Advertisement
E-Paper

বৃদ্ধ স্বামীতে আপত্তি নেই, চাই শুধু এক জন সঙ্গী

পরিসংখ্যাণ বলছে, কলকাতা শহরে বয়স্কদের মধ্যে বিয়ের প্রবণতা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সংবাদপত্র, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে বয়স্ক পাত্র-পাত্রীর ছড়াছড়ি। ফেসবুকে তৈরি হচ্ছে আলাদা কমিউনিটি। এমনকী বিভিন্ন এজেন্সিতে খোঁজ নিলে জানা যাচ্ছে, সত্তর পেরোনো পাত্রপাত্রীর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৫০

কথায় আছে, বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা। কিন্তু এঁরা সে পথে হাঁটছেন না। বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধা বা প্রৌঢ়া ভার্যা হলেও সমস্যা নেই ওঁদের। উল্টোটাও সত্যি। বৃদ্ধ স্বামীতে আপত্তি নেই। চাই শুধু এক জন সঙ্গী। যাঁর সঙ্গে ওঁরা সময় ভাগ করে নিতে পারবেন।

পরিসংখ্যাণ বলছে, কলকাতা শহরে বয়স্কদের মধ্যে বিয়ের প্রবণতা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সংবাদপত্র, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে বয়স্ক পাত্র-পাত্রীর ছড়াছড়ি। ফেসবুকে তৈরি হচ্ছে আলাদা কমিউনিটি। এমনকী বিভিন্ন এজেন্সিতে খোঁজ নিলে জানা যাচ্ছে, সত্তর পেরোনো পাত্রপাত্রীর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এ শহরে এখনও যে গুটিকয় ‘ঘটক’-এর অস্তিত্ব রয়েছে তাঁরাও বয়স্ক পাত্র-পাত্রীদের চার হাত এক করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

যে বয়সে লোকেরা ছেলেমেয়ের বিয়ে, কখনও বা নাতি-নাতনির বিয়ে-সংসার নিয়ে মেতে থাকেন, সেই বয়সে নিজেদের নতুন করে বিয়ের কথা

ভাবার এমন প্রবণতা শুরু হয়েছে কেন? মনোবিদ, সমাজবিদেরা বলছেন, কারণ একটাই। গভীর একাকিত্ব। একা থেকে হাঁফিয়ে উঠে, সঙ্গ পাওয়ার লোভেই নতুন জীবনের কথা ভাবছেন বহু মানুষ। এঁরা অনেকেই বিবাহ বিচ্ছিন্ন। অনেকের স্বামী বা স্ত্রী মারা গিয়েছেন। কেউ বা বার্ধক্যে পৌঁছে বুঝতে পেরেছেন, বিয়েটা জরুরি।

দিন কয়েক আগেই বিয়ের অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে গিয়ে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন ৮৮ বছরের এক বৃদ্ধ। তাঁর ছেলেরা চায়নি বাবা ফের বিয়ে করুন। কিন্তু বাবা নাছোড়। তাঁর সাফ কথা, জীবনটা তাঁর। তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে। পাত্রী পছন্দ করতে একাধিক মহিলার সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি। এখনও পর্য়ন্ত ওই বৃদ্ধের বিয়ের বিষয়টি পাকা না-হলেও, একটি ম্যাট্রিমনি সাইটের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে শুধু কলকাতাতেই এমন ৭৫টি বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। যেখানে পাত্র-পাত্রী দুজনেই ‘সিনিয়র সিটিজেন’। নতুন চালু হওয়া আর একটি সাইটের কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা সত্তরোর্ধ্বদের জন্য বিশেষ ‘অফার’-এর ব্যবস্থা করেছেন। অন্যদের ক্ষেত্রে নাম নথিভুক্তির যা খরচ, বয়স্কদের জন্য তার অর্ধেক।

এমনই এক নব দম্পতি, ৭০ পেরোনো অরুণাংশু চট্টোপাধ্যায় ও মানসী মিত্র জানালেন, ফোনে প্রাথমিক কথাবার্তার পরে দক্ষিণ কলকাতার এক কফিশপে দেখা করেছিলেন ওঁরা। প্রথম দিন আধ ঘন্টার কথা। তিন দিন পরে আবার দেখা। সে দিন ঘন্টা দেড়েক। মাস দুয়েকের মধ্যে বিয়ে পাকা। রেজিস্ট্রেশনও হয়ে যায়। জানালেন, দুজনের বাড়ির তরফে কেউ রাজি ছিলেন না এই বিয়েতে। তাই বিয়েতে ছিলেন শুধু জনা কয়েক বন্ধু। মানসী বলেন ‘‘আমরা কাউকে মেনে নিতে জোর করিনি। শেষ বয়সে পৌঁছে নিজেদের মতো করে বাঁচাটাই আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছিল’’। তবে অন্য ছবিও আছে। শহরের এক বিপত্নীক চিকিৎসকের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁর ছেলেমেয়েরাই। কারণ, তাঁরা বুঝেছিলেন, বাবার নিঃসঙ্গতা কাটানোর এটাই সব চেয়ে ভাল উপায়।

বৃদ্ধ বয়সে বিয়ের অজস্র নজির রয়েছে বিদেশে। এ দেশের বহু সেলিব্রিটি দেরিতে বিয়ে করেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষও পরিবার-প্রতিবেশীদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপকে পাত্তা না-দিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, এই নজির আগে খুব বেশি ছিল না বলেই মনে করছেন অনেকে। মনোবিদেরা বলছেন, খ্যাতনামা বহু ব্যক্তি তাঁদের দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বিয়েটা করেছেন ৬০ বা ৭০ বছর পেরিয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেখানে পাত্রীর বয়স তুলনায় অনেকটাই কম। এ ক্ষেত্রে যৌনতা একটা অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তাঁদের অনেকেই। কিন্তু যেখানে ৭০ পেরোনো বৃদ্ধ তাঁর জীবন কাটানোর জন্য প্রায় সমবয়সি কাউকে বেছে নিচ্ছেন, সেখানে নিঃসঙ্গতাটাই মূল কারণ। আবার কিছু ক্ষেত্রে সম্পত্তিও একটা কারণ হিসেবে কাজ করে।

মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায় মনে করেন, সামাজিক গঠন এখন বেশ বদলে গিয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু। এখন যাঁর ৬০ বছর বয়স, তিনি ভাবছেন আরও অন্তত ২০ বছর বাঁচবেন। তাই কোনও সম্পর্কে জড়ানোর ভাবনা আসতেই পারে তাঁর মনে। রিমার কথায়, ‘‘এখন ছেলেমেয়েরা বেশির ভাগই দূরে থাকে। বয়স্ক মানুষেরা দেখেন, তাঁদের ছেলেমেয়ে-নাতিনাতনিরা যে যার নিজের মতো করে বাঁচছে। তাই তাঁরাও ভাবেন, ‘আমাকে আমার মতো বাঁচতে দাও’। সমাজের পক্ষে এটা যথেষ্টই ইতিবাচক।’’ তাঁর মতে, নিঃসঙ্গতা একটা ব্যাধি। লোকলজ্জার ভয়ে গুমরে না থেকে কেউ যদি নিজের জীবনটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নেন, তা হলে তার চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না।

Wedding Marriage Age Lonliness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy