Advertisement
০৭ মে ২০২৪
মহাম্যাচের আগে সবুজ তোতার ভোকাল টনিক

বাগানের সঙ্গে মায়ের কথাও ভেবে খেলো সনি

দু’জনে পরস্পরের গুণমুগ্ধ। কিন্তু বলব-বলব করেও এত দিনেও নিজেদের ভেতর কথা বলা হয়ে ওঠেনি। প্রথম জন হোসে রামিরেজ ব্যারেটো এক যুগেরও আগে মোহনবাগানকে শেষ বার জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম কাণ্ডারি। দ্বিতীয় জন সনি নর্ডি সবুজ-মেরুনকে গত পাঁচ মরসুমের ট্রফি-খরা কাটিয়ে আই লিগ জয়ের দোরগোড়ায় এনে ফেলেছেন। বুধবার সকাল এগারোটা। মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে ব্যারেটো ফোন করে বসলেন সনিকে। যে কল তিনি ধরলেন ২০১৫ কিমি দূরে প্রিন্সেপ ঘাটে বসে। আধ ঘণ্টার সেই জমাটি টেলিফোনিক আড্ডায় হাজির আনন্দবাজার।দু’জনে পরস্পরের গুণমুগ্ধ। কিন্তু বলব-বলব করেও এত দিনেও নিজেদের ভেতর কথা বলা হয়ে ওঠেনি। প্রথম জন হোসে রামিরেজ ব্যারেটো এক যুগেরও আগে মোহনবাগানকে শেষ বার জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম কাণ্ডারি। দ্বিতীয় জন সনি নর্ডি সবুজ-মেরুনকে গত পাঁচ মরসুমের ট্রফি-খরা কাটিয়ে আই লিগ জয়ের দোরগোড়ায় এনে ফেলেছেন। বুধবার সকাল এগারোটা। মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে ব্যারেটো ফোন করে বসলেন সনিকে। যে কল তিনি ধরলেন ২০১৫ কিমি দূরে প্রিন্সেপ ঘাটে বসে। আধ ঘণ্টার সেই জমাটি টেলিফোনিক আড্ডায় হাজির আনন্দবাজার।

ফোনের অন্য প্রান্তে তখন ব্যারেটো। আর দু’হাজার কিমিরও বেশি দূরের আরব সাগরের তীর থেকে একদা বাগানের শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার ভরসার ভোকাল টনিক গঙ্গার ধারে প্রিন্সেপ ঘাটে দাঁড়িয়ে শুনছেন সবুজ-মেরুনের বর্তমান প্রাণভোমরা সনি নর্ডি। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ফোনের অন্য প্রান্তে তখন ব্যারেটো। আর দু’হাজার কিমিরও বেশি দূরের আরব সাগরের তীর থেকে একদা বাগানের শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার ভরসার ভোকাল টনিক গঙ্গার ধারে প্রিন্সেপ ঘাটে দাঁড়িয়ে শুনছেন সবুজ-মেরুনের বর্তমান প্রাণভোমরা সনি নর্ডি। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

ব্যারেটো: গুড মর্নিং সনি।
সনি: আরে ব্যারেটো! তুমি! তোমার কথা মোহনবাগানে আসার পর থেকে রোজ শুনে আসছি। তুমি তো বাগানের মাসিহা। তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ক’দিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম। আজ তুমিই কিনা ফোন করে বসলে! সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না! গুড মর্নিং, গুড মর্নিং।
ব্যারেটো: থামো, থামো। এত আবেগে এখন ভাসলে চলবে না। মোহনবাগানে আই লিগটা এ বার আনতেই হবে তোমাদের। বাগানে আমার সেকেন্ড ইনিংসে আই লিগ দিতে পারিনি। কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমার হয়ে তুমি ট্রফিটা আনো। কাল রাতে কলকাতা ফিরছি। মাঠে গিয়ে কথা বলার আর সময় পাব না। তাই ফোন করলাম।

আনন্দবাজার: হঠাৎ সনিকে ফোন করার জন্য ব্যারটো, আপনার এত আকুতি কেন?

ব্যারেটো: ওকে দেখলে মোহনবাগানে আমার নিজের শুরুর দিনগুলো মনে পড়ে। সনির মধ্যে যেন নিজেকে দেখতে পাই। তাই ওকে ফোন করলাম।

সনি: কী বলছ ব্রো (ব্রাদার)! ডার্বি ম্যাচে তুমি এসেছিলে। আমাদের ফিজিক্যাল ট্রেনার গার্সিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ব্যারেটো কোন লোকটা। ও তখন তোমাকে দেখায়। ম্যাচ জেতার পর সে দিন তোমার কাছে যেতে পারিনি। বাড়ি ফিরে আজকের দিনটা ডায়েরিতে লিখে রাখব। স্কাইপিতে মাকেও জানাব।

ব্যারেটো: (অট্টহাসি) কী শুরু করলে বলো তো?

সনি: জানো, আট বছর বয়সে আমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই থেকে মা-ই আমার সব।

ব্যারেটো: আমারও তাই।

সনি: দুঃখের কথা, বেঙ্গালুরু ম্যাচটায় মা ভিসা সমস্যায় আসতে পারবে না। হাইতির বাড়িতে বসে ইন্টারনেটেই দেখবে ।

ব্যারেটো: এটাই তোমার চ্যালেঞ্জ। বাগানের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের কথাও ভেবে শেষ ম্যাচটা খেলো। জিতে মাঠ ছাড়লে দু’জনের জন্যই এর চেয়ে বড় উপহার হবে না।

আনন্দবাজার: ব্যারটো, আপনি তো ফোনেই ভোকাল টনিক দিতে শুরু করে দিলেন!

ব্যারেটো: (হাসতে হাসতে) তাই!

সনি: ঠিক বলেছ ব্রো। রবিবার মাঠে নামার সময় তোমার এই কথাটা বারবার মনে মনে আওড়াব।

ব্যারেটো: মোহনবাগানে সই করার সময় মাকে জানিয়েছিলে?

সনি: একদম। মা ইন্টারনেটে মোহনবাগানের ইতিহাস পড়ে এতটাই মোহিত হয়ে যায় যে, বলেই দিয়েছিল ভারতে খেললে মোহনবাগানেই খেলবে।

ব্যারেটো: সনি, ২০০২-এ জাতীয় লিগ জিতে আমাদের ফেরার সময় দমদম এয়ারপোর্টে জনপ্লাবন দেখেছিলাম। এ বার তোমরা জিতলে সবুজ-মেরুন সাপোর্টাররা তোমাদের হয়তো কাঁধে করেই বাড়ি পৌঁছে দেবে। ওদের আবেগটা এমনই। স্রেফ মাথা ঠান্ডা রেখে, নিজেদের উপর বিশ্বাস রেখে, একদম ফোকাসড হয়ে ম্যাচটা খেলো। এ বারের আই লিগ যতটুকু দেখেছি, তাতে নিজের দিনে তোমাদের কেউ আটকাতে পারবে না।

সনি: আমাদের উপর তোমার এই আস্থার মূল্য দেওয়ার জন্য মাঠে নিজেদের নিংড়ে দেব।

ব্যারেটো: তেরো বছর আগে আমরা চার্চিলের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচের আগের ম্যাচটায় হেরে গিয়েছিলাম। নিয়মিত স্টপার আমৌরি কার্ড সমস্যায় ছিল না। আমি কোচকে বলে স্যালিউকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর মাস্ট উইন ম্যাচে গোলটা স্যালিউ-ই করেছিল। আচ্ছা, কাগজে পড়লাম তুমি নাকি ফুটবলারদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে বিশেষ মিটিং করো। কী বল টিমমেটদের?

সনি: বলি, তোরা স্রেফ নিজের দায়িত্বটা পালন কর। ট্রফির এত কাছে এসে ফেরা চলবে না। কিছুতেই না।

ব্যারেটো: বেঙ্গালুরুর কিন্তু মাস্ট উইন ম্যাচ।

সনি: আমরাও কিন্তু জিততেই নামব। ড্রয়ের কথা ভেবে খেলব না। না হলে ওরা ঘাড়ে চেপে বসবে। সেটা হতে দেব না।

আনন্দবাজার: সনি, আপনারা বিশেষ একটা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কী বলতে চাইছি। তবু মোটিভেশনটা পাচ্ছেন কোত্থেকে?

ব্যারেটো: প্লিজ, আমাদের আড্ডায় বিতর্ক টেনে আনবেন না।

সনি: ওয়েট ব্রো, ওয়েট। সমস্যা কার নেই! বাড়িতে, অফিসে, মাঠে সর্বত্র আছে। তার জন্য চুপ করে বসে থাকলে চলবে। আমাদেরটাও সে রকম।

ব্যারেটো: সনি, ঠিক এই কারণেই আমি তোমার মধ্যে নিজেকে দেখতে পাই। ইউ আর এ বর্ন লিডার। ব্রো, রবিবার নব্বই মিনিটের একটা মুহূর্তও হাল ছাড়বে না। তাহলেই তোমরা ট্রফি নিয়ে কলকাতায় ফিরবে। তারপর দেখবে সমর্থকদের আবেগ-সমুদ্র কাকে বলে।

সনি: প্লিজ, সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করো আমাদের জন্য।

ব্যারেটো: আমার শুভেচ্ছা, প্রার্থনা সব তোমাদের টিমের সঙ্গেই থাকবে রবিবার।

সনি: এই ক্লাবকে তোমার মতো আমিও কিছু দিতে চাই। পরের বছরও আমি মোহনবাগানে খেলব। কলকাতায় ফিরে এক দিন তোমার সঙ্গে সামনা-সামনি আড্ডা দেব।

ব্যারেটো: নিশ্চয়ই। যদি আই লিগ জিতে ফেরো, তা হলে সেটা হবে পরের সপ্তাহেই। না হলে পরে কোনও সময় হবে। এ বার তুমি ঠিক করো কী করবে?

সনি: (হাসি) আমরা শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ব ট্রফি জেতার জন্য।

ব্যারেটো: জো গেটজেন্সকে চেনো?

সনি: আরে, চিনব না! আমার দেশ হাইতিরই লোক তো। সেই স্কুল থেকেই নামটা জানি। ১৯৫০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমেরিকার সেই ঐতিহাসিক জয়ের গোলটা ওঁর পা থেকেই এসেছিল।

ব্যারেটো: ব্যাস, আর কোনও কথা নয়। রবিবার বাগানের গেটজেন্স হওয়ার জন্য এই মুহূর্ত থেকে তৈরি হও। বেস্ট অব লাক।

সনি: থ্যাঙ্ক ইউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE