Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নেইমার নেই কিন্তু এই ব্রাজিলের একটা কুটিনহো আছে

হলুদ জার্সি। নীল শর্টস। সাদা হোস। আর সেই চেনা সাম্বা। এই ব্রাজিলকেই তো এত দিন ভালবেসে এসেছি। এই ব্রাজিলের খেলা দেখতেই তো ভোর পাঁচটায় টিভির সামনে ।

হ্যাটট্রিকের নায়ক কুটিনহো।-ইউএসএ টুডে স্পোর্টস

হ্যাটট্রিকের নায়ক কুটিনহো।-ইউএসএ টুডে স্পোর্টস

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৫৪
Share: Save:

ব্রাজিল-৭ (কুটিনহো-৩, অগাস্টো-২, গ্যাব্রিয়েল, লিমা)

হাইতি-১ (মার্সেলিন)

হলুদ জার্সি। নীল শর্টস। সাদা হোস। আর সেই চেনা সাম্বা। এই ব্রাজিলকেই তো এত দিন ভালবেসে এসেছি। এই ব্রাজিলের খেলা দেখতেই তো ভোর পাঁচটায় টিভির সামনে ।

চার দিন আগে ইকুয়ডরের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের গোলশূন্য ড্র দেখে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম ব্রাজিল তো এ রকম তারকা নির্ভরশীল দল কোনও দিনই ছিল না। নেইমার কি তা হলে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে ওকে ছেড়ে ব্রাজিলের জয় তুলে আনার কোনও ক্ষমতাই আর নেই? কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালের ব্রাজিলকে দেখে আমি একটু হলেও স্বস্তি পেলাম। চোখের সামনে যেন সেই সব সোনার দিনগুলো ভেসে উঠছিল। ব্রাজিল মাঠে নামা মানে সবাই শুধু গোল দেখবে না। বরং এমন এগারো জনকে দেখবে যারা গোলও করবে, আবার ছবির মতো মুভ তৈরি করে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধও করবে।

অনেকেই বলতে পারেন হাইতি আবার কোনও দল নাকি। এদের হারাবে না তো ব্রাজিল কাকে হারাবে। কিন্তু আমার মনে হয় শতবর্ষের কোপায় যে দল ত্রিনিদাদ ও টোবাগোকে হারিয়ে উঠেছে তারা খুব একটা খারাপ দল কী করে হয়। আর ব্রাজিল দলে অধিকাংশ ফুটবলার প্রথম বার বড় কোনও টুর্নামেন্ট খেলছে দেশের জার্সিতে। এই দলটা একটা রিবিল্ডিং প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মনে রাখবেন, ওরা কিন্তু কম্বিনেশনটা ঠিক মতো তৈরি করার সময় এখনও পায়নি। এ রকম একটা দলের সাত গোল দেওয়া মানে মুখের কথা নয়। বোঝাই যাচ্ছে প্রথম ম্যাচের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছে ওরা।

ইকুয়েডর ম্যাচে ব্রাজিলের দুটো প্রধান সমস্যা ছিল স্লো মুভমেন্ট আর অতিরিক্ত পাসিং ফুটবল। হাইতির বিরুদ্ধে দুটোই শুধরে নিয়েছে দুঙ্গার দল। প্রতিটা মুভমেন্ট ছিল দ্রুত। আক্রমণের মধ্যে ঝাঁঝ ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল প্রতিটা মুভমেন্টেই গোল আসতে পারে। ফুটবলের ভাষায়, পাসিং উইদ মোটিভ যাকে বলে।

সাত গোল যখন হয়েছে তখন বোঝাই যাচ্ছে কোনও না কোনও এক ফুটবলারের কাছ থেকে সেরা পারফরম্যান্স বেরিয়েছে। এখানে সেই ফুটবলারের নাম ফিলিপ কুটিনহো। চেহারাটা ছোট্টখাট্টো হলেও যে কোনও মাপের ডিফেন্ডারকে নাচিয়ে ছাড়বে ব্রাজিলের এই উইঙ্গার।

শুরুর থেকে শেষ, হাইতি ডিফেন্সকে নাজেহাল করে ছাড়ল ছেলেটা। কী দুর্দান্ত মুভমেন্ট। অসামান্য বল কন্ট্রোল। পায়ে যেন আঠার মতো লেগে ছিল বলটা। ড্রিবলটা করতে জানে। আর ফিনিশ? স্কোরবোর্ডই বলে দিচ্ছে। ম্যাচ তো প্রথমার্ধেই ৩-০ হওয়ার পরে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ব্রাজিল ছন্দ হারায়নি।

হ্যাটট্রিকে ওর করা তিনটে গোল কুটিনহোর তিনটে গুণ বলে দিচ্ছে। প্রথমটা যেমন আউটসাইড ডজ করে বুলেট শট। মানে শটে জোর আছে। দ্বিতীয়টা ট্যাপ ইন। অর্থাৎ সুযোগসন্ধানী। তৃতীয়টা কার্ল করানো দুরপাল্লার শট। সারমর্ম, স্কিলও দারুণ আছে ছেলেটার। নেইমারহীন এই দলের তাই কুটিনহোকে চাই। কারণ নেইমারের স্টাইলটাই অনেকটা দেখতে পাচ্ছি কুটিনহোর মধ্যে। শুধু জোনাস, গ্যাব্রিয়েলের মতো ফরোয়ার্ডের উপর তো আর গোলের জন্য ভরসা করা যায় না। কুটিনহো এই ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে ব্রাজিল কিন্তু অনেক দূর যাবে।

কুটিনহো ছাড়াও গিল আর এলিয়াসের খেলাও আমার ভাল লেগেছে। ডিফেন্সটাকে দারুণ সামলেছে গিল। এলিয়াস আবার উইলিয়ান আর কুটিনহোর সঙ্গে লিঙ্ক আপ প্লে-তে অনেক মুভ তৈরি করেছে। কাসেমিরো হোল্ডিং মিডফিল্ডকে আস্তে আস্তে নিজের ব্যক্তিগত পজিশন করে দিচ্ছে। দানি আলভেজও ক্যাপ্টেন্স গেম খেলেছে। কী সমস্ত ক্রস বাড়াচ্ছিল। নিশ্চিত সমস্ত গোল সাজিয়ে দিচ্ছিল। উইলিয়ান দারুণ খেললেও অনেক সোজা সোজা সুযোগ নিতে পারেনি। হাইতির গোলকিপারের প্রশংসা করতে হবে। সবাই অবাক হবেন সাত গোল খাওয়ার পরেও প্রশংসা! আরে প্লাসিডে না থাকলে তো দশের বেশি খেতো হাইতি। খুব ভাল লাগল যখন হাইতির রিজার্ভ লিস্টে দেখলাম মোহনবাগানের সনি নর্ডির নাম। বারবার মনে হচ্ছিল হয়তো ওকে নামাবেন কোচ। চার গোল খাওয়ার পর বেশ কয়েকটা পরিবর্তন দেখলাম। কিন্তু সনিকে নামানো হল না। বুঝলাম ভারতীয় ফুটবলে দাপিয়ে খেললেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে জায়গা করে নেওয়াটা অত সোজা নয়।

নেইমার ছাড়া ব্রাজিল যে বেশ দুর্বল সেটা নতুন করে বলার নেই। ব্রাজিলকে তাই ডিফেন্সটা অনেক মজবুত করতে হবে। জোনাস আর গ্যাব্রিয়েলকে আরও বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। হাইতির বিরুদ্ধে এই আক্রমণের আগুন যাতে নিভে না যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coutinho Neymar Brazil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE