চাই। তা ছাড়া যে ভাবে এখানে ফুটবলের প্রসার বেড়েছে, আমার মতে এটাই সেরা সময় আমার আবার ভারতে আসার,’’ বলে দিয়েছেন অক্টোবরেই পঁচাত্তরে পা দিতে চলা পেলে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy